Hot

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে তোলপাড়, বিপাকে বাংলাদেশিরাও

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের কঠোর হস্তে দমনের নীতি ঘোষণা করেছেন দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। যেসব অভিবাসীর কাছে বৈধ কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট নেই, তাদেরকেই অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০শে জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন ট্রাম্প। পরদিন মঙ্গলবার শতাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। ওদিকে এরই মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বাংলাদেশি বৈধ কাগজপত্রবিহীন বসবাস করছেন, তাদের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশিই নন, যুক্তরাষ্ট্রে যারাই অবৈধ অভিবাসী এই আতঙ্ক তাদের সবার। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত ২২টি অঙ্গরাজ্য ও ২টি শহর। অঙ্গরাজ্য ও শহর দু’টির পাশাপাশি ওই আইনি লড়াইয়ে শরিক হয়েছে বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠনও। মঙ্গলবার বোস্টনের একটি প্রাদেশিক আদালতে ওই মামলা করেছে ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া এবং সানফ্রান্সিসকো শহর সহ মোট ২২টি অঙ্গরাজ্যের একটি জোট। যার নেতৃত্বে রয়েছে ডেমোক্রেট দলের নেতারা। তাদের দাবি জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণীত অধিকার। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার অর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলে ক্ষমতায় আসতে না আসতেই মামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ট্রাম্পকে।

 এই মামলা একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে, তাও বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তিধর প্রেসিডেন্ট তিনি। ফলে মামলা টিকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু এর ফলে এটা ইঙ্গিত মিলছে যে, ট্রাম্প নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেলেও তাকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবেন না ডেমোক্রেটরা। তারাও তাকে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মধ্যে রাখবেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। মিডিয়ার খবর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরো’র ফুলটন থেকে গ্রেপ্তার করেছে চার বাংলাদেশিকে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা ঘরের বাইরে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। কিন্তু তাতেও কি রক্ষা আছে। অভিবাসন কর্মকর্তারা বাড়িঘরেও হানা দিতে পারেন। নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনকে অনেকেই বাঙালিপাড়া হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে যান, তাদের বেশির ভাগই প্রথমে ব্রুকলিনে আশ্রয় নেন। অনেকে সেখানেই অবস্থান করেন। বিভিন্ন রকম কাজ জুটিয়ে নিয়ে থেকে যান ব্রুকলিনে। খবরটি মার্কিন প্রশাসনও জানে। ফলে তাদের চোখ যে সেদিকে পড়বে তা হলফ করেই বলা যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগেই ঘোষণা দিয়েছেন অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করে যার যার দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এমন হুঁশিয়ারির ভয়ে বহু বাংলাদেশি। তাদের সামনে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্টের কর্মকর্তারা সাদা পোশাকে হাজির হচ্ছেন। এ জন্য তাদের আগে থেকে কেউ চিনতে পারছেন না। নিজে আত্মগোপন করারও সুযোগ পাচ্ছেন না। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক বাংলাদেশি মিডিয়াকে বলেছেন- তারা ফুলটনের একটি এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলেন। অতর্কিতে সেখানে সাদা পোশাকে কয়েকজন কর্মকর্তা গিয়ে উপস্থিত হন। তারা তাদেরকে পরিচয়পত্র দেখাতে বলেন। কিন্তু তার প্রতিবাদ করেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম সংশোধনী অনুযায়ী তিনি পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য নন। তার এমন আচরণ দেখে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ওই আড্ডায় থাকা অন্যদের ছেড়ে দেয় তারা। এর থেকে কিছুটা দূরে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্টের কর্মকর্তারা। তবে এসব বাংলাদেশির কারও নাম, পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। 

শপথ নিয়ে ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প সোমবারই সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে সমালোচনা করেন এসব অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়ার জন্য। তিনি দাবি করেন লাখ লাখ অভিবাসী সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। তারা নানা রকম অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। বাইডেনের প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র এসব অপরাধীর অভয়ারণ্য ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। কিন্তু ট্রাম্প তার আমেরিকা ফার্স্ট নীতির অধীনে শুধু বাংলাদেশি নন, সারা বিশ্বের যেসব অবৈধ অভিবাসী আছেন তাদের বের করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ জন্য তিনি সীমান্তে প্রবেশকে প্রথমেই বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেন। ইতিমধ্যে মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। রাখা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

এই আদেশের আওতায় অভিবাসীদের বৈধতা দেয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত বিষয়ক কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অ্যাটর্নি রাজু মহাজন মিডিয়াকে বলেছেন, ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যারা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা সহ দক্ষিণ আমেরিকার পথ ধরে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ঢুকতেন, সেই পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। আগে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব  দেয়া হতো। সে হিসেবে অভিবাসীরা বিভিন্ন জায়গায় চাকরির ব্যাপক সুযোগ পেয়েছেন। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে সেসব নিয়োগ নির্ধারিত হবে। ফলে ছাঁটাই হতে পারেন অসংখ্য বাংলাদেশি। সংবিধানের তোয়াক্কা না করে নির্বাহী আদেশ জারি করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের একটি বিধানও বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এতে এখন  থেকে ৩০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা দেশটির নাগরিকত্ব পাবে না। তবে ইতিমধ্যে এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে ২৪টি রাজ্য ও শহরে মামলা হয়েছে। যেহেতু এটা মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনের বিরুদ্ধে যায়, সে কারণে হাইকোর্ট এটি বাতিল করে দিতে পারে। খাদিজা মুনতাহা বাংলাদেশিদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আইনপ্রয়োগকারী কোনো সংস্থার সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। অন্যের ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এই কঠিন সময়ে অহেতুক পুলিশি অথবা অন্যকোনো বিবাদ অথবা ঝামেলায় জড়ানো যাবে না। সরজমিন দেখা গেছে, বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকার সড়ক ও রেস্তরাঁয় যেখানে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা যেত, এখন সেখানে  লোকজনের ভিড় নেই বললেই চলে। ইতিমধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button