Hot

টাইমফ্রেম নিয়ে দূরত্ব বাড়ছে সরকার-রাজনৈতিক দলের, ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় সবাই

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার পতনের পর ক্ষমতা গ্রহণকারী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্দোলনকারী সকল দল ও পক্ষ সমর্থন দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের কিছু উপদেষ্টার মন্তব্য, কর্মকা- নিয়ে সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সন্দেহ সংশয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টাইমফ্রেম ইস্যুতে স্পষ্টতই দূরত্ব বাড়ছে। যদিও ড. ইউনূস একাধিকবার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু তার এই বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারছে না বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই। বরং বিএনপিসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে জানিয়েছে তারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেখতে চান। তবে জাপান সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা তার এক বক্তব্যে বলেন, সব দল নয়, শুধু একটি রাজনৈতিক দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। তিনি মূলত; বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে এমন কথা বলেছেন। তার এই মন্তব্যের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড. ইউনূসে মুখে যা বলছেন, ভেতরে ভেতরে ভিন্ন চিন্তা করছেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি করে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন। আর এক্ষেত্রে তাকে সমর্থন জোগাচ্ছে তার ক্যাবিনেটে থাকা কয়েকজন উপদেষ্টা এবং জামায়াত-এনসিপিসহ দু’একটি দল। যারা এখন সরকারের সর্বত্রই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে কিন্তু ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক দলের নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। এই সরকারের প্রতি জনগণের যে আকাক্সক্ষা ছিল- সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। এই তিনটি ইস্যুর কোনটিতেই এখনো দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি সরকার। আগামী কয়েক মাসে সেটি সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন না তারা। বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীন ব্যাংকের ট্যাক্স মওকুফ, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়সহ উনার ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের তথ্য বের হচ্ছে। আর জামায়াত-এনসিপিসহ দু’একটি রাজনৈতিক দল পুরো সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। যার ফলে তারা যে কোন উপায়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে চান। অথচ দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল, এমনকি সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশে-বিদেশে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানানো হচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতারা তাগাদা দিচ্ছে যে, দ্রুত নির্বাচন না হলে অর্থনৈতিক সঙ্কট দূর হবে না। বিনিয়োগকারীরাও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বিনিয়োগের অপেক্ষা করছেন। ফলে যখন রাজনৈতিক, সশস্ত্র বাহিনী, ব্যবসায়ীসহ সর্বমহলে দ্রুত নির্বাচনের দাবি উঠছে তখন সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোন রোডম্যাপের বিষয়ে কোন বক্তব্য আসছে না। বরং যে বক্তব্য দেয়া হচ্ছে তাতে নতুন করে সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন, বিএনপিসহ তার সমমনা দলগুলো সরকারকে সময় দিতে চায় না, অন্যদিকে ড. ইউনূস সময় চান। এখনেই মূল সঙ্কটটা তৈরি হয়েছে। বিএনপি হয়তো তার মতো করে চিন্তা করছে যে, দলের ভাবমূর্তি দিন দিন খারাপ হচ্ছে, মাঠ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ নেই, ক্ষমতায় গেলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আর ড. ইউনূস সাহেব যতদিন সম্ভব ক্ষমতায় থাকতে চান। এর দুটি দিক- একটি হচ্ছে, তিনি সংস্কার করতে চান, যার জন্য সময় প্রয়োজন। আরেকটি হচ্ছে, উনি নিজের ব্যক্তি স্বার্থে এমন কিছু কাজ করেছেন যার জন্য সেইফ এক্সিট প্রয়োজন। সেটি উনি এখন খুঁজে পাচ্ছেন না। উনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে গ্রামীণ ব্যাংকের ট্যাক্স মওকুফ করে নিয়েছেন, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছেন, আরো বেশকিছু সুবিধা-আদায় করে নিয়েছেন। এটা করতে গিয়ে উনি ফেঁসে গেছেন। সময় পেলে তার পক্ষে সুবিধা হয়।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলছেন। রাজনৈতিক দলগুলো উনার কথায় আস্থা রাখতে পারছে না। তারা মনে করেন, উনি যা বলছেন ভেতরে সেটা বিশ্বাস করছেন না। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে তিনি কৌশল করছেন। এজন্য পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি করে সংঘাত সৃষ্টি করে ক্ষমতায় থাকতে চান।
জামায়াত-এনসিপিসহ কয়েকটি দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দীর্ঘ সময় দিতে চাওয়ার কারণ সম্পর্কে ড. সাব্বীর আহমদ মনে করেন, ড. ইউনূসের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে জামায়াত ও এনসিপি’র কোন ক্ষতি নেই। কারণ ক্ষমতায় যাওয়ার মতো তাদের কোন অবস্থা নেই। এখন নির্বাচন হলে জামায়াত ১৫-২০টির মতো সিট পাবে। সময় পেলে তারা সেটি বৃদ্ধি করার সুযোগ পাবে। আর এনসিপি সাংগঠনিকভাবে অবস্থান তৈরির সুযোগ পাবে। এছাড়া তারা এখন যেভাবে ক্ষমতার অংশ হয়ে গেছে, এই ধরণের সুবিধা এর আগে তারা কখনো পায়নি। সরকারের সর্বত্র এখন তাদের নিয়ন্ত্রণ। এটি তারা হারাতে চায় না।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে একটি দল নয়, কমপক্ষে ২০টি নিবন্ধিত দলসহ প্রায় সব দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এলডিপিসহ বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে শরীক সকল দল চায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। এ নিয়ে টালবাহানার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ ছিল দেশের বিশৃঙ্খল-অরাজক পরিস্থিতিতে থামিয়ে যত দ্রুত সম্ভব জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা ছিল একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এই সরকার সেই পথে না হেটে ক্ষমতায় থাকার রাস্তা পাকাপোক্ত করার চেষ্টায় ব্যস্ত।
রেদোয়ান আহমেদ জানতে চেয়ে বলেন, ৯ মাসে সরকার কী সংস্কার করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ৬৬৬ কোটি টাকা সুদ মওকুফ। ৪ হাজার কোটি টাকা গ্রামীণ ফোনের মওকুফ। স্টার লিংকে গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ ফোনের অংশীদার। এটিকে কী আমরা সংস্কার বলবো?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএনপি গত ১০ তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে। তবে পরবর্তীতে সেখান থেকে সরে এসে চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে। বিএনপির পাশাপাশি আরো অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দলও একই দাবিতে একমত আছে। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকেও একই ধরণের বার্তা দেয়া হয়েছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে লিবারেল ডেকোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বালাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, গণফোরাম, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, গণঅধিকার পরিষদ- এর বাইরে গণতান্ত্রিক জোট, বাম জোট, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোটসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বিএনপির সমমনা ৪২টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। আর আমাদের গণতান্ত্রিক জোটও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। আমরা তো ছয়টি দল। এর বাইরে আরো দল আছে, যারা নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে চায়। প্রধান উপদেষ্টা যদি দলের হিসাব করেন, তাহলে আমার হিসাবে কমপক্ষে ৫৫টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। ফলে প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিগত ১০ মাসে যারা প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সুবিধা পেয়েছে, লাভবান হয়েছে তারাই সরকারকে লম্বা সময় দিতে চায়। সরকার লম্বা সময় থাকলে তাদের সুবিধা হয়। কারা বিগত ১০ মাসে লাভবান হয়েছে তাদের নাম উল্লেখ করছি না, আপনারা জানেন। এজন্য তারা চায় জুন, কিংবা পারলে আরো পরে নির্বাচন চায়।
তিনি বলেন, অধিকাংশ দল, অংশীজন, সশস্ত্র বাহিনী বলছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার। কিন্তু সরকার তাদের সকলকে প্রতিপক্ষ বানাচ্ছে। সাইফুল হক বলেন, ভোটের অধিকার আদায়ে আমরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম করে ফ্যাসিবাদকে বিদায় করে অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। এখন যদি সেই ভোটাধিকার আদায় করতে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়, সেটি আমাদের জন্য বিব্রতকর হবে। এটি করার আগেই সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে আশা করি। নির্বাচনের বিষয়ে ঘোষণা দেয়ার জন্য ১৫-২০ দিনের কাজ। এটি করতে সঠিক নিয়তের প্রয়োজন। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। সরকারের একগুয়েমির কারণে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কি কারণে জুন পর্যন্ত লাগবে সেটিও সরকার এখন পর্যন্ত পরিষ্কার করতে পারেনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই হতে হবে। দেশে কেউ বিনিয়োগ করতে আসলে তারা জিজ্ঞেস করে নির্বাচন কবে? আমি একটা নির্বাচিত সরকার দেখতে চাই। নির্বাচিত বিরোধী দল, নির্বাচিত সংসদ দেখতে চাই।
তিনি বলেন, যদি কেউ বলে শুধুমাত্র একটি দল নির্বাচন চায়, এটা কী সত্য? ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে এমন ৫২টা রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এই রকম একটা বক্তব্য আমাদের জন্য বিব্রতকর, জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছে।
