ট্রাম্পের পোস্টের পর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো গৃহহীনদের তাঁবু

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গৃহহীনদের একটি বড় তাঁবুর শিবির উচ্ছেদ করেছে শহর কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত রোববার তাঁর গলফ ক্লাবে যাওয়ার সময় গৃহহীনদের ওই শিবিরের ছবি তুলে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে লেখেন, ‘এই গৃহহীনদের অবিলম্বে এখান থেকে সরে যেতে হবে।’
ট্রাম্পের এ পোস্টের চার দিন পরই বুলডোজার দিয়ে গৃহহীনদের ওই তাঁবু উচ্ছেদ করেছে শহর কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় এক দিনেই অন্তত ১১ জন গৃহহীন তাঁদের আশ্রয় হারিয়েছেন।
ট্রাম্পের পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি নিজের তাঁবুর পাশে একটি ভাঁজ করা চেয়ারে বসে আছেন। পরে জানা যায়, তাঁর নাম বিল থিওডি। থিওডির তাঁবুও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন তিনি আশ্রয়হীন।
নিজের ছবি দেখে বিল থিওডি বলেন, ‘ওটা আমি। তিনি (ট্রাম্প) গাড়ির জানালা দিয়ে আমার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করেছেন। এটিকে তাঁর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। এটা তাঁর কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস কনফারেন্স কক্ষে গত সোমবার ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন সব পার্ক থেকে গৃহহীনদের শিবিরগুলো সরিয়ে ফেলবে।
এ ঘোষণার পর বিবিসি ভেরিফাই ট্রাম্পের পোস্ট করা ছবিগুলো যাচাই করে। তাঁবুগুলোর ছবিতে দৃশ্যমান সূত্র, যেমন বাঁকানো রাস্তার ধারে ঘাসের জায়গা ব্যবহার করে বিবিসি গুগল স্ট্রিটভিউতে একটি স্থানের সঙ্গে মিলিয়েছে।
গৃহহীনদের শিবিরটি হোয়াইট হাউস থেকে গাড়িতে প্রায় ১০ মিনিটের দূরত্বে আর বিবিসি কার্যালয় থেকেও খুব কাছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় কর্মকর্তারা গৃহহীনদের সতর্ক করছেন যে তাঁদের শিগগির সরে যেতে হতে পারে।
মিজৌরি অঙ্গরাজ্য থেকে আসা ৬৬ বছর বয়সী বিল থিওডি এখানে অনেক বছর ধরে থাকেন। নির্মাণশিল্পে কাজ করতেন। ২০১৮ সাল থেকে তাঁর স্থায়ী কোনো চাকরি নেই। বর্তমানে মাসে কিছুদিনের কাজ জোটে। গত বৃহস্পতিবার থিওডিসহ অন্য বাসিন্দাদের জানানো হয় অবিলম্বে তাঁবু গুঁটিয়ে চলে যেতে হবে।
বিল থিওডি বলেন, ‘আমি বুঝি, উনি (ট্রাম্প) এলোমেলো কিছু দেখতে চান না। তাই আমরা জায়গাটা যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। আমরা প্রেসিডেন্ট বা অন্য কাউকে অসম্মান করতে চাই না।’
ওয়াশিংটন ডিসির স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের ডেপুটি মেয়র ওয়েন টারনেজ বলেন, শহর কর্তৃপক্ষ আগেও এভাবে গৃহহীনদের শিবির উচ্ছেদ করেছে। সাধারণত অন্তত এক সপ্তাহ আগে নোটিশ দেওয়া হয়, তবে ট্রাম্পের ঘোষণার পর এবার প্রক্রিয়াটি দ্রুত করা হয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বের হওয়ার প্রধান একটি সড়কের পাশে উচ্ছেদ করা শিবিরটি শহরের সবচেয়ে বড় গৃহহীন শিবির ছিল। সেখানে ১১ জন থাকতেন।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরুতে রাজধানীর গৃহহীন শিবিরে ৯৭ জন ছিলেন। ২০২৩ সালে এখানে ২৯৪ জন ছিলেন।
শহরের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর বাস্তুচ্যুতির শিকার মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ১৩৮। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬১৩। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ জন সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নিচে আর বাকি ৪ হাজার ৩০০ জন কোনো না কোনো অস্থায়ী আশ্রয়ে আছেন।

বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গৃহহীনদের তাঁবু
হোয়াইট হাউস বলