Bangladesh

টালমাটাল দেশ সংঘর্ষ, গুলি, সারাদেশ থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন

দিনভর দেশ জুড়ে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন বিক্ষোভ। ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা, সংঘর্ষ। পুলিশের অ্যাকশন। অগ্নিগর্ভ একদিন পার করলো দেশ। মঙ্গলবার পুরো দেশ জুড়ে পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি না থাকলেও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থামাতে সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। হামলা, সংঘর্ষ, গুলিতে তিন জেলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামে ২ শিক্ষার্থীসহ তিনজন, ঢাকায় ২ জন এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন।

বিজ্ঞাপন হামলা সংঘাতে আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিকালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বগুড়ায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব স্কুল, কলেজ ও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমনা পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। 
চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী মো. আকরাম (২৪), ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল ও ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুক।
কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজ ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় দুইজন নিহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। অন্যদিকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন। দুপুরের পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা কলেজের কাছে পেট্রোল পাম্প এলাকায় এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে সন্ধ্যার পর সায়েন্সল্যাব এলাকার সিটি কলেজের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় একজন পড়ে ছিলেন। তাকে উদ্ধার করে পাশের পপুলার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেলে। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত যুবকের বয়স ২৫ বছরের কাছাকাছি। তার নাম শাহজাহান বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে নিয়ে আসা ব্যক্তিরা। তিনি নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাথে ব্যবসা করতেন। রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের খালাসপীরের জাফরপাড়ায়। পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

দুপুর থেকে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিকালে সংঘর্ষ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তপ্ত ক্যাম্পাসে সকাল থেকে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতারা লাঠিসোটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শাহবাগ, নীলক্ষেত ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। একই সময়ে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। উত্তেজনা বাড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বেলা দুইটার দিকে টিএসসিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে শুরু হয় ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশ। যেখানে অংশ নেয়া বেশির ভাগই বহিরাগত। যারা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ থেকে এসেছিলেন। বিকাল ৪টার দিকে টিএসসিতে আসেন প্রক্টর প্রফেসর ড. মাকসুদুর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। এ সময় তারা বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে সরে যেতে মাইকে নির্দেশ দেন। একই সময়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন নেতাকর্মীদের স্ব স্ব অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেন। নেতার নির্দেশনা মোতাবেক কোনো বহিরাগত তাদের অবস্থান ছাড়েননি। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডি বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে থাকা প্রায় ৫০টি লাঠিসোটা, স্টাম্প, রড ও পাইপ ছিনিয়ে নেন। তবে তা সংখ্যায় অনেক কম। তখনো প্রায় সব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল। সব সংগ্রহ না করে প্রক্টরিয়াল বডি শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে গেলে উত্তেজনা বাড়ে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডিকে ভুয়া ভুয়া বলে দুয়োধ্বনি দেন। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, ‘আমার বোনকে বহিরাগত মারলো তখন তোরা কোথায় ছিলি।’ শিক্ষকরা তাদের বুঝাতে গিয়েও ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে পিছু হটে প্রক্টরিয়াল বডি। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী শিক্ষকদের গায়েও হাত তুলেন। আহত হন সহকারী প্রক্টর ড. আব্দুল মুহিত। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ শিক্ষক আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা যখন শহীদ মিনার, বকশীবাজার মোড়, দোয়েল চত্বর ও  চানখাঁরপুল মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় চানখাঁরপুলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অনেকে। আহতদের ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।  এ হামলায় নেতৃত্ব দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আবদাল আজিজ। এ সময় একপাশে পুলিশ থাকলেও তাদের নীরব দেখা গেছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সির সামনে একটি বাস ভাঙচুর করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যখন সংঘর্ষ চলছে তখন টিএসসি’র ভেতর থেকে লাঠি এনে সমাবেশে থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বিকাল চারটার দিকে শহীদ মিনারের সামনের সড়ক দিয়ে গুলিস্তানের দিকে একটি যাত্রীবাহী মিনিবাস যাওয়ার সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বাসটি থামান। তারা বাসের ভেতরে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যাত্রীদের কয়েকজনকে ছাত্রলীগের কর্মী বলে তাদের সন্দেহ হয়। এতে আন্দোলনকারী ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে বাসটি ভাঙচুর করেন এবং ওই সন্দেহভাজনদের বাস থেকে নামিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের ভেতর নিয়ে যান। সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পুলিশ। তারা শুরুতে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ব্যারিকেড তৈরি করেন। রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ সেখানেও আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যারিকেড তৈরি করেন। ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, আমরা ক্যাম্পাস শান্ত রাখতে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবে কাজ  করবো। এদিকে টিএসসি’র সামনে ছাত্রলীগ যখন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে তখন বেগম রোকেয়া হলের ছাত্রীরা হল গেইটে এসে বিক্ষোভ দেখান। এ সময় তাদেরও কারও কারও হাতে লাঠিসোটা দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা বহিরাগতদের নিয়ে ছাত্রলীগের অবস্থান করায় টোকাই টোকাই বলে স্লোগান দেন। রাতে শিক্ষার্থীরা ভিসি চত্বরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এসময় তারা ক্যাম্পাসে বহিরাগত দিয়ে হামলার জন্য ভিসিকে দায়ী করেন। এবং এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। রাত ৯টার দিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ছাড়াই নিজেদের বিক্ষোভ স্থগিত করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আজকের মতো এখানে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি। আমরা আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেব। সেটি পরে আপনাদের জানিয়ে দেয়া হবে।  
শিক্ষার্থীদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ঢাবির ৮ হল: এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের ৫ হলসহ ৮ হলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ছাত্রলীগ। এতদিন ছেলেদের হলে একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ৩ হল পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হলগুলো হলো- ড. মু. শহীদুল্লাহ হল, অমর একুশে হল, ফজলুল হক মুসলিম হল। আর মেয়েদের পাঁচ হল হলো- বেগম রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল। এসব হলে ছাত্রলীগকে বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে সোমবার রাতে শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষ ভাঙচুর করেছে। শিক্ষার্থীরা হল ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, শহীদ মিনার, চানখাঁরপুল, দোয়েল চত্বর এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। সোমবার রাতে অমর একুশে হলের সামনে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে গেলে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে পড়েন। এ সময় ৩০ এর অধিক বাইক পালিয়ে যেতে পারলেও ১০-১২টা বাইক আটক করে শিক্ষার্থীরা। আটককৃত বাইক শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ভাঙচুর করে। এ সময় ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী গণপিটুনির শিকার হন। দুইজনকে আটক করে হলে নিয়ে আসা হয়।
বিক্ষোভ-সংঘর্ষে অচল ঢাকা 
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন রাজধানী ছাড়িয়ে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ছিল কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের অবস্থানের কারণে অচল। বিক্ষোভের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ হয়। দুপুর থেকেই সায়েন্সল্যাবে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সময় যত ঘনিয়েছে ততই উত্তপ্ত হয়েছে ওই এলাকা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে হামলা চালিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর। থেমে থেমে হওয়া ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বিকালে রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। সাড়ে ৫টার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঢাকা কলেজের সামনে মারধরে আহত একজনকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই সড়কে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হন শতাধিক। আহতদের পার্শ্ববর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সন্ধ্যার পরও থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় অংশ নেয়া ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের হাতে লাঠিসোটা, রড, পাইপ, হকিস্টিক, স্টাম্প, রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। দুই পক্ষ ক্ষণে ক্ষণে একে অপরের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। সন্ধ্যার দিকে সিটি কলেজের পাশ থেকে একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়। তার নাম মনির হোসেন। 
সকাল সাড়ে নয়টা থেকে রাজধানীর নতুন বাজারের প্রধান সড়কে অবস্থান নেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এতে কুড়িল থেকে রামপুরাগামী ও রামপুরা থেকে কুড়িল খিলক্ষেতগামী উভয় পাশের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে সড়কে অবস্থান নেয়া তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায় ছাত্রলীগের ভাটারা থানার নেতাকর্মীরা। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ছোড়া হয় ইটপাটকেলও। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। দিনভর শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধের পর বিকাল পাঁচটার পর যানচলাচল স্বাভাবিক হয় প্রগতি সরণি সড়কে। 

এদিকে সকাল থেকেই রামপুরা, বাড্ডা, মালিবাগ এলাকায় অবরোধ করেন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার আশঙ্কায় তারা বিভিন্ন লঠিসোটা নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। এতে করে বাড্ডা লিংক রোড থেকে রামপুরা ও মালিবাগ চৌধুরী পাড়া এলাকা অচল হয়ে পড়ে। 
সকাল সাড়ে ১০টায় মেরুল বাড্ডায় ক্যাম্পাসের সামনের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা রামপুরাগামী ও নতুন বাজারগামী সড়কে দড়ি টেনে সড়ক অবরোধ করেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকায় যান চলাচল। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষর্থীদের সঙ্গে ইউআইইউ, স্টেট ইউনিভার্সিটিসহ আশপাশের স্কুল-কলেজের শত শত শিক্ষার্থী একসঙ্গে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা কোটা সংস্কারের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেন। 
বেলা ১২টা থেকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ইম্পিরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, খিলগাঁও মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। বিকাল পর্যন্ত তারা সড়কে অবস্থান নেয়ায় রামপুরা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পুরো সড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। 
মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও সড়ক অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। অনেকে স্কুল ড্রেস পরে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ফয়জুর আইডিয়াল ইন্সটিটিউটিউশন, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে রামপুরা, মালিবাগ এলাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। 
এসব সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘যে হাত ছাত্র মারে, সেই হাত ভেঙে দাও ঘুরিয়ে দাও’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, ‘তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। 

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে ধানমণ্ডিতে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শতশত শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ ও মিছিল নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে ওই এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা কলেজের সামনে ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। দিনভর চলে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ। 
দুপুর ১টার দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বরে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। ফলে আরামবাগ, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকা অচল হয়ে পড়ে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সেখানে দু’টি ট্রেন আটকে যায়। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মহাখালী পুলিশ বক্সের সামনে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো মহাখালী এলাকা। এছাড়া পুলিশ বক্সের সামনে দু’টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের সঙ্গে আশপাশের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। বেলা দেড়টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকশ’ ছাত্রী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শন্তিনগর মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর ১৪ নম্বর মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বঙ্গবন্ধু কলেজ, মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে এসে সড়কে বসে পড়েন। এতে দুইদিকের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজি (বিইউবিটি), মিরপুর কমার্স কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা স্টেট কলেজ, ভাসানটেক সরকারি কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চারদিকের সড়ক বন্ধ করে দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারের সমর্থক কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে তাদের বেলা একটার দিকে সরিয়ে দিয়েছেন। পরে ওই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার থেকে উত্তরার হাউজবিল্ডিং থেকে রাজলক্ষ্মী পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আইইউবিএটি, শান্ত মারিয়াম, উত্তরা, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল, নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীরা। এতে করে বিমানবন্দর সড়ক অচল হয়ে পড়ে। 
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর আগারগাঁও মোড়ে অবস্থান নেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৫টার দিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা শুরু করে তারা। এ সময় ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’সহ অন্যান্য স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ।  এতে উপস্থিত যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফার্মগেট থেকে ছাত্রলীগের একটি দল খামারবাড়ী অভিমুখে স্লোগান নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় খামারবাড়ী মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি জমায়েত দেখলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। লাঠি নিয়ে ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে মেট্রোরেলের স্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেও ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠি নিয়ে আন্দোলনকারীদের পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে মেট্রোরেল পুলিশের সদস্যরা ছাত্রলীগ কর্মীদের স্টেশন থেকে বের করে দেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আশ্রয় নেয়া আন্দোলনকারীরাও স্টেশন থেকে বের হয়ে যান। ঘটনার পর এপিবিএন’র একটি টিম স্টেশনে মোতায়েন করা হয়।
দুপুর ১২টার দিকে বনানী এলাকায় প্রাইম-এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে বনানী এলাকায় সম্পূর্ণ যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক অবরোধ করে  শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার ও হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে গুলিবিদ্ধ ৪ শিক্ষার্থী: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও সরকার দলের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অনেকে। গতকাল বিকালে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বিকাল ৩টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলায় বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তাদের রুখতে স্থানীয় দক্ষিণ মহানগর যুবলীগ নেতাকর্মীদের শোডাউন দিতে দেখা যায়। যুবলীগের একটি মিছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এলে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধাওয়া করে। শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে এলে কোর্ট প্রাঙ্গণের ভেতর থেকে গুলি করা হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ শিক্ষার্থী আহত হন। গুলিবিদ্ধ ৪ জন হলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ ব্যাচের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস জামান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৬ ব্যাচের নাসিম ও কবি নজরুল কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী হাসিব। তাদেরকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ছুরিকাঘাতে তায়াফ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী আহত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এদিকে ৪টা ২০ মিনিট পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাঁতীবাজার মোড়ে অবস্থান নেন। এসময় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের দিকে যুবলীগের একটি বড় গ্রুপের উপস্থিতি বুঝতে পেরে শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। 

