Trending

ট্রাম্পকে ঘিরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-বিশ্লেষকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হওয়ায় এ দেশের ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের আশা, তৈরি পোশাকের কার্যাদেশের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে পারে।

তারা মনে করছেন, ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর চীনের পোশাক পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তবে সার্বিক পরিস্থিতির সুফল পেতে বাংলাদেশকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির চাপে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়া উচিত নয়। বিশ্ব অর্থনীতিকে অবশ্যই সচল রাখতে হবে এবং ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত দূর করা উচিত।

তা না হলে ট্রাম্পের বিজয়কে উদযাপন করার খুব বেশি কারণ থাকবে না বলেও মনে করেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক পোশাক রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিশটিংগুইশড ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চীন থেকে পোশাকের কার্যাদেশ বাংলাদেশে পাঠানো ছাড়া ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়া থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় ইতিবাচক সুবিধা দেখছি না।’

প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছিলেন।

এবার নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেছিলেন, পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবেন।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতি উদার নাও হতে পারে। তা না হলে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ালে বাংলাদেশে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়বে।’

‘তবে বাংলাদেশের জন্য সুযোগটি গ্রহণ করা বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনা পণ্যের ওপর শুল্কের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।’

তিনি জানান, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প যখন চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন তখন ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পণ্য কেনার ক্ষমতা ও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

তার মতে, ট্রাম্পের সংরক্ষণবাদী বাণিজ্যনীতি বিশ্বমঞ্চে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এর ফলে বৈশ্বিক বিনিয়োগে হতাশা দেখা দিতে পারে।

এ ছাড়াও, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নসহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

‘তবে আশার বিষয়—ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বন্ধে ট্রাম্পের অবস্থান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আনতে পারে। শেষ পর্যন্ত বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে পারে।’

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ায় পোশাকের কার্যাদেশ বাংলাদেশে চলে আসতে হতে পারে।’

তার মতে, চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে চীন থেকে বিনিয়োগ অন্য দেশে চলে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) টানতে পারে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম মনে করেন, চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপে ট্রাম্পের অঙ্গীকারে বাংলাদেশ লাভবান হবে।

গত বছর ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে আট দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি করেছে।

ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল ছিল।

বিজিএমইএ বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১৭ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছিল।

ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে এই পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তিত হয়নি।

২০০৪ সালে মাল্টি-ফাইবার অ্যারেঞ্জমেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে কোনো ধরনের শুল্ক সুবিধা পায়নি বাংলাদেশ।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের আগে চীনা ব্যবসায়ীদের যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে তিন দশমিক শূন্য আট শতাংশ শুল্ক দিতে হতো।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) হংকং মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণা অনুসারে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) সব পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের।

অথচ যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে।

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা থাকলেও পোশাক পণ্যকে এর বাইরে রাখা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d