Bangladesh

টাকার মান কমলে মূল্যস্ফীতি বাড়বেই

অনেক সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক শেষ পর্যন্ত তাদের পলিসি অনুযায়ী রিভার্স রেপো বৃদ্ধি করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মার্কেটে সুদহার বাড়ানো। এখন মার্কেটে ঋণের সুদহার দশের কাছাকাছি।

তারল্য সংকট মোকাবিলার জন্য আমানতের সুদের হার বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। বাড়তি আমানত সংগ্রহ করাই তাদের মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও আমানতের সুদহার বাড়াতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে আমানত প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনো মূল্যস্ফীতির হারের নিচেই রয়ে গেছে আমানতের সুদহার। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখলে সুদসহ না বেড়ে বরং টাকা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে সর্বত্রই সুদহার কমই ছিল। রিভার্স রেপো পলিসি রেটও অনেক কম ছিল। তবে বিশ্বে এটাকে বাড়ানো হচ্ছে। যেমন ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের পলিসি রেট অনুযায়ী সুদহার বাড়াচ্ছে। তবে আমার কাছে এবং অন্যান্য অর্থনীতিবিদের কাছেও বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কারণ, বিশ্বের অনেক দেশেই অ্যাডভান্সড ইকোনমি বিরাজমান।

সেসব দেশে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে তারা পণ্যের চাহিদাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য সুদহার বাড়িয়ে দেয়। মূল্যস্ফীতি প্রতিরোধ করার জন্য মূলত চাহিদাকে নিরুৎসাহিত করে। তবে চাহিদাকে নিরুৎসাহিত করা হবে কীভাবে, এটা একটা প্রশ্ন। সাধারণত বাজারে কম অর্থ প্রবাহিত হওয়ার জন্য সুদের হার বাড়ানো হয়, যেটা দুই বছর ধরে অ্যাডভান্সড ইকোনমির দেশগুলো করে যাচ্ছে।

এজন্য বিশ্বব্যাপী ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কন্ট্রাকশনারি মানিটারি পলিসি অর্থাৎ সংকোচনমূলক মানিটারি পলিসি প্রয়োগ করে এসব অ্যাডভান্সড ইকোনমির দেশ। এর দেখাদেখি আমাদেরও যে এটা করতে হবে তা নয়।

আমাদের এখানে মূল্যস্ফীতিটা যে পণ্যের খুব বেশি চাহিদার কারণে হচ্ছে তা নয়। এখানে মূল্যস্ফীতিটা মূলত হচ্ছে পণ্য সরবরাহের ঘাটতি থেকে। এখন সুদহার যদি বাড়ানো হয়, মানুষ পণ্য কম কিনে কম ভোগ করবে ঠিকই; কিন্তু তাতে মূল্যস্ফীতি কমবে এ ধারণা ঠিক নয়। তবে সুদহার বাড়ালে কমতে পারে রিয়েল স্টেট, গাড়ি ক্রয় বা বিমানের ফার্স্ট ক্লাসে ভ্রমণের ক্ষেত্রে। আমাদের মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয় নিত্যপণ্যের সরবরাহ দিয়ে।

যেমন-চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ এসব পণ্যের ভিত্তিতে। এগুলোর সরবরাহের ঘাটতির কারণে পণ্যের দামটা বেশি। কিন্তু এখন এসব নিত্যপণ্যের চাহিদা কমিয়ে দিলে তো দেশের মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে। উন্নত রাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি হয় বেশির ভাগ উচ্চমূল্যের পণ্য ও সেবার জন্য। আমাদের দেশে আমরা যে মূল্যস্ফীতি দেখি বা হিসাব করি, সেটি খাদ্যপণ্যের ওপর, যেগুলোকে আমরা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বলি। এগুলোয় সুদহার বাড়িয়ে চাহিদা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বরং হিতে বিপরীত হবে। অর্থাৎ মানুষের হাতে টাকা কম প্রবাহিত হলে মানুষ আরও ভুগবে। সুদহার বাড়ানো হলে বিনিয়োগ কমে যাবে।

বিনিয়োগ কমে গেলে কর্মসংস্থান কমবে। কর্মসংস্থান কমলে নিয়োগ কমে যাবে। ফলে বহু মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এতে পণ্য সরবরাহ আরও কমে যাবে। ফলে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগামিতার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি আরও জেঁকে বসবে অর্থনীতির ওপর। তবে আমাদের মূল্যস্ফীতিটা মূলত আসছে টাকার মূল্য হারানো থেকে। আমাদের মূল মূল্যস্ফীতির উৎসটা হচ্ছে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যের ওপর। টাকার মূল্যমান কমাটা যদি থামানো না যায়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না। যেমন ডলারের সরকারি দাম এখন ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।

এটা যদি আরও বেড়ে যায়, তাহলে কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? এটা অসম্ভব। কারণ বিদেশ থেকে যে পণ্যগুলো আসছে সেগুলো উচ্চমূল্যেই আসছে। উচ্চমূল্যে এলে সেই পণ্য এখানে উচ্চমূল্যেই বিক্রি হবে। তাহলে তো মূল্যস্ফীতি হবেই। টাকা ও ডলারের বিনিময় হারটাকে ইচ্ছা করলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেও না। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সেই জাদুমন্ত্রও নেই। তবে এটাকে বাজারভিত্তিক করে দিলে ম্যানিপুলেশন হবে।

প্রশ্ন হলো, গত দুই বছর কেন বাংলাদেশের টাকা মূল্য হারিয়েছে? এর মূল কারণটা ছিল যুদ্ধবিগ্রহ, করোনা মহামারি এবং পণ্য রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়া। সুতরাং দেশে ডলার প্রবেশের চেয়ে চলে গেছে বেশি। আবার রেমিট্যান্স প্রবাহতেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

তবে রিজার্ভ পতনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ যেটি, যা নিয়ে আমাদের অর্থনীতিবিদরাও খুব একটা বলছেন না, সেটা হলো, আমরা প্রতিমাসে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছি বৈদেশিক ঋণের টাকা পরিশোধ করতে, যা আগে ছিল না। এ কারণে রিজার্ভের দ্রুত পতন ঘটছে। এর পেছনের মূল কারণটা হচ্ছে সরকারের খরচ বৃদ্ধি পাওয়া। নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। তাছাড়া ডলার সংকটের কারণে এলসি ডিসপোজাল হচ্ছে না, যার ফলে অনেক পণ্য আমদানি করাও যাচ্ছে না।

বিদেশি পাওনাদারকে তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে বিদেশি মুদ্রাতেই। যেমন ভারতের আদানিকে তার মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে ডলারে। ভারত থেকে যেসব পণ্য আনা হচ্ছে, সেগুলোও ডলারে পেমেন্ট করতে হচ্ছে। সুতরাং যখনই বাইরে থেকে কিছু আনতে বড় ধরনের কোনো চুক্তি করা হবে, সেখানেও একটা দায় সৃষ্টি হচ্ছে, যা ডলারে পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশ সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের মতো অনেক কিছুই এনেছে, যার জন্য ডলার গুনতে হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণ, যেটা আগে ৩০ বিলিয়ন ছিল, সেটা এখন ১০০ বিলিয়ন হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে অনেকগুলো পেমেন্ট ডিউ হয়ে গেছে। এর মূল কারণই হচ্ছে বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভের পতন, যেটাকে ডলার সংকট বলা হয়।

বলতে গেলে অনেক কিছুর মূলেই রয়েছে ডলার সংকট। তবে ডলার সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা সহসা দেখা যাচ্ছে না। ডলারের বিনিময় হার যতদিন পর্যন্ত সহনীয় মাত্রায় না আসে, ততদিন আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিভিন্ন কথা বলতে পারব ঠিকই, কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় আনা সম্ভব হবে না। আর বাদবাকি কিছু কিছু মূল্যস্ফীতি হচ্ছে সিজনাল। যেমন-আলু, ডিম, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ইত্যাদি পণ্যের দাম বাড়ছে সিন্ডিকেটের কারণে।

এসব সিন্ডিকেটের সমিতি আছে, তাই তারা তাদের মতো করে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ধরনের মূল্যস্ফীতি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সমস্যা। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এ ধরনের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকার এ ধরনের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিকে যদি রোধ করতে না পারে এবং বিনিময় হার যদি কমাতে না পারে, তাহলে মূল্যস্ফীতি ইচ্ছা থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

যা হোক, সুদহার বাড়িয়ে লাভ নেই। বরং সুদহার বাড়ালে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে। কারণ যদি উচ্চসুদে বিনিয়োগকারীরা বা ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, তাহলে তারা তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে। সুতরাং তাতে কোনো লাভ হবে না। কারণ ভোক্তাকে বেশি মূল্যেই পণ্য কিনতে হবে।

