Uncategorized

ট্রানজিট সুবিধার খেসারত ৪৭০ কোটি

  • চারলেনের প্রকল্পে ক্ষতি হয় ১৯৭৯ সালের সেচ প্রকল্প
  • ২০২১ সাল থেকে বন্ধ সেচ কার্যক্রম
  • নতুন সেচ প্রকল্প চালু করতে ব্যয় হবে ৪৭০ কোটি টাকা
  • নানা দেন-দরবারেও কৃষি মন্ত্রণালয়কে ক্ষতিপূরণ দেয়নি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে কলকাতার নিরাপদ যানবাহন চলাচলে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আখাউড়া স্থলবন্দরকে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ভারতীয় কঠিন শর্তের ঋণে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাংলাদেশের চেয়েও বেশি প্রয়োজন ভারতের। কিন্তু এ প্রকল্পটি করতে গিয়ে ১৯৭৯ সালের সেচ প্রকল্প ধ্বংস করা হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জোর আপত্তি সত্বেও। 

সাধারণত এক প্রকল্পের কারণে অন্য প্রকল্পের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নীতি রয়েছে। কিন্তু নানা দেন দরবারের পরও ক্ষতিপূরণ না পেয়ে নিরুপায় হয়ে কৃষিতে সেচ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে প্রায় ৮ বছর পর নতুন করে সেচ প্রকল্পটি অনুমোদন নিতে হচ্ছে। নতুন প্রকল্পে খরচ হবে ৪৭০ কোটি টাকা। আগামী ২৩ ডিসেম্বর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে এটি হয়েছে। এখন আমাদের সেচ ব্যবস্থা চালু রাখার স্বার্থেই এটি নিজেদের টাকায় করতে হচ্ছে। আমাদের দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের বড় ভুল না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। 

ভারতীয় ঋণের টাকায় ট্রানজিটের এ সড়কটি নির্মাণ করতে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। ২০০ কোটি ডলারের ভারতীয় দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) প্রকল্প তালিকায় এ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত। এ প্রকল্পে এলওসি থেকে পাওয়া যাবে প্রায় ২ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার নিজে দেবে। যদিও পরবর্তীতে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর প্রকল্পটির ভারতীয় ঠিকাদার বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। এ প্রকল্পটির দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান নৌ প্রটোকলের আওতায় ট্রানজিট নেয় ভারত। ট্রানজিট পথটি হলো কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে; আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কপথে গিয়ে আগরতলা পৌঁছানো হয়।

ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে ১৯৭৮-৭৯ সালে আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প নামে নির্মিত হওয়া প্রকল্পটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়। চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ব্যহত হয় আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো-ইরিগেশন প্রকল্পের সেচ কার্যক্রম। এটি এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। ওই সময় কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এজন্য ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়। কিন্তু সায় দেয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। অনেক দেন দরবারের পর প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়কেই নতুন করে দিতে চাপ দেওয়া হয়। এটি সচল করার জন্য সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৪৭০ কোটি টাকার প্রকল্পটি আগামী ২৩ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের চতুর্থ একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি।

বিএডিসি কর্মকর্তারা বলছেন, আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কুলিং কাজে ব্যবহৃত গরম পানিকে ঠান্ডাকরণের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিএডিসি ১৯৭৮-৭৯ সালে আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। একই সময়ে নরসিংদীর পলাশ এলকায় অনুরূপ একটি সেচ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৯০-৯৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য উক্ত দুটি প্রকল্প একিভুত করে “আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো-ইরিগেশন প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হয়, যা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায় বাস্তবায়ন শেষে জুন, ২০২০ সময়ে “আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো-ইরিগেশন প্রকল্প” নামে ৫ম পর্যায় শেষ হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ২৪ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৬২ টন ফসল উৎপাদন করা হয়।  

