Bangladesh

ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণ নিয়ে আওয়ামী লীগের উচ্ছ্বাস কতটা বাস্তবিক?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ সোমবার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য শপথ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং এটি ঘিরে বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।

নেতাকর্মীরা অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিচ্ছেন যাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার ঘটনায় তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ পাচ্ছে।

এর মধ্যেই বাংলাদেশে কাজ করা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে পররাষ্ট্র দফতর থেকে পদত্যাগের ঘটনাকেও ‘ট্রাম্পের খেলা’ উল্লেখ করে পোস্ট দিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী ও সমর্থক।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় দল ও সরকারের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রাখা সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তারা মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যাদের সমর্থন যুগিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন সেটি করবে না বলেই তারা মনে করেন।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন আসার পরেও বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের অবস্থানের খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন না।

আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তনের কারণে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু ঘটুক আর না ঘটুক, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে বলেই কাউকে কাউকে উজ্জীবিত হতে দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে একটি টুইট করেছিলেন ট্রাম্প, যা আলোচনার ঝড় তুলেছিল।

যদিও অনেকেই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তিনি সেটি করে থাকতে পারেন।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সবসময় ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

আওয়ামী লীগে প্রতিক্রিয়া কেন

মোহাম্মদ আলী আরাফাত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সমর্থকদের জন্য যেমন অস্বস্তির কারণ হবে, তেমনি এটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করবে।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যাদের পছন্দ করেন না- তারা বাংলাদেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে বিশেষ পছন্দ করেন। ফলে আমরা মনে করি ইউনুস সাহেব বাইডেন প্রশাসনের যেমন সমর্থন পেয়েছেন সেটি তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে পাবেন না।’

উল্লেখ্য, ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী তহবিলে অর্থ দিয়েছেন। ট্রাম্প তার প্রথম নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়েই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আবার ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট দলীয় জো বাইডেনের কাছে হেরেছেন। বাইডেনও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের অন্যতম ‘সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত।

এবার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনুসকে ঘিরে জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের উচ্ছ্বাস বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে। সরকার সমর্থকরা এটিকে ড. ইউনুসের ‘সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের থাকার সময়ে শেষ কয়েক বছরে নির্বাচন ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসন শেখ হাসিনা সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ তৈরি করে গেছে।

র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভিসা নীতি ঘোষণার ঘটনায় বেকায়দায় পড়েছিল তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার।

শেখ হাসিনা নিজেও প্রকাশ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন। তিনি নিজেই বলেছিলেন যে ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না’।

সবশেষ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পেছনেও ‘যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে’ বলে অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক বিশ্বাস করে থাকেন।

আবার বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠলেও সরকার সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। সরকারের বক্তব্য, নির্যাতনের কিছু ঘটনা ঘটলেও সেগুলো রাজনৈতিক।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে বলে টুইট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা এসব কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে স্বস্তি পেয়েছেন এবং তার শপথ গ্রহণে এ কারণেই তারা উজ্জীবিত বলে অনেকে মনে করেন।

মোহাম্মদ আলী আরাফাত অবশ্য বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশসহ অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই দেখিয়েছেন যে তিনি এ ধরনের নীতিতে বিশ্বাস করেন না।

‘আমাদের হয়তো কিছু ভুল-ত্রুটি ছিল কিন্তু সেটি বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনীতির বিষয় ছিল। এসব ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনপুষ্ট নিজস্ব লোকজন দেশে ও বিদেশে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এসব করবে না বলেই মনে করি,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন আরাফাত।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এর ফলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ ইউনূস সমর্থকদের জন্য যেমন অস্বস্তির কারণ হবে তেমনি এটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করবে।’

আওয়ামী লীগের উচ্ছ্বাস কতটা বাস্তবিক

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতা পরিবর্তিত হয়ে গেছে এবং তরুণ প্রজন্ম ও জনগণ পুরনো জায়গায় ফেরত যেতে চায় না।

‘তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নীতিমালা ও বাংলাদেশের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি যে অবস্থায় আছে সেটাকে অস্থিতিশীল করার মতো কোনো কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন খুঁজে পাবে বলে মনে হয় না। ট্রাম্প প্রশাসন আসার পরেও বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের অবস্থানের খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে করি না,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

হুমায়ুন কবির আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ বা চাহিদা আছে।

তিনি বলেন, ‘তারা স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অগ্রসর দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চায়। আঞ্চলিকভাবে অবদান রাখতে সক্ষম এমন বাংলাদেশ তারা চায়। আর বাংলাদেশের এখনকার বাস্তবতায় তাদের এসব চাহিদার সাথে সাযুজ্য আছে। এটা কেন তারা নষ্ট করবে আমি বুঝি না। তাছাড়া চলমান সংস্কার কার্যক্রমকেও তারা সমর্থন দিচ্ছে।’

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুটি বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ হুটহাট সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের বিষয়ে নীতি পরিবর্তন করে বলে তিনি মনে করেন না।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে অস্বীকার করার কিছু নেই এবং সে কারণেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও এটিকে ব্যবহার করে অনেক সময় সুবিধা নিতে চায়। তারা জনগণের মনে একটা ধারণা দিতে চায় যে শক্তিশালী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন সমর্থন তাদের দিকে আছে।’

‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন সমর্থন মনস্তাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো পরিবর্তন বা ঘটনায় এদেশেও কোনো পক্ষ উজ্জীবিত হয় আবার কোনো পক্ষ হতাশা বোধ করে। এবারেও তাই হচ্ছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d