USA

ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের অ্যাটর্নি জেনারেল, কে এই পাম বন্ডি

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশেষে অবস্থান বদলেছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ প্রশাসনে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিজের একান্ত অনুগত পাম বন্ডিকে মনোনয়ন দিয়েছেন তিনি। এর আগে এ পদে ট্রাম্পের মনোনয়ন পেয়েছিলেন ম্যাট গেটজ। তিনি মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য।

যৌন কেলেঙ্কারি ও নিষিদ্ধ মাদক ব্যবহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন গেটজ। এরপর ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার মুখে গেটজ নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। সেই জায়গায় অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ট্রাম্পের মনোনয়ন পেয়েছেন ফ্লোরিডার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি।

পাম বন্ডিকে মনোনয়ন দিয়ে গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিচার বিভাগকে আমার ও অন্যান্য রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনটা আর হবে না।’ পাম বন্ডি বিচার বিভাগকে অপরাধ দমনে ও যুক্তরাষ্ট্রকে আবার নিরাপদ করতে কাজ করবেন বলেও জানান ট্রাম্প।

অ্যাটর্নি জেনারেল পদে পাম বন্ডির নিয়োগ চূড়ান্ত হতে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

কে এই পাম বন্ডি

পাম বন্ডির বয়স ৫৯ বছর। ২০১০ সালে ইতিহাস গড়ে ফ্লোরিডার প্রথম নারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন পাম বন্ডি।

ওই পদে থাকাকালে পাম বন্ডি মানব পাচারসংক্রান্ত সমস্যার ওপর জোর দেন। সরব হন পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের আইন আরও জোরালো করার পক্ষে।

ফ্লোরিডার সাবেক ফেডারেল কৌঁসুলি ডেভিড ওয়েইনস্টেইন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, কাগজে–কলমেও এ পদের জন্য তিনি (পাম বন্ডি) একজন যোগ্য ব্যক্তি। তিনি পুরো জীবন মামলা পরিচালনা করে কাটিয়েছেন। সর্বশেষ মনোনীত প্রার্থীর তুলনায় তাঁর জীবনবৃত্তান্ত বেশ সমৃদ্ধ।

ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক

কয়েক বছর ধরেই ট্রাম্প বলয়ে দেখা যাচ্ছে পাম বন্ডিকে। ট্রাম্পের শুরুর দিককার সমর্থকদের একজন তিনি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রবেশের যাত্রায় পাম বন্ডির ব্যাপক সমর্থন ছিল।

তবে জাতীয় পরিসরে পাম বন্ডি পরিচিত হয়ে ওঠেন আরও পড়ে। ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে ফক্স নিউজে একের পর এক বয়ান দিয়ে। এ ছাড়া ২০১৬ সালের রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনে স্মরণীয় ভাষণ পাম বন্ডির জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে।

পাম বন্ডি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

পাম বন্ডি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

ওই সময় ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলে তাঁর ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া দলের সদস্য হন পাম বন্ডি। এরপর ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ওপিওড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাবিউজ’ কমিশনের সদস্য হন তিনি।

প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে যখন ট্রাম্পকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন তাঁর আইনি দলে ছিলেন বন্ডি।

বিতর্কে ট্রাম্প–বন্ডি

২০১৩ সালে পাম বন্ডি ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের কাছ থেকে রাজনৈতিক আনুকূল্য চেয়েছিলেন। কেননা, ওই সময় বন্ডির দপ্তর নিউইয়র্কে ট্রাম্প ইউনিভার্সিটি–সংক্রান্ত জালিয়াতির মামলায় যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছিল।

পাম বন্ডিকে সমর্থন করে, এমন একটি রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটিতে ২৫ হাজার ডলার দান করেছিল ট্রাম্প ফাউন্ডেশন। এটি ছিল রাজনৈতিক প্রার্থীদের সহায়তাকারী দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপর ফেডারেল নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য লঙ্ঘন।

২০১৬ সালে ওই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। ট্রাম্পের কাছ থেকে ২৫ হাজার ডলার নেওয়ার সঙ্গে ট্রাম্প ইউনিভার্সিটির জালিয়াতি মামলার যোগসূত্র থাকার কথা অস্বীকার করেন পাম বন্ডি। জানান, এ–সংক্রান্ত যাবতীয় নথি তাঁর দপ্তর থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বন্ডির মনোনয়নের ঘোষণা দেওয়ার পর পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস ইন ওয়াশিংটন’ সিনেটের বিচারিক কমিটির কাছে ট্রাম্প–বন্ডির সেই কেলেঙ্কারির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

ট্রাম্প যাতে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হতে পারেন, সে জন্য সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি চিন্তক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে গঠন করা এ প্রতিষ্ঠানের নাম সেন্টার ফর লিটিগেশন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপার্সন ছিলেন বন্ডি।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলার কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত বন্ডি। এ মামলায় সরকারি কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথেরও সমালোচনা করেন এই নারী।

একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে জ্যাক স্মিথ ও অন্যান্য কৌঁসুলিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়েন পাম বন্ডি। বলেন, ‘তাঁরা ট্রাম্পকে “ভয়ংকর” মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। আমাদের বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।’

এরপর ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প যখন জো বাইডেনের কাছে হেরে যান, তখন বন্ডি ‘বড় মিথ্যার’ আশ্রয় নেন। ট্রাম্প ও তাঁর মিত্ররা বলতে শুরু করেন, নির্বাচনের ফলাফল তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাই করা হয়েছে। বন্ডি বলেছিলেন, ‘আমরা পেনসিলভানিয়ায় জিতেছি। আমরা চাই, প্রতিটি ভোটের সুষ্ঠু গণনা হোক।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button