USA

ট্রাম্পকে তুলাধোনা করলেন কমলা হ্যারিস, এই নারী যা স্পর্শ করেন তাই ধ্বংস হয়ে যায় ॥ ট্রাম্প

আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে  ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা দেবী হ্যারিসের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। ইতোমধ্যেই দলটির প্রয়োজনীয় ডেলিগেটদের সমর্থন পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান এই ভাইস প্রেসিডেন্ট। এরপর বুধবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা করেন ৫৯ বছর বয়সী এই ঝানু রাজনীতিক।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট হিসেবে পরিচিত উইসকনসিনের মিলাওয়াকি শহরে হাজার হাজার সমর্থকের সামনে বক্তব্য রাখেন কমলা। প্রচারের প্রথমদিনই সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে তার রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কঠোর বাক্যবানে তুলাধুনা করেন তিনি। বক্তব্যে ট্রাম্পকে সরাসরি প্রতারকের সঙ্গে তুলনা করেন কমলা।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক একজন কৌঁসুলি এবং দ-প্রাপ্ত এক আসামির মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার ভোট বলে অভিহিত করেন তিনি। তবে কমলার এমন মন্তব্যের আগেই ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে আক্রমণ করে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে ট্রাম্প লিখেন, ‘কমলা যাই স্পর্শ করেন, তাই ধ্বংস হয়ে যায়।’ খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও এএফপির। 
উল্লেখ্য, কমলা হ্যারিসের পক্ষে বাইডেনের সমর্থনের পরপরই ট্রাম্প ও হ্যারিস পরস্পরকে লক্ষ্য করে রাজনৈতিক মন্তব্য করে যাচ্ছেন।
মিলাওয়াকি শহরের একটি হাইস্কুলের জনসভায় দেওয়া বক্তৃৃতায় কমলা বলেন, ‘ট্রাম্প আমাদের দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চান।’ তিনি উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনারা স্বাধীন ও আইনের শাসন আছে এমন দেশে থাকতে চান- নাকি ঘৃণা, ভয় ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ দেশে থাকতে চান ?’ এ সময় হাজার হাজার লোক কমলা, কমলা বলে স্লেøাগান দেয়। 
প্রথম সমাবেশের ভাষণে উদারপন্থি নীতির উল্লেখ করেন হ্যারিস। সেই তালিকায় রয়েছে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ এবং গর্ভপাত সংক্রান্ত বিষয়, দরিদ্র শিশু, ইউনিয়নের অধিকার এবং সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবার মতো একাধিক ইস্যু। তবে হ্যারিস তার ছন্দ ধরে রাখতে পারবেন কি না বিষয়টা এখনো স্পষ্ট নয়।
বাইডেন সরে যাওয়ার পর খুব শীঘ্রই বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার তহবিলের সব ব্যাংক হিসাবের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হ্যারিসের কাছে। সোমবার রাতের মধ্যে হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বেশিরভাগ ডেলিগেটের সমর্থনও লাভ করেন।
আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবির মঙ্গলবার কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী তহবিল নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে।
হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে তারা। এতে বলা হয়, আইনগত দিক থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার তহবিল নিজের দখলে নিতে পারেন না কমলা। 
ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের জেনারেল কাউন্সেল ডেভিড ওয়ারিংটন নির্বাচন কমিশনে এই অভিযোগ দায়ের করেন। যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, বাইডেন নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর পর প্রচার শিবির তাদের কমিটির ‘বাইডেন ফর প্রেসিডেন্ট’ নাম পরিবর্তন করে ‘হ্যারিস ফর প্রেসিডেন্ট’ নামকরণ করতে পারে না। 
ট্রাম্প শিবিরের অভিযোগ, কমলা হ্যারিস নির্লজ্জভাবে বাইডেনের নির্বাচনী তহবিলের অর্থ করায়ত্ত করেছেন। এক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী থেকে আরেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সামান্য কিছু হলেও বেশি আর্থিক অনুদান পেয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে ট্রাম্প শিবিরের আট পাতার অভিযোগনামায়। এতে বলা হয়, নিয়মানুযায়ী কেন্দ্রীয় প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের নির্বাচনে এমন বাড়তি কোনো অবদান রাখা নিষিদ্ধ। ট্রাম্প শিবিরের জেনারেল কাউন্সেল ওয়ারিংটন বলেন, ‘আমেরিকার ইতিহাসে নির্বাচনী প্রচার তহবিলের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘনের পথে হাঁটছেন হ্যারিস।’
হ্যারিসের বিরুদ্ধে মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে রেকর্ড পরিমাণ অবৈধ অভিবাসী আগমন ঠেকাতে ‘ব্যর্থতার’ অভিযোগ তুলে আক্রমণাত্মক প্রচার চালাচ্ছে ট্রাম্প শিবির। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, অপরাধের ঘটনা এবং মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের প্রশাসনের রেকর্ডকে নিশানা করবে ট্রাম্প শিবির। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প কমলা হ্যারিস সম্পর্কে বলেন, ‘উনি একজন উগ্র বাম নেতা কিন্তু এই দেশ চায় না যে একজন উগ্র বাম ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করুক।
ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি বাইডেনের তুলনায় কমলা  প্রতিপক্ষ হিসেবে সহজ হবেন। কারণ জো বাইডেন কিছুটা মূলধারার ছিলেন। কিন্তু কমলা একজন উগ্র বাম নেতা। একইসঙ্গে ট্রাম্প উল্লেখ করেন সেপ্টেম্বর মাসে জো বাইডেনের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ডিবেট করতেও প্রস্তুত। সেপ্টেম্বরেই তিনি কমলার মুখোমুখি হতে পারেন। ট্রাম্পের কথায়, ‘আমি অন্য কিছুতে তো রাজি হইনি। শুধুমাত্র জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে রাজি হয়েছিলাম। তবে আমি এখন ওর (কমালা হ্যারিসের) সঙ্গে ডিবেট করতে চাই। ওর সঙ্গে (বিতর্ক অনুষ্ঠান করতে) কোনো তফাৎ হবে না।’

