টাকার খনি পূর্ব সিলেট, বদনজর ডেভিলদের

সরকার বদল হলেই ডেভিল বদলায়। সামরিক-বেসামরিক সব সরকারের আমলে একই হাল। স্থানীয় কিছু আছে ‘পার্মানেন্ট পাওয়ার পার্টি’। তারা সব আমলে সক্রিয়। পথ-ঘাট চেনার কারণে বহিরাগত রাজনৈতিক ডেভিলদের কাছে তারা অপরিহার্য। তাদের নিজের কোনো পুঁজি খাটাতে হয় না। তাদের অবস্থা লাসভেগাস, সিঙ্গাপুর কিংবা হংককের ক্যাসিনোতে থাকা পার্মানেন্ট জুয়াড়িদের মতো। যারা নিজের অর্থে খেলে না। তবে তারা সার্টিফিকেট বা কার্ডধারী জুয়াড়ি। দামি ক্যাসিনোতে কোটি কোটি ডলার তাদের কার্ডেই ট্রানজেকশন হয়। রেকর্ডে তারা ক্যাসিনোর একেকজন সম্রাট। চোরাচালান রাজ্য পূর্ব সিলেটেও এমন অনেক জুয়াড়ি আছে।
সরকার বদল হওয়ার পর ওই জুয়াড়িরাই নতুনদের পথ দেখায়। তাদের অর্থকড়ি তেমন খরচ হয় না। ঢাকা বা সিলেট থেকে যাওয়া নতুন ডেভিলদের নিয়ে তারা টাকার খেলায় মেতে ওঠেন। পাথর-বালু লুট, চিনি চোরাচালান, স্বর্ণ পাচার, মাদক আমদানি কোথায় নেই তারা। সিলেট-তামাবিল সড়কের দু’পাশের জনপদকে পূর্ব সিলেট ধরা হয়। সেই সড়ক ঠেকছে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে থাকা শহর ডাউকি, শিলংয়ে। পূর্ব সিলেট প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এখানেই দেশের প্রথম গ্যাস ক্ষেত্র হরিপুর। গোটা অঞ্চল টাকার খনি। যার অন্যতম জাফলং। সেখানকার দিনের মায়াবি পরিবেশ রাতে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। কাঁচা টাকা নিয়ে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে জড়ো হন। দামি গাড়িতে চড়া সেই মাফিয়াদের টাকার কাছে স্থানীয়রা অসহায়। পূর্ব সিলেট পাথর লুট আর চোরাচালানের এক স্বর্গরাজ্য। ২০০৯ সাল, মহাজোট সরকারের তখন শুরু। পরিচিত-অপরিচিত সব ক্ষমতার চোখ আটকে যায় প্রকৃতি কন্যায়। সিলেট আওয়ামী লীগের এমন কোনো নেতা নেই জাফলংয়ে যার চোখ পড়েনি। গত ১৫ বছর ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রঞ্জিত সরকার, বিধান কুমার সাহা ও নাসির উদ্দিন খানের। পেছনে ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি ছিলেন পর্দার অন্তরালের আসল খেলোয়াড়। স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের শক্তিমত্তার জেরে জাফলং শাসনে সর্বপ্রথম মাঠে নামেন জৈন্তাপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলোচিত লিয়াকত আলী। তিনি এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। শুরু থেকেই তার দাপট। সঙ্গে মাঠে ছিলেন সিলেটের রঞ্জিত বলয়ের নেতা আনোয়ার হোসেন আনু, বাবলু বখত, যুবলীগ নেতা কালা মালেক, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজা, আব্দুল আলিম ওরফে কালা আলিম, পূর্ব জাফলং ছাত্রলীগ সম্পাদক সাব্বির হোসনে সাজন। শুরুর দু’বছরে জাফলং থেকে লুট হয় হাজার কোটি টাকার পাথর। পরবর্তীতে লিয়াকত গ্রুপকে সরিয়ে জাফলংয়ের নিয়ন্ত্রণে নেয় আলোচিত লেবু চেয়ারম্যান পরিবার। আচমকা নেতৃত্বে আসেন গোয়াইনঘাট কলেজের অধ্যক্ষ ও এমপি ইমরান আহমদের আরেক আস্থাভাজন ফজলুল হক। তার সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলেন ইমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমন, ছাতকী আলাউদ্দিন, বিশ্বনাথী ফয়জুল, ট্রাক শ্রমিক নেতা সমেদসহ কয়েকজন। প্রায় ১৩ বছর জাফলং শাসন করে তারা। প্রতি বছর তারা বালু লুট করলেও ইসিএভুক্ত এলাকা হওয়ার কারণে শেষ সময়ে এসে তেমন পাথর লুট করতে পারেনি। তবে ওই সময়েও হাজার কোটি টাকার অন্য সম্পদ লুট হয়েছে। ৫ই আগস্টের পর এখন ভিন্ন পরিবেশ। পূর্বের ডেভিলরা পালিয়েছে। নতুনরা জায়গা করে নিয়েছে। জাফলংয়ের গডফাদার এখন জেলা বিএনপি’র বহিষ্কৃত যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান এবং বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন। তারা নতুন হওয়ায় পুরনো ডেভিলদের দেখানো পথে হাঁটছেন। তাদের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটে রয়েছে পুরনো ডেভিল আনোয়ার হোসেন ওরফে পানামা আনু, জুবের আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা লন্ডনী কামাল, ট্রাক শ্রমিক নেতা সমেদ, আমজাদ বক্স, ছাত্রদল নেতা সোহেল আহমদ, আজগর, আকবর, যুবদল নেতা আবুল কাশেম। নেপথ্যে থেকে কাজ করছে জাফলংয়ের কুখ্যাত লুটেরা হেনরী লামিন। পিয়াইন নদীর ওপারে খাসিয়া পল্লীতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে যুবদল নেতা স্ট্যালিন খাসিয়া। জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যান গত দু’মাস ধরে জাফলংয়ের কোয়ারিতে অবস্থান নিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট মতে; জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও কোয়ারি থেকে ইতোমধ্যে কয়েকশ’ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত ওই লুটতরাজ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, জাফলং তছনছ হয়ে গেছে। পাথর লুটের রীতিমতো মহোৎসব চলছে। অভিযানে বারকি শ্রমিক এবং শ্যালো মেশিন শ্রমিকদের ধরপাকড় করা হলেও মূলহোতারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। জাফলং বাঁচাতে স্থানীয়রা মাঠে। গত শুক্রবার রাতেও পাথর লুট বিরুদ্ধে এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে শনিবার উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বের টাস্কফোর্সের সাঁড়াশি অভিযান হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, শ্রমিক হয়রানি না করে যেন প্রকৃত হোতা অর্থাৎ রাজনৈতিক ডেভিলদের ধরা হয়।
স্মরণ করা যায়, জাফলংয়ে বালু লুটে ৫ই আগস্টের পূর্বে নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, সুভাষ দাশ, যুবলীগ নেতা রাসেল আহমদ, সরওয়ার আহমদ পালিয়েছে। সিলেটের নাম্বার ওয়ান ডেভিলখ্যাত রঞ্জিতের অনুসারী ছিলো তারা। জাফলং চোরাচালানের নিরাপদ রুটও। বিশেষ করে সোনাটিলা, আমসত্বপুর, তামাবিল, মিনার টিলা, জিরো পয়েন্টসহ কয়েকটি এলাকা চোরাচালানের জন্য গোটা রাতই জেগে থাকে। পূর্বে চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করতো পূর্ব জাফলংয়ের মেম্বার আব্দুল মান্নান, নাজিম উদ্দিন, চশমা শামীমসহ কয়েকজন। তাদের নেতৃত্বে ছিল ইমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমন। বর্তমানে জামাই সুমন পালিয়ে গেলেও মান্নান মেম্বারের নেতৃত্বে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার চোরাকারবার অব্যাহত রয়েছে। ছাত্র-জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে জামাই সুমনের বাড়ি ও মসলা ফ্যাক্টরি। জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম নতুন করে এই সিন্ডিকেটে যোগ দিয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এখন স্বপন গ্রুপের সঙ্গে কাশের গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে। কয়েক দফা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে।
