Science & Tech

টুডে অ্যান্ড টুমরো আইল্যান্ড

ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ বেরিং সাগরের বুকে দুটো দ্বীপ। এ দুটো দ্বীপের নাম, বিগ ডায়োমিড আইল্যান্ড এবং লিটল ডায়োমিড আইল্যান্ড। দুটো দ্বীপের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান মাত্র ৫ কিলোমিটার। কিন্তু দ্বীপ দুটো রয়েছে দুই দেশের দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন টাইম জোনে।

এদের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ২১ ঘন্টা। ছোট দ্বীপে যখন রোববার বিকেল তিনটা বাজে, বড় দ্বীপে তখন বাজে সোমবার দুপুর বারোটা। এর কারণ হলো, এই দ্বীপ দুটো রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ডেট লাইন বা আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার দুই পাশে। 

ইন্টারন্যাশনাল ডেট লাইন হচ্ছে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত একটি কাল্পনিক রেখা।

এর ভৌগোলিক অবস্থান হলো প্রশান্ত মহাসাগরের উপর, ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ বরাবর। কিন্তু কিছু কিছু স্থানে ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখা জনবহুল দ্বীপের উপর পড়েছে, সেখানে তারিখ রেখাটিকে একটু পাশ কাটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ১৮৮৪ সালে ২৬টি দেশের সম্মতিতে এই তারিখ রেখাটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই রেখাটির মাধ্যমেই ক্যালেন্ডারের একটি তারিখকে পরবর্তী তারিখ থেকে পৃথক করা হয়।

সেজন্য অনেকে মজা করে, বড় দ্বীপের নাম দিয়েছে টুমরো আইল্যান্ড, তারা ছোট দ্বীপটিকে বলে ইয়েস্টারডে আইল্যান্ড। ‌এই দ্বীপ দুটোর অবস্থান বেরিং প্রণালীতে। এই প্রণালীর পশ্চিম দিকে রয়েছে রাশিয়ার সাইবেরিয়া এবং পূর্ব দিকে রয়েছে আমেরিকার আলাস্কা। দ্বীপ দুটোর অবস্থান বেরিং প্রণালীর মাঝ বরাবর। ‌বিগ ডায়োমিড আইল্যান্ড পড়েছে রাশিয়ার ভাগে আর লিটল ডায়োমিড আইল্যান্ড আমেরিকার অংশ।
বিগ ডায়োমিড আইল্যান্ডে রাশিয়ার স্থায়ী আবহাওয়া কেন্দ্র এবং সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। জনসাধারণের প্রবেশ সেখানে নিষেধ। লিটল ডায়োমিড আইল্যান্ডে আলাস্কার সামান্য সংখ্যক আদিবাসী মানুষ বাস করে। সামুদ্রিক মাছ শিকার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। 

শীতকালে বেরিং প্রণালীতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে নেমে যায়। সেই সময় এই দুই দ্বীপের মাঝে বরফ জমে সংযোগ সেতু তৈরি হয়। ‌তখন বরফের সেতুর উপর দিয়ে হেঁটেই এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে চলে যাওয়া সম্ভব। যদিও এ ব্যাপারে আমেরিকা এবং রাশিয়া দুই তরফ থেকেই নিষেধ রয়েছে। এসব বাধা না থাকলে হেঁটেই মানুষ ‘এক দিন’ থেকে ‘অন্য দিনে’ চলে যেতে পারত। 

প্রসঙ্গত বলে রাখি, তুষার যুগে পুরো বেরিং প্রণালীই বরফে ঢাকা ছিল। তখন এশিয়া মহাদেশ এবং আমেরিকা মহাদেশ এখানে স্থলভাগে সংযুক্ত ছিল। নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন, বরফে ঢাকা বেরিং প্রণালী হয়েই আদিম মানব এশিয়া মহাদেশ থেকে পায়ে হেঁটে আমেরিকা মহাদেশে প্রবেশ করেছিল। বলাই বাহুল্য, তখন মানুষের অবাধ চলাফেরায় কোন রকম বিধি নিষেধ ছিল না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button