প্রসঙ্গত, জুন মাসের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে শামিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটা বিতর্ক অনুষ্ঠানে ‘বিপর্যয়কর’ পারফরমেন্সের পর জো বাইডেনের ওপর তার প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করার চাপ বাড়তে থাকে। যদিও প্রাথমিকভাবে তাতে কিছুতেই রাজি হননি বাইডেন। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদল করেন তিনি। 
জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে কমলা ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে প্রার্থিতার দৌড়ে সামনে চলে এসেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। জনমত জরিপগুলোয় রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জোর টক্কর দিচ্ছেন তিনি। বুধবার প্রকাশিত রয়টার্স/ইপসোসের সর্বশেষ জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে গেছেন কমলা।

আগেরদিন গত সোমবার ও মঙ্গলবার এই জরিপ চালানো হয়। যেখানে কমলার প্রতি ৪৪ শতাংশ এবং ট্রাম্পের প্রতি ৪২ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন। রবিবার বাইডেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তার আগে গত সপ্তাহের সর্বশেষ জনমত জরিপে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে এই ২ পয়েন্টেই পিছিয়ে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তার তিনদিন পর নির্বাচনী দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন বাইডেন।

সে সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়ে দেন তিনি। এর আগে ১৫ ও ১৬ জুলাই রয়টার্স/ইপসোসের এক জরিপে কমলা এবং ট্রাম্পের প্রতি ৪৪ শতাংশ ভোটার জনসমর্থন জানিয়েছিলেন। তার আগে ১ ও ২ জুলাইয়ের জরিপে ট্রাম্প কমলার চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়েছিলেন। জনমত জরিপে কমলার প্রতি এভাবে সমর্থন বৃদ্ধির ব্যাখ্যায় ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবির থেকে বলা হয়, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে নতুন প্রার্থী হিসেবে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমগুলো কমলাকে নিয়ে খবর প্রকাশ করছে। যে কারণে খুব সম্ভবত সাময়িকভাবে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button