Hot

টালমাটাল ব্যাংকিং খাত

♦ ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা ♦ কাটেনি ১০ ব্যাংকের সমস্যা ♦ একাধিক এমডির পদত্যাগ ♦ সমস্যা আরও বাড়বে একীভূতকরণে

দেশের ব্যাংক খাত নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। একের পর এক দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আমানতকারীদের জমা করা টাকা ফেরত দিতে পারছে না অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। মূলধন ঘাটতি, লাগামহীন ঋণখেলাপি এবং তহবিল সংকটে পুরো খাতটিই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূতকরণের পথে হাঁটলেও খাতসংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এতে সমাধান না হয়ে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তারা মনে করছেন, জোর করে একীভূত করা ঠিক হবে না, এতে ভালো ফল মিলবে না। এদিকে ব্যাংকিং খাত নিয়ে তীব্র অসন্তোষ চলছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। গত ৯ মাসে ব্যাংকগুলো কোনো ব্যবসায়ীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেনি বলে জানিয়েছেন তারা। গভর্নর বলেছিলেন, টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক বাঁচানো হবে না। তবুও অনিচ্ছাকৃতভাবে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দিতে হয়। তবুও সংকট কাটেনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের পক্ষে আমি। কিন্তু জোর করে করা ঠিক হবে না। একটা ব্যাংকের ব্যালেন্সশিট আরেকটা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করবে। দুই ব্যাংকের কার্যক্রম মিলিত হবে। সুতরাং এগুলো জোর করে করানো ঠিক নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, শরিয়াহভিত্তিক দুর্বল ছয়টি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করা হবে। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একীভূতকরণের তালিকায় রয়েছে-সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ব্যাংকগুলোর ফরেনসিক অডিট শেষ হয়নি, ক্ষতি নিরূপণ হয়নি, ভ্যালুয়েশন হয়নি। ব্রিজ ব্যাংকের আওতায় কোন ব্যাংক ফেলা হবে-এই ধাপগুলো বাকি আছে। একীভূত করে বড় ব্যাংক করাকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু দুটি নেগেটিভ যোগ করলে একটি বড় নেগেটিভ হবে। এ ছাড়াও চরম খারাপ অবস্থায় থাকা ২০টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ৮৩ দশমিক ১৬ শতাংশ খেলাপি। ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালার কারণে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এই ঋণবোঝা ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনাকে করেছে প্রায় অসম্ভব। সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহকদের জমা রাখা অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকের হিসাব শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে চলমান সংকটের কারণে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এমডি পদত্যাগ করেছেন। সংকটের গভীরতা বোঝা যায় ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) পদত্যাগের ধারা দেখেও। সর্বশেষ গত বুধবার ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘কাজ করার মতো পরিবেশ নেই, তাই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি।’ ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেন, ‘কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা এতটাই নাজুক যে সেগুলো আর বাঁচানো সম্ভব হবে না।’ তার এ বক্তব্য আমানতকারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। অনেকেই ব্যাংক থেকে হুড়োহুড়ি করে টাকা তুলে নিতে থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি ব্যাংককে জরুরি তহবিল ধার দেয়। যদিও গভর্নর জানিয়ে দেন, টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক বাঁচানো হবে না। তবুও অনিচ্ছাকৃতভাবে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দিতে হয়। তবুও সংকট কাটেনি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত নয় মাস ধরে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের সহায়তা করছে না। ফলে অনেক শিল্পোদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকেই নতুন করে গড়া প্রতিষ্ঠান তহবিলের অভাবে চালু করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীদের সহায়তা করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদানে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির গভর্নরকে চিঠি দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে সহায়তা না পেয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে ব্যবসা গোটানোর উপায় বের করে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d