তবে সমস্যা শুরু হয় কৃষির সেচ ব্যবস্থার এ প্রকল্পটিকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কুলিং রিজার্ভার ভরাট করার মাধ্যমে। পরবর্তীতে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার আশুগঞ্জ নদী বন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার ফলে বিএডিসি’র সেচ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্প এলাকায় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেচ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উদ্ভুত সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে বিএডিসি নতুন করে আশুগঞ্জ-পলাশ সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান  মো. ফেরদৌস রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সেচ ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার কারণে আমরা বারবার ওই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বারবার উচ্চ পর্যায়ে মিটিং হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি। 

এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি, প্রথমে তারা এটি ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু আশ্বাস দিয়েও কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ লিখিত কোনো ডকুমেন্টস হয়নি। কিন্তু এক পর্যায়ে যখন তাদের বোঝানো হলো যে আমাদের কৃষির ক্ষতি হচ্ছে, তখন তারা আমাদের জায়গা ছেড়ে দিলে আমরা এ প্রকল্পটি হাতে নেই।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, এটি যেহেতু কৃষির গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। ভারতে সুবিধা দিতে গিয়ে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের স্বার্থেই প্রকল্পটি নিতে হয়েছে। 

ফেরদৌস রহমান বলেন, কৃষির সেচ ব্যবস্থা নষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু সেটি কোনো চুক্তির মাধ্যমে করা হয়নি। 

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র আরও বলছে, এ প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো ব্যাহত আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো-ইরিগেশন প্রকল্পের সেচ কার্যক্রম সচলকরণ। আশুগঞ্জ এবং ঘোড়াশালের থার্মাল পাওয়ার-প্ল্যান্ট থেকে প্রাপ্ত যথাক্রমে ১১০০ ও ৮০০ কিউসেক পানি শীতলীকরণের মাধ্যমে ২১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে ১ লাখ ৫ হাজার ৫০ টন ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখা। 

এছাড়া এ প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, ২০২০সালের জুনে সমাপ্ত আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন (৫ম পর্যায়) প্রকল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা; ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার করে স্থায়ী ও টেকসই সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদন নিশ্চিতকরণ; সেচ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য শস্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে স্থানীয় কৃষক/কৃষাণীদের নিয়োজিত করার মাধ্যমে  আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে আমাদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে। এটি আমাদের দুর্বলতা যে আমরা আমাদের দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে পারিনি। আমাদের দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আমাদের মূলত এ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিই হয়েছে। আমাদের এটি নিশ্চিত থাকতে হবে যে ভবিষ্যতে যাতে আমরা এ ভুল আর না করি।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এটি আমাদের নিজেদের স্বার্থেই করতে হবে। আগের সরকারের যেসব নীতি নেওয়া হয়েছে। সে আলোকে কোনো ক্ষতিপূরণ নেওয়া অবাস্তবই মনে হয়। 

ড. মুস্তফা কে মুজেরি মনে করেন, এ প্রকল্পটি আমরা এখন যদি না করি আমাদের সমস্যাগুলো আরও বেশি বাড়বে। গত বছর বন্যা হলো এটি বড় কারণ ছিল। দুই দেশের পানি সমস্যা এখনও অচলাবস্থার মধ্যেই আছে। কারণ পানিচুক্তি থেকে আরম্ভ করে নদীর অনেক চুক্তিতে এখনও ভারতেরই কোনো আগ্রহ নেই। আমাদের নিজেদের ক্ষতি যাতে লাঘব হয়, এটি আমাদেরই করতে হবে। এটার অন্য কোনো অপশন নাই।

মেঘনা নদী থেকে আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবহৃত ১ হাজার ২৩৩ কিউসেক এবং শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবহৃত ৯৬৬ কিউসেকসহ মোট ২ হাজার ১৯৯ কিউসেক পানি নির্গত হয় এবং এ পানি কুলিং কাজে ব্যবহারের পর পুনরায় নিষ্কাশন নালার মাধ্যমে মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে পতিত হয়। আশুগঞ্জ ও ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি কুলিং রিজার্ভারের মাধ্যমে সেচের উপযোগী করে বিভিন্ন সেচ অবকাঠামোর মাধ্যমে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় সেচের পানি সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d