Bangladesh

ট্রান্সফরমার বিকল, ৪ দিন ধরে অন্ধকারে কালীগঞ্জের মানুষ, ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানায় উৎপাদন

বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মানুষ। চার দিন ধরে বিদ্যুৎ মিলছে চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ। ২৪ ঘণ্টায় ৩-৪ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানায় উৎপাদন। একটি গ্রিড সাবস্টেশন বিকল হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করতে আরও সাত দিন সময় লাগতে পারে।

কালীগঞ্জে বিদ্যুৎ সংকট শুরু হয় গত রোববার সন্ধ্যায়। ঘূর্ণিঝড় রিমালে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা ৬৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন উপজেলার অনেক এলাকা। পরে কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। স্থানীয়রা বলছেন, ২৪ ঘণ্টায় ৪ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। প্রচণ্ড গরমে ঘরে টেকা যাচ্ছে না। বৃদ্ধ ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মোবাইল ফোনও চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।  বৃহস্পতিবারও পরিস্থিতি এমন ছিল। দুর্ভোগে অতিষ্ঠ লোকজন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

দুর্ভোগের কারণ

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর (কালীগঞ্জ আঞ্চলিক অফিস) সহকারী মহাব্যবস্থাপক হোসেন জানান, পুরো এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ২৮ মেগাওয়াট, কিন্তু তারা পাচ্ছেন ১০ থেকে ১১ মেগাওয়াট। কারণ ঘোড়াশাল গ্রিডে ১৩২-৩৩ কিলোভোল্টের (কেভি) দুটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার রয়েছে। একটি ১৬ আরেকটি ১২ মেগাওয়াটের। এর মধ্যে ১৬ মেগাওয়াটের ট্রান্সফরমারটি গত রোববার বিকল হয়ে গেছে। ফলে একটি ৩৩ কেভি ফিডারের মাধ্যমে ঘোড়াশাল গ্রিড থেকে কালীগঞ্জে ১০/১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ। তিনি বলেন, ট্রান্সমিটারটি পরিবর্তনের কাজ চলছে।
 
সমাধান কবে
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সদস্য (বিতরণ) রেজাউল করিম বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। পল্লী বিদ্যুৎ ও পিজিসিবি বিকল্প উপায়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। আরেকটি ট্রান্সফরমার আনার চেষ্টা চলছে। এ জন্য সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।
 
চরম ভোগান্তি
কালীগঞ্জ বাজারের অটোরিকশাচালক আবুল ফজল জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় তাঁর অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে না। ফলে তিনি রাস্তায় বের হতে পারছেন না। ঘরে চাল-ডালও নেই। আরিফ হোসেন জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় বাসাবাড়িতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। পানি ট্যাঙ্কে তোলা যাচ্ছে না। যেটুকু সময় বিদ্যুৎ থাকে তাতে মোবাইল ফোনও চার্জ হয় না বলে জানান তিনি। তাই বেশির ভাগ মানুষের মোবাইল ফোন বন্ধ।

কারখানায় উৎপাদন বন্ধ
বিদ্যুৎ না থাকায় বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিল্পকারখানার। এখানে হা-মীম গ্রুপের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক রয়েছে। যেখানে রয়েছে হা-মীম ডিজাইন, ব্রাইট ওয়াশ-১, ব্রাইট ওয়াশ-২ ও রিফাত প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ। গত ৭২ ঘণ্টায় কারখানাগুলো বিদ্যুৎ পেয়েছে মাত্র ১৮ ঘণ্টা। সেটাও একটানা নয়। ৩-৪ ঘণ্টা পরপর ২০ বা ৩০ মিনিট করে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে ডিজেল জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন চালু রাখতে খরচ পড়ছে তিন গুণ। হা-মীম গ্রুপের পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি বিভাগের প্রধান তনুল চক্রবর্তী বলেন, ‘৭২ ঘণ্টায় আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি মাত্র ১৮ ঘণ্টা। সেটাও থেমে থেমে। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষের তিন-চার গুণ খরচ পড়ছে।’ 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button