হাতেগোনা কয়েকটি দল নির্বাচন চায় না উল্লেখ করে আমির খসরু বলেন, ৪/৫ টি দল এরা কোনো নিবন্ধিত দলও না, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই তারা নির্বাচন চায় না। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও এমন কিংস পার্টি হয়েছিলো। কথাগুলো বলতে চাই না এই কারণে এসব বললে জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়।
এদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে গণফোরাম। গত শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সেটির পুনরুল্লেখ করেছে দলটি। দলের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের বক্তব্য অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং এর ফলে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। গণফোরামের নেতারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সুফল পেতে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের রূপরেখা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে দুঃখজনক।
নেতারা আরও বলেন, গত নয় মাসে সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও জনপ্রশাসনের অস্থিরতা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার বা দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা এখনো লক্ষ করা যায়নি। ফলে সরকারের প্রতি জনসমর্থন যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ও জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা-একটি দল বাদে কেউ ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না-মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্যের অপলাপমাত্র। তাঁর এ বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক।’ জোটের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সব টালবাহানা ও চক্রান্ত বন্ধ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় নির্বাচনী সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে দফায় দফায় এ বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচনের কথা বলেছি। দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো সভা, সমাবেশ, সেমিনার, বক্তব্য, বিবৃতি এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বারবার এই কথা উচ্চারণ করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস হয়তো ভুলে যাচ্ছেন তিনি কথার মারপ্যাচ দিয়ে তার গদি রক্ষা করতে পারবেন না। পদত্যাগের নাটক করেও পারবেন না। বাংলাদেশের জনগণ তার নাটকবাজি বুঝে গেছেন।’
‘অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে দেশ মহাসংকটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য’ প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান ১২ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেন বলেন, ‘অন্যথা দেশের মানুষই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তখন তিনি মৌলবাদী ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলকে পাশে পাবেন না। তার পরিণতি যেন আফগানিস্থানের পালিয়ে যাওয়া মোহাম্মদ আশরাফ গনি আহমদজাইয়ের মতো না হয়।’
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অবিলম্বে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। জোটের নেতারা বলেছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতির মধ্যে আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছে। তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ দেশের গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দল এবং জোটও এই সময়ে নির্বাচন চায়। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কোনো তালবাহানা চলবে না। কোনো অজুহাতেই নির্বাচনকে প্রলম্বিত করা যাবে না।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, যারা সরকারের সুবিধা পাচ্ছে এবং নিজেদের দল গোছাতে সময় চায়, এমন দুই-তিনটি ছাড়া প্রায় সব দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। বিশেষ করে এনসিপি নির্বাচনবিরোধী অবস্থানে আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর দিকে সরকারের কর্মকা-ের প্রতি জনগণের শর্তহীন সমর্থন ছিল। কিন্তু গত নয় মাসে সরকারের কর্মকা-ে মানুষ বুঝতে পারছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা আসবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কোন দল চায় আর কোন দল চায় না তার সংখ্যা হিসাব করেন, তা ঠিক হবে না। তিনি একটা কাউন্টার দিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে এখন গণতান্ত্রিক ট্রানজিশন নির্ভর করছে তিনটি শক্তির ওপর। সরকার, সেনাবাহিনী এবং বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা তো এনসিপির প্রতি বায়াসড। কিন্তু তাদের কোনো ভোট আছে? নিবন্ধনই তো নেই। বিএনপির পরে আছে জামায়াত। তার ভোট বা শক্তি বিনএপির তুলনায় কিছুই না। তাহলে প্রধান উপদেষ্টা একটি দল বলেন আর অন্য দিকে যদি ১০০ দলও থাকে তাতে কিছুই ম্যাটার করে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d