টিকিট ইস্যুতে ৩ হাজার বাংলাদেশীর হজযাত্রা অনিশ্চিত: ১১ ব্যাংকে আটকা ৫৬ কোটি টাকা
শেষ সময়ে প্রায় তিন হাজার হজপ্রত্যাশীর হজযাত্রায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ১১টি ব্যাংকের গাফিলতির কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ব্যাংকগুলো টিকিট কেনার জন্য পে-অর্ডার ইস্যু করছে না বলে ধর্মমন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
গত ৯ মে থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের হজ ফ্লাইট। গতকালের চারটি ফ্লাইটসহ মোট ১২৮টি ফ্লাইটে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৩০০ জন হজ পালনে সৌদিতে পৌঁছেছেন। আগামী ১২ জুন শেষ হবে ফ্লাইট। কিন্তু হজের শেষ সময় এসে প্রায় তিন হাজার হজপ্রত্যাশীর হজযাত্রায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় হজযাত্রী প্রতি দুই লাখ ৫ হাজার টাকা করে টাকা জমা দিতে হয়। সেই টাকা থেকে জনপ্রতি এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা প্লেনের টিকিট বাবদ রাখা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী মোট ২,৮৯৬ জন হজযাত্রীর বিমানের টিকিটের জন্য ৫৬ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টাকা ব্যাংকগুলোতে জমা রয়েছে। এখন বিমান টিকিট কেনার সময় এ টাকা ব্যাংক থেকে ছাড় করার কথা। কিন্তু ১১টি ব্যাংক এসব হজযাত্রীর বিমানের টিকিট কাটার টাকা আটকে রেখেছে। এসব ব্যক্তির জমা করা টাকা এয়ারলাইন্সের বাবদ পে-অর্ডার করার জন্য কয়েক দফা চিঠি দিলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো সেই অর্থ ছাড় করছে না। ফলে সব প্রস্তুতি থাকার পরও এসব হজপ্রত্যাশীর বিপরীতে বিমানের টিকিট ইস্যু করতে পারছে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলো।
গত মঙ্গলবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অণুবিভাগের যুগ্মসচিব মনজুরুল হক চিঠি দিয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছেন। চিঠিতে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ অর্থ ছাড় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। পে-অর্ডার ইস্যু না করা ১১টি ব্যাংক হলো-আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাজযাত্রীর পে-অর্ডার ইস্যু করেনি ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংক মোট ৬১৪ জন ব্যক্তির টাকা আটকে রেখেছে। এরপর প্রিমিয়ার ব্যাংক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৮৬ জনের টাকা আটকে রেখেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মোট ২৮৯৬ জন হজযাত্রীর বিমানের টিকিটের জন্য মোট ৫৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার মতো আটকে রয়েছে। এই টাকা ছাড় করার জন্য কয়েক দফা চিঠি দিলেও টাকা ছাড় করেনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। এতে হাজযাত্রীদের ভিসাসহ সব ব্যবস্থা থাকলেও এখন তাদের টিকিট কাটা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আজকের মধ্যে এ টাকা ছাড় করার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অন্যথায় এসব হাজযাত্রীর চলতি বছর হজে যেতে কোনো সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দায় নিতে হবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, যে সব হজযাত্রীর টিকিট কেনার জন্য পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়নি সে সব হজযাত্রীর হজ এজেন্সির সাথে সমন্বয় করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসগুলোকে গত ২৬ মের মধ্যে পে-অর্ডার সম্পন্ন করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত অনেক হজযাত্রীর বিমান টিকিট ক্রয়ের পে-অর্ডার ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু করা হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ৩০ মের মধ্যে এয়ারলাইন্স বরাবরে পে-অর্ডার ইস্যু করার জন্য পুনরায় বলা হলো। একই সাথে হজযাত্রীদের বিমান টিকিট কেনা শেষ করার জন্য হজ এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দেয়া হলো। এর ব্যত্যয় হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও হজ এজেন্সিকে বহন করতে হবে বলে জানানো হয় মন্ত্রণালয় থেকে। এ বিষয়ে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, ব্যাংকগুলোর দায়িত্বে অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। তাদের উচিত দ্রুত এর সমাধান করা। তবে গত একদিনে পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হয়েছে বলে তিনি জানান।