সলিমুল্লাহ মেডিকেলেও ছাত্রলীগের তাণ্ডব: কোটা সংস্কারের দাবি ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ডাকা বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় অন্তত ৬-৭ জন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগের হুমকিতে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী হল ছাড়ছেন বলে জানা গেছে। দুপুর ১২টার পর আন্দোলনে অংশ নিতে কলেজ গেটের সামনে এলে তাদের আটকে দেন শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের ওপর তারা হামলা চালান এবং এতে কয়েকজন আহত হন। হামলায় এক নারী শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায়। এদিকে ছাত্রলীগের হুমকিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই হল ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলেও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে। এ হামলার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। লিখিত অভিযোগে ৭ জন হামলাকারীর বিচার দাবি করা হয়েছে। তারা হলেন- মেডিকেল কলেজের ৪৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তন্ময় দাস, শাকের আহমেদ ও সাব্বির আহমেদ, ৪৫তম ব্যাচের সাদেকুল ইসলাম এবং ৪৯তম ব্যাচের জিহাদুল ইসলাম নিশান ও সাফওয়ান আকাশ। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, গতকাল রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বিক্ষুব্ধ নারী শিক্ষার্থীরা রোকেয়া হলে এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে মারধর ও তার কক্ষ ভাঙচুর করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগে বর্ণালী ঘোষ বর্ণা নামে এই ছাত্রলীগ নেত্রী সোমবার শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। এ সময় হল ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইন নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে এলে তার উপরও চড়াও হয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘খুনি’ ‘খুনি’ বলে ধাওয়াও দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় রাত বারোটার পর তাদের হল থেকে বের করে আনা হয়।

সারাদেশে গায়েবানা জানাজা
পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলা ও গুলিবর্ষণে নিহতদের গায়েবানা জানাজা পড়বেন শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুর ২টায় রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাযা ও কফিন মিছিল’ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এছাড়া সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলায় জেলায় গায়েবানা জানাযা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকায় অবস্থানরতদের সকলে রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে আসারও আহ্বান করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

উত্তাল রাজশাহী, রাবিছাড়া ছাত্রলীগ, বিজিবি মোতায়েন
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষানগরী রাজশাহী। মঙ্গলবার বেলা ৩টা থেকে নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দখলে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষে পাওয়া গেছে পিস্তল, রামদা ও মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ জিনিসপত্র। কোটা সংস্কারে চলমান আন্দোলনে রাজশাহীর অন্তত ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার সাধারণ শিক্ষার্থী মাঠে নামেন। দুপুর থেকে নগরীর জিরো পয়েন্টে জড়ো হতে থাকেন। বেলা সাড়ে ৩টায় রাজশাহী কলেজ, নিউ ডিগ্রি কলেজ, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক মিছিল নিয়ে সাহেব বাজার এলাকায় আসেন। বিকাল ৪টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক মিছিল নিয়ে যোগ দেন তাদের সঙ্গে। 

