টাকার প্রবাহ কমালে মন্দার ক্ষত বাড়বে: মুদ্রানীতি নিয়ে দোটানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
জুলাইয়ের শেষদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। এবারের মুদ্রানীতিতেও আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর বা সংকোচনমুখী নীতি গ্রহণ করা হতে পারে। এটি হলে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি কমানোর লক্ষ্যে আগামী বছর নিয়ে টানা তিন বছর অনুসরণ করা হবে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি। এতে আগে যেমন দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তেমনই আগামী দিনেও একই অবস্থা হবে। এ নীতির ফলে মূল্যস্ফীতি কমেনি, উলটো আরও বেড়েছে। এদিকে সংকোচনমুখী নীতির কারণে বেসরকারি খাতে এবং শ্রমবাজারে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরের মুদ্রানীতির কাঠামো তৈরি করতে গিয়ে দোটানায় পড়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তবে এবার টাকার প্রবাহ কমানো হলেও উৎপাদন খাতে টাকার জোগান আরও বাড়ানো হবে। যাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা হবে জুলাইয়ের শেষদিকে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। তবে এবারের মুদ্রানীতি প্রণয়ন করতে গিয়ে খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হার সহনীয় রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌলিক দায়িত্বের একটি। কিন্তু গত দুই বছরের বেশি সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ দুটি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে দেশে ডলারের দাম হুহু করে বেড়েছে। গত দুই বছরে সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। আগামী দিনেও আরও অবমূল্যায়নের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি চলে গেছে। ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। এর মধ্যে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এতে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য-আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেশি বেড়েছে। তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়নির্বাহ এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে ঋণের সুদহার বেড়েছে। ডলারের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে বেড়েছে পণ্যমূল্য। বাড়েনি বিনিয়োগ। ফলে কর্মসংস্থানের হার বাড়েনি। বরং আগের কর্মসংস্থান থেকে অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। যারা কর্মে আছেন, তাদেরও আয় কমেছে। ফলে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। এমন অবস্থায় সামনে এসেছে আগামী অর্থবছরের মুদ্রানীতি। আইএমএফ-এর প্রধান শর্ত হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করতে হবে। এ কারণে আগামী মুদ্রানীতিতেও টাকার প্রবাহ কমানো হবে। তবে বিশেষ করে উৎপাদন খাতে টাকার প্রবাহ বাড়ানো হবে। এ খাতে যাতে সুদের হার কম থাকে, সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ নজর রাখবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বরাবরই বলে আসছে এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, এটি টাকার প্রবাহ বাড়ার কারণে নয়। এখন টাকার প্রবাহ বাড়ছে না। রাজস্ব নীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যেও সমন্বয় করা হয়েছে। যে কারণে সরকারের আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য এসেছে। তারপরও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তারা বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছে, বাজারে ত্রুটির কারণেই পণ্যের দাম বাড়ছে। যে কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। কিন্তু আইএমএফ বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটি নিয়ে কোনো কথা বলছে না। তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিকে ব্যবহার করতে জোর দিয়েছে। এখন তাদের শর্তের বাইরে গিয়ে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করা সম্ভব যাচ্ছে না। কারণ, এতে ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ আটকে যেতে পারে।