আমাদের অর্থনীতি যাতে স্থবির হয়ে না যায়, সেটা আমাদের দেখা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের মানিটারি পলিসি কন্ট্রাকশনারি ছিল না, আমাদেরটা ছিল নিড বেইজড, মানে প্রয়োজন অনুযায়ী মানিটারি পলিসি রাখা। ওটা ঠিকই ছিল। আবার কিছু অর্থনীতিবিদ যে বিনিময় হারকে মার্কেট বেইজডে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন, আমি এর পক্ষে নই। কারণ মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিলে ম্যানিপুলেট হবে। যেমন কোনো ব্যাংক দেবে ২ টাকা বেশি, কোনো ব্যাংক ৪ টাকা বেশি। কেউ আবার বিদেশে টাকা হুন্ডি করতে চাইলে ওই ব্যাংক থেকে ক্যাশ ডলার কেনা শুরু করবে। এতে করে দেশের রিজার্ভ থেকে ধীরে ধীরে ডলার উধাও হয়ে যাবে।

কারণ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হলে সেটা দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে না। দেশে যারা দুর্নীতি করেছে, ঋণখেলাপি করেছে, যাদের কাছে সস্তা অর্থ এসে গেছে, তারাই অর্থ পাচার করছে। সুতরাং এসব লোক চাহিদা সৃষ্টি করছে ডলারে। ডলার তো আর আগের মতো ৮৬, ৯০ টাকায় নেই। সমস্যার সৃষ্টি এখান থেকেই। এই হুন্ডি বা চোরাই পথে টাকা তারা যে বাংলাদেশ থেকে নেয় তা নয়, বিদেশে নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশি যারা সৌদি ও ওমানে কাজ করছে, তাদের থেকে ওরা নিয়ে নেয়।

অর্থাৎ বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের টাকাগুলো হুন্ডির কারণে আর বাংলাদেশে আসতে পারে না, বিদেশে চলে যাচ্ছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যে টাকাটা আমাদের বিদেশি মুদ্রায় যোগ হতো, সেটা যোগ না হয়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। এ কারণে রেমিট্যান্সের রিজার্ভের প্রবাহ কমে গেছে। সুতরাং ইনফর্মাল মার্কেট বা কার্ব মার্কেট বা হুন্ডি মার্কেট যাই বলি না কেন, সেটা রোধ করতে না পারলে আমাদের রিজার্ভের পথ সুগম হবে না।

রিজার্ভ সংকটের আরেকটি বিষয় হলো সরকারের উচ্চ ব্যয় নির্বাহ। এ ধরনের উচ্চ ব্যয়ে যদি লাগাম টানা না যায়, তাহলে সংকট থেকে উত্তরণের পথ রুদ্ধ। বর্তমানে সরকার অবশ্য কৃচ্ছ্রসাধনে তৎপর রয়েছে। তবে সরকারের উচিত ছিল আরও তিন বছর আগে থেকে খরচ নিয়ন্ত্রণ করা। সরকার গত দেড়-দুই বছর এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত করেনি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাইট অ্যান্ড লেফটে বেতন বাড়াচ্ছে, অ্যালাউন্স বাড়াচ্ছে। দামি দামি গাড়ির সুবিধা দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য বিদেশে পাঠাচ্ছে।

তবে বর্তমানে গণহারে বিদেশ যাওয়া সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা আরও দুবছর আগে থেকে করা উচিত ছিল। কারণ এদের পেছনে প্রচুর ডলার খরচ করতে হয়েছে সরকারকে। এসব সরকারি কর্মকর্তা সাধারণত বিমানের বিজনেস ক্লাসেই যাতায়াত করে থাকেন। বিজনেস ক্লাসে টিকিটের দাম চারগুণ। টিকিটের টাকাগুলো তো রিজার্ভ থেকেই যাচ্ছে। সুতরাং সরকারকে এসব ব্যাপারে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

Show More

8 Comments

  1. Excellent post. I used to be checking continuously this weblog and I’m impressed!
    Extremely useful information specifically the final section 🙂 I take care of such info much.
    I used to be seeking this certain info for a
    long time. Thank you and best of luck.

    Here is my website; vpn explained

  2. Have you ever thought about writing an e-book or guest authoring on other websites?
    I have a blog centered on the same topics you discuss and would really like to have you
    share some stories/information. I know my readers would enjoy your work.
    If you’re even remotely interested, feel free to
    send me an email.

    Here is my blog … vpn promo code

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d