USA

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় যা গুরুত্ব পাচ্ছে

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচানী প্রচারণায় গণ প্রত্যাবাসনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, এক রিপাবলিকার ন্যাশনাল কনভেনশনে ‘এখনি গণ-প্রত্যাবাসন’ এমনটাই লেখা হয়েছে। 

যদিও এমন বার্তায় রিপাবলিকান দলের অনেকেই অপ্রস্তুত হয়েছেন। টেক্সাসের রিপাবলিকান কর্মী লাওরেন বি. পেলা বলেছেন, কনভেনশনে ট্রাম্পের গণ প্রত্যাবাসনের কথা এবং সেইসঙ্গে কিছু শব্দ যেমন ‘অবৈধ’ এবং ‘অনুধিকার প্রবেশ’ শুনে অস্বস্তি লাগছিল।   

তিনি বলেন, ট্রাম্প আসলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা সব পরিবারকেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন না। গণ প্রত্যাবাসন বলতে তিনি অপরাধীদের ফেরত পাঠানোর কথাই বলছেন।  

তবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টাদের পরিকল্পনা ভিন্ন। নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে গণ প্রত্যাবাসনের ইস্যুটিকে রেখে তারা হয়তো ১৯৫০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের নেওয়া প্রত্যাবাসন নীতিকে অনুসরণ করতে চান।  

‘অপারেশন ওয়েটব্যাক’ শীর্ষক ওই নীতিকে অনেকে ‘বর্ণবাদী দোষযুক্ত’ বলে থাকেন। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনই ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প। প্রত্যাবাসন করতে তিনি দেশটির ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তা নেবেন এবং প্রয়োজনে তিনি দেশটির সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রে মোট অভিবাসীর সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি। ধারণা করা হচ্ছে, এর একটি বড় অংশের দেশটিতে থাকার স্থায়ী আইনি কাগজ নেই।  

অভিবাসীদের বিষয়ে ট্রাম্প কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তা অনুমান করা যায় তার এক সহকারী স্টেফান মিলারের কথায়। স্টেফান মিলার দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতায় গেলে হোয়াট হাউজে একটি সিনিয়র পদে নিযুক্ত হতে পারেন তিনি।  

মিলারের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন (ক্ষমতায় আসলে) দুটি কাজ করতে পারে। একটি হলো, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। আরেকটি, অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো। 
এটি করতে হলে, ট্রাম্পকে তার আগে ক্ষমতায় এসে যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা আবার কার্যকর করতে হবে।    

মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের উপর এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তাছাড়া তিনি ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তায় ব্যাপক অভিযান চালাতে পারেন। আটক করে অনিয়মিত অভিবাসীদের একটি ক্যাম্পে রাখতে পারেন এবং আইনের আশ্রয় নেওয়ার আগেই তাদের প্রত্যাবসনের জন্য বিমানে উঠিয়ে দিতে পারেন। এছাড়া দেশটির ১২৫ বছরের পুরোনো নিয়ম, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার যে অধিকার সেই অধিকারও বাতিল করতে পারেন ট্রাম্প।  

ডেমোক্র্যাটরা বলছে, অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্পের এই ভাবনা ও প্রচারণা লাটিনো ভোটারদের কাছে টানতে পারে। দক্ষিণ টেক্সাসে একটি বড় অংশে ল্যাটিনো অ্যামেরিকারদের বাস। সেখারকার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি ভিসেন্তো গঞ্জালেজ বলেন, ভোটারেরা সীমান্তে আরো ভালো ব্যাবস্থাপনা দেখতে চায়। 

উপযুক্ত নীতি অবলম্ব করে অনেক কিছুই করা যেতে পারে। তার কথায়, এর ফলে হয়তো সীমান্তে অভিবাসীদের আগমন কমে আসবে। কিন্তু গণ প্রত্যাবাসন ঘটনা হবে হৃদয়বিদারক। এদিকে হিসপানিক ভোটরদের মধ্যেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কম নয়। ২০০২ সালে সেই ভোটারদের ৩৫ ভাগ পেয়েছিলেন ট্রাম্প।

তবে তারপরও অনেকেই এমন প্রচারণায় একমত নন। নিজেকে বহুজাতির হিসপানিক পরিচয় দেওয়া পেলা বলেন, বর্তমান সরকারের অনেক নীতিই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহায়ক নয়। তিনি জানান, তার রিপাবলিকান সহকর্মীরা যখন এ বিষয়ে আলোচনা করে, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় শিশুদেরকে স্কুলে যেতে দেওয়া হবে না। সেটা বেশ কষ্টকর।

তিনি বলেন, ‘একজন হিসপানিকের কাছে এটা খুব অস্বস্তিকর একটি ইস্যু। আমার মনে হয় আমাদের এই লোকগুলোকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।’

উইসকনসিনের হিস্পানিক চেম্বার অফ কমার্সের সিইও জর্জ ফ্রাঙ্কো বলেন, উইসকনসিনের দুগ্ধ ও কৃষি খাতে সবচেয়ে কঠিন কাজ করা ৭৫ হাজারের বেশি অভিবাসী যদি আগামীকাল চলে যায়, তাহলে স্টেটের অর্থনীতি থমকে যাবে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button