টাকার উড়ে তামাবিল স্থলবন্দরে
গোয়াইনঘাটের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হচ্ছে তামাবিল স্থলবন্দর। টাকা উড়ে এ বন্দরে। সাবেক এমপি ও মন্ত্রী ইমরান আহমদের ছত্রচ্ছায়ায় তামাবিলের মূল নেতৃত্ব ছিল জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী। ৫ই আগস্টের পর থেকে পার্শ্ববর্তী ভারতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে। এ বন্দরে লিয়াকতের অন্যতম সহযোগী হচ্ছে- ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন, ফারুক আহমদ, সাবেক অধ্যক্ষ ফজলুল হক, সারোয়ার হোসেন ছেদু, রফিকুল ইসলাম শাহপরান, শাহ আলম স্বপন, জাকির আহমদ ওরফে আর্মি জাকির, ইসমাইল হোসেন, ইলিয়াস উদ্দিন লিপু, আব্দুল করিম। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- তামাবিল বন্দরে লেবার হেন্ডেলিংয়ের শতকোটি টাকা লুটে নিয়েছে ওই চক্র। লেবার হেন্ডেলিংয়ে টাকা নিলেও কোনো সেবা দেয়া হতো না। ফলে সব টাকাই লিয়াকত-জালাল সিন্ডিকেটের পকেটে গেছে। জনশ্রুতি আছে; জালাল-লিয়াকত জৈন্তাপুরের কেয়ামত। গণ অভ্যুত্থ্যানের পর বিএনপি’র বহিষ্কৃৃত নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরান তার ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে তামাবিল বন্দরের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এ ছাড়া জামায়াত নেতা জয়নাল আবেদীন, এডভোকেট আহাদসহ কয়েকজনকে নিয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়। বিতর্কের মুখে জয়নাল আবেদীন তামাবিল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সেখানে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন জৈন্তাপুরের ইউপি চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি নেতা ফখরুল ইসলাম। তামাবিল বন্দরের অনিয়মের নানা অভিযোগ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের কর্মকর্তারা সরজমিন তদন্ত করেন। ওই তদন্তে লেবার হেন্ডেলিংয়ে দুর্নীতির সত্যতা পায় দুদক।
চোরাচালানের হেডকোয়ার্টার হরিপুর
চোরাচালান আগেও ছিলো এখনো আছে। তবে করোনাকালে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। নিয়মিত বাণিজ্যও তখন মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু নিউ নরমাল করোনা পরিস্থিতিতে সিলেট সীমান্তে চোরাচালান অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। বানের পানির মতো নামতে থাকে চিনি। শুরুতে চিনি চোরাচালান নিয়ে পুলিশের কড়াকড়ি ছিল। স্থানীয় ছিচকে চোরাকারবারির সঙ্গে যোগসাজশে এটি মূলত রাজধানীতে সাপ্লাই হতো। ওই রুট দিয়ে যাতায়াতকারী চিনি চোরাচালানে যুক্ত ট্রাকগুলো রঞ্জিত সিন্ডিকেটকে চাঁদা না দিয়ে শাহপরান বাইপাস বা টিলাগড় পাড় হতে পারতো না। অবশ্য পরবর্তীতে তামাবিল-সিলেট তথা ঢাকা পর্যন্ত রুটে প্রভাবশালী চিনি চোরাচালান বৃহত্তর সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। স্থানীয়দের মতে, এক রাতে হরিপুর থেকে শ শ ট্রাকে করে শত কোটি টাকা পর্যন্ত চিনি চোরাচালান হতো। তার সঙ্গে ছিল মহিষ ও গরু চোরাচালান, শাড়ি, প্রসাধনীসহ নানা ধরনের পণ্য। হরিপুরের স্থানীয় সিন্ডিকেট চোরাচালানের নিয়ন্ত্রক। আওয়ামী লীগ শাসনামলে হরিপুরের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ ও বোঙারী প্রধান আবুল হোসেন। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে ছাত্রলীগ কর্মী আলমগীর হোসেন রায়হান ও স্থানীয় ছাত্রদল নেতা শাহীন আহমদের। গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটের অর্ধশতাধিক সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে স্রোতের মতো আসা চোরাই পণ্যের গুদামজাত হয় হরিপুরে। সেখান থেকে প্রতিদিন ২শ’ থেকে ৩শ’ ট্রাক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রওয়ানা দিতো। ওপেন সিক্রেট এই চোরাচালানে শেল্টার ছিল পুলিশেরও। সিলেটের সাবেক এসপি (ছাত্র আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের র্যাবের কমান্ডিং অফিসার) ফরিদ উদ্দিন ও সিলেট জেলার ডিবি ইন্সপেক্টর রেফায়েত চৌধুরী এখান থেকে দু’হাতে টাকা কামিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে তারা দু’জনই সিলেট থেকে বদলি হয়ে চলে যান। হরিপুর থেকে টিলাগড় পর্যন্ত চোরাই লাইনের নিয়ন্ত্রণ ছিল সিলেটের ডন রঞ্জিতের সহযোগী কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলামের। তাদের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বড় একটি অংশ যুক্ত হয়ে প্রকাশ্যই চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে। স্থানীয়দের মতে, প্রতিদিন হরিপুরে চোরাকারবারির কয়েকশ’ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর হরিপুরের চোরাই রাজ্যের সেই রমরমা ভাব নেই। সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে এখন পণ্য আসা কমেছে। যেটুকু চোরাই পণ্য আসছে তার নিয়ন্ত্রকের হাত বদল হয়েছে। নতুনদের দখলে এখন হরিপুর। রিপোর্ট বলছে, পণ্য সংগ্রহে হুন্ডির মাধ্যমে শ’ শ’ কোটি টাকা পাচায় হয় ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে।
এসপি’র বক্তব্য:
৫ই আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান দেশের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন নিয়েছে। কিন্তু পূর্ব সিলেটের চোরাচালান এবং পাথর-বালু লুট বন্ধ হয়নি। এজন্য পুলিশের নিস্ক্রিয়তার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে বদলি হয়ে আসা পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার কথা বলা হচ্ছে। এসব অভিযোগ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য হচ্ছে সীমান্ত চোরাচালান ঠেকানো পুলিশের কাজ নয়। উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে দেদারসে ভারতীয় পণ্য এবং মাদক ঢুকছে স্বীকার করে মানবজমিনকে তিনি বলেন- জরুরি হয়ে গেছে ওই এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ। পুলিশের নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন- চোরাচালান পরিবহন বন্ধে সড়কে পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। কোয়ারি থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকার কারণে অনেকে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে বলে স্বীকার করেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন- গোটা জেলায় প্রায় সব পুলিশ নতুন। এসপি অফিসে খাতাপত্রও নতুন। এ অবস্থায় কাজ বুঝে নবাগত পুলিশ সদস্যরা অল্পদিনের মধ্যেই অপরাধ বন্ধে তৎপর বলে দাবি করেন তিনি। চোরাচালান বিষয়ে এসপি’র মূল্যায়ন হচ্ছে একটি চক্র বংশপরম্পরায় সীমান্তে এ অপরাধ অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অপরাধ বা পাপবোধ নেই।