International

ট্রাক্টরকে কামানের রূপ দিয়ে আবারো দিল্লি অভিযানে কৃষকরা

নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে কৃষকরা আবার ভারতের দিল্লি পৌঁছানোর চেষ্টা করলেন। তাদের ওপর আবার সমানে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হলো।

কৃষক বিক্ষোভে নতুন মোড়। রীতিমতো রণসাজে সজ্জিত হয়ে কৃষকরা আবার দিল্লি অভিযান শুরু করেছেন। রণসাজ মানে তারা ট্রাক্টরগুলোকে প্রায় সাঁজোয়া কামানের রূপ দিয়েছেন। তাদের সাঁজোয়া যান মানে ট্রাক্টরের মধ্যে বসানো জেসিবি মেশিন, যা দিয়ে মাটি কাটা হয়। ড্রাইভার বা অপারেটরের কেবিন লোহার পাত দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। রাবার বুলেট, প্যালেট গানের গুলি ও টিয়ার শেলের হাত থেকে বাঁচতে। ওই জেসিবি মেশিন দিয়ে তারা পুলিশের অবরোধ গুঁড়িয়ে দিয়ে এগোতে চান।

প্রত্যেক কৃষক মুখে জড়িয়ে নিয়েছেন বেশ কয়েকটা কাপড়ের টুকরো। সেগুলোও ভিজিয়ে নেয়া হয়েছে। এই দেশী পদ্ধতিতে টিয়ার শেল মোকাবিলা করা হচ্ছে। তাদের সাথে রয়েছে বিপুল পরিমাণে বালির বস্তা। তা দিয়ে দুটি কাজ হবে। টিয়ার শেল পড়লেই তা বালির বস্তা ফেলে নিস্ক্রিয় করে দেয়া যাবে, আর যেসব জায়গায় রাস্তার মাঝখানে বা পাশে মাটি কেটে ট্রাক্টরের যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে, সেখানে বালির বস্তা ফেলে তারা চলে যেতে পারবেন।

বুধবার সকালে হাজার হাজার কৃষক পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শম্ভু সীমানায় উপস্থিত হন। তারপরেই হরিয়ানা পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার শেল ছোঁড়া শুরু করে।

সীমানায় মুখোমুখি দু’পক্ষ
একদিকে হরিয়ানা পুলিশ, অন্যদিকে কৃষকরা। মাঝখানে ব্যারিকেড, কাঁটাতারের বেড়া। কৃষকদের সাথে ট্রাক্টর, মাটি টাকার মেশিন, অবরোধ সরিয়ে দেয়ার যন্ত্র। আর নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে জলকামান, বুলডোজার, হাতে বন্দুক, টিয়ার শেল, পেরেক লাগানো চাদর।

দুপুরের পর শুরু হলো একের পর এক টিয়ার শেল ফাটানো। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ভরে গেল। শুরু হলো কৃষকদের ছোটাছুটি।

হরিয়ানা পুলিশের বক্তব্য, কৃষকরা যুবকদের হাতে লাঠি, পাথর, লোহার রড ও মাস্ক তুলে দিয়েছে। লোহার একটা শিল্ড নিয়ে তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণ করতে পারে।

দিল্লির সীমানা বন্ধ
দিল্লির একাধিক সীমানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সকাল থেকে দিল্লির সীমানাতে ব্যাপক যানজট দেখা দিয়েছে। হরিয়ানা থেকে যেসব জায়গা দিয়ে কৃষকরা দিল্লিতে ঢুকতে পারেন, সেখানে পুরো জায়গায় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তায় সিমেন্ট, লোহার ব্যারিকেড, কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হয়েছে। তার সামনে পেতে দেয়া হয়েছে বড় বড় পেরেকের চাদর। অনেক জায়গায় সিমেন্টের মধ্যে পেরেক বসিয়ে রাখা হয়েছে।

আবার আলোচনার প্রস্তাব সরকারের
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা বলেন, ‘চার দফায় আলোচনা হয়েছে। আমি আবার আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিচ্ছি। সরকার এমএসপি বা ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যসহ যেকোনো বিষয়েই আলোচনা করতে রাজি আছে। এর আগে সরকার প্রস্তাব দিয়েছিল, তারা ভুট্টা, তুলা ও তিন ধরনের ডাল ন্যূনতম সংগ্রহমূল্যে আগামী পাঁচ বছর কিনবে।’

কিন্তু কৃষকরা এই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে বলেছে, তারা এমন বাছাই করা কয়েকটি পণ্য নিয়ে আলোচনা করতে উৎসাহী নয়।

কী হবে?
কৃষি বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক হরবীর সিং বলেন, ‘এই আন্দোলনের কী হবে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। কৃষকরা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। তারাও নির্বাচনের আগে সরকারকে চাপ দিয়ে দাবিপূরণ করতে চান। সরকারও দাবি মানার ক্ষেত্রে খুব বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে না।’

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা মনে করছেন, ‘সব পক্ষই রাজনীতি করছে। সরকার কালক্ষেপ করছে। তারা চাইছে, কৃষকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাক, দিল্লির কাছাকাছি তারা যেন না আসতে পারে। কারণ, দিল্লিতে এলে সরকারের ওপর চাপ অনেকটাই বেড়ে যায়। আবার কৃষকরাও জানেন, এখন ভোটের আগে কিছু হওয়ার নয়। তা সত্ত্বেও তারা আন্দোলনের জন্য এই সময়টা বেছে নিয়েছেন। কারণ, ভোটের আগে চাপ দিয়ে তা-ও ভবিষ্যতে দাবি আদায় করা সম্ভব, ভোটের পর সরকার আর তাদের কথা শুনতে চাইবে না।’

শরদ ও হরবীর দুজনেই মনে করেন, ন্যূনতম সংগ্রহ মুল্যকে আইনি করাই হলো কৃষকদের সবচেয়ে বড় দাবি। সরকার এই দাবি কিছুতেই মানতে চায় না। এই অচলাবস্থা তখনই কাটবে, যখন এক পক্ষ পিছিয়ে যাবে। এই মুহূর্তে তার ইঙ্গিত নেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button