জাতীয় পতাকা হাতে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এতে পুরো রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। রুয়েট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নগরীর বিনোদপুর, কাজলা এলাকা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহিল গালিব ও তার কয়েকজন অনুসারী। পৌনে ৪টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে যান তারা। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজ রহমান বাবুর রুম থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি দেশীয় পিস্তল পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও সেখান থেকে বেশকিছু দেশি অস্ত্র রামদা উদ্ধার করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় দ্বিতীয় দফায় বঙ্গবন্ধু হলে ভাঙচুরকালে এসব অস্ত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অগ্নিসংযোগ করা হয় রাবি’র বঙ্গবন্ধু হলে। লাঠি, পাইপ ও জাতীয় পতাকা হাতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আখতার হামিদ খান জানান, ৩টা ৪০ মিনিটে রাবি বঙ্গবন্ধু হলে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের দু’টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে ১৮-১৯টি মোটরসাইকেল, বেশকিছু বাইসাইকেল ও আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে যায়। তবে কেউ হতাহত হননি। এদিন বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ক্যাম্পাসে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশৃঙ্খলা রোধে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা বঙ্গবন্ধু হলের নিচতলায় আগুন দিয়েছেন। এরইমধ্যে আগুন নেভানো হয়েছে। রাবি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফিরলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছাত্রলীগে পদত্যাগের হিড়িক: সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের হিড়িক লেগেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদধারী সংগঠনটির নেতারা পদত্যাগ করেন। একইসঙ্গে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা মন্তব্যেরও প্রতিবাদ করেন। গত রোববার রাত থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রলীগ নেতা পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের অনুসারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকেও গণহারে লিভ নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। গত রোববার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের পাঁচজন নেতা পদত্যাগ করেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আরও অন্তত ১৮ জন পদত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- জান্নাতুল মাওয়া রোকেয়া হলের সহ-সভাপতি, হাসিবুল হাসান হাসিব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, জুয়েনা আলম মুন কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক, জেবা সায়ীমা বিজ্ঞান উপ-সম্পাদক, মেহেরুন্নিসা মিম নাট্য ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এবং মনিরা তিশা আইন সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক আমরিন জান্নাত তাইরু, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম হৃদয়, মেহেদী হাসান কার্যনির্বাহী সদস্য, জসীম উদ্দীন হল ছাত্রলীগের মো. রাফিউল ইসলাম রাফি বিজয় একাত্তর হল শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপ-সম্পাদক শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত, শামসুন্নাহার হল ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, সার্জেন্ট জহরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ওয়াসিক, আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম এবং রাসেল হোসেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, লেদার ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী ইমাম জুয়েল, আইন অনুষদের সাহিত্য সম্পাদক রূপক কুমার নায়ক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক রাতুল আহমেদ ওরফে শ্রাবণ, রোকেয়া হল শাখার সহ-সভাপতি তামান্না রহমান, শামসুন্নাহার হল শাখার পাঠাগার বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, ফজলুল হক মুসলিম হল শাখার সদস্য আবদুল্লাহ আল মুবিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার বিজ্ঞান বিষয়ক উপ-সম্পাদক জেবা সায়ীমা, কলাভবন ছাত্রলীগের ১নং সহ-সম্পাদক মো. মুহাইমিনুল ইসলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও অর্ধশতাধিক নেতা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন- রিপনুল ইসলাম রবিন, শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আফরিন আলম রিমি, শেখ রাসেল হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ সামি, খাদিজা জুঁই, সিদরাতুল মুনতাহা, শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ইমরান আহমেদ, নিয়ামুল আরফ প্রমুখ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ থেকে ৬ জনের পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান সামি ও রসায়ন বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি তাওসিফ কবির, মনোবিজ্ঞান বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি রনি সরকার ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান নোমান এবং শিঞ্জন বসাক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধশতাধিক নেতাও ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন গণহারে নেতাদের পদত্যাগের বিষয়ে জানান, একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা পদত্যাগের বিষয়টি যাচাই করছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বর্জনের ঘোষণা দেন। এমনকি তাদের বিভাগভিত্তিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপ থেকেও রিমুভ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d