ট্রাম্পকে হত্যা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাবা–মাকে হত্যা করেছে মার্কিন কিশোর: এফবিআই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এক কিশোর তাঁর বাবা–মাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরের নাম নিকিতা কাসাপ। নতুনভাবে প্রকাশিত আদালতের নথির ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ।
সিএনএনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডব্লিউআইএসএনের হাতে আসা একটি ফেডারেল হলফনামা অনুযায়ী, নিকিতা কাসাপ লিখিত নথি ও ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হত্যার আহ্বান জানিয়েছিল এবং মার্কিন সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছিল। তদন্তকারীরা এসব নথি ও ক্ষুদে বার্তা খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, তার বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগটি এমন একটি প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ‘আর্থিক সামর্থ্য ও ব্যক্তিস্বাধীনতা’ অর্জন করা।
উইসকনসিনে কিশোরটির বিরুদ্ধে ৯টি ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রথম শ্রেণির হত্যা এবং দুটি মৃরদেহ লুকানোর অভিযোগ। আদালতের অনলাইন রেকর্ড এবং মার্চ মাসের শেষের দিকে দায়ের করা ওয়াউকেশা কাউন্টির অভিযোগ থেকে এমনটা জানা গেছে।
এদিকে ফেডারেল তদন্তকারীরা তিনটি অভিযোগের তদন্ত করছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগগুলো হল প্রেসিডেন্টকে হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র এবং ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ব্যবহার। একটি তল্লাশি পরোয়ানার আবেদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের এক এজেন্ট এই হলফনামা লিখেছেন।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সিএনএন কাসাপের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কাউন্টির নথি অনুযায়ী, নিকিতা এখনো কোনো রাষ্ট্রীয় অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেনি।
ওয়াউকেশা কাউন্টির অভিযোগ অনুযায়ী পুলিশের বিশ্বাস, অভিযুক্তের মা তাতিয়ানা কাসাপ এবং সৎ বাবা ডোনাল্ড মেয়ার গত ১১ ফেব্রুয়ারি নিহত হন। এর দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর ২৮ ফেব্রুয়ারি দুজনকেই গুলির আঘাতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরিবারটির বাড়িতে গিয়ে তাদের সুস্থতা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওয়াউকেশা কাউন্টি শেরিফের ডেপুটিরা তাদের মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
ওই সময় অভিযুক্ত কিশোর বাড়িতে ছিল না। এ ছাড়া ডোনাল্ড মেয়ারের এসইউভি গাড়িটি চুরি গেছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
সেই সন্ধ্যায় ক্যানসাসের ওয়াকিনির পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা ওই গাড়িটি থামিয়ে অভিযুক্তকে গাড়ির ভিতরে পান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। গাড়ির ভিতরে পাওয়া যায় নগদ ১৪ হাজার ডলার এবং ১৪ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের গয়না। এ ছাড়াও মেয়ারের কেনা পয়েন্ট ৩৫৭ ম্যাগনাম রিভলভারটিও সেখানে ছিল।
ফেডারেল হলফনামায় বলা হয়, ওয়াউকেশা কাউন্টি শেরিফের কার্যালয় একটি তল্লাশি পরোয়ানা পেয়ে অনুসন্ধান চালায় এবং কাসাপের ফোনে ‘দ্য অর্ডার অব নাইন অ্যাঞ্জেলস’ নামক একটি নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পায়। এটি জাতিগতভাবে উগ্র ভাবাদর্শ লালনকারী নব–নাৎসীদের একটি নেটওয়ার্ক। এ ছাড়াও শেরিফের কার্যালয় প্রেসিডেন্টকে হত্যা, বোমা তৈরি এবং সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে আত্মবর্ণিত একটি ইশতেহার সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি ও বার্তা খুঁজে পেয়েছে।
এফবিআইয়ের খুঁজে পাওয়া তিন পৃষ্ঠার একটি নথিতে ট্রাম্পকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটানোর এবং শেতাঙ্গ জাতিকে রক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এফবিআই আরও জানিয়েছে, কাসাপের ফোনে একটি ছবি এবং বার্তা ছিল, যাতে ড্রোনকে কীভাবে আক্রমণাত্মক ড্রোন হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সে তথ্য ছিল। তারা জানিয়েছে, কাসাপ আক্রমণ করার জন্য ড্রোন এবং বিস্ফোরক কিনতে কিছু টাকা পরিশোধ করেছিল। তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছে, তারা মেয়ারের ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ডের সামনের এবং পিছনের ছবি এবং একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীর নাম ও পাসওয়ার্ডও পেয়েছিল।
কাসাপের এক সহপাঠী শেরিফের কার্যালয়কে জানায়, কাসাপ তাঁকে মার্চ মাসে বলেছিল যে, সে তার বাবা-মাকে হত্যা করতে চায়। তবে তার কাছে কোনো বন্দুক নেই।
অভিযোগে বলা হয়, কাসাপ পরে তার সহপাঠীকে জানিয়েছিল, সে এমন একজনকে বন্ধু বানাবে, যার কাছে বন্দুক আছে এবং সে তা চুরি করবে।
আদালতের নথিতে আরও বলা আছে, কাসাপ তার সহপাঠীকে জানিয়েছিল, সে রাশিয়ার এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং তারা মার্কিন সরকারকে উৎখাত ও ট্রাম্পকে হত্যার পরিকল্পনা করছে।
ওয়াউকেশা কাউন্টির অভিযোগে বলা হয়, তদন্তকারীরা কাসাপের ফোনে এমন বার্তা পেয়েছে যা নির্দেশ করে যে, সে ইউক্রেন চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল।
আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, শুনানির জন্য আগামী ৭ মে কাসাপের ওয়াউকেশা কাউন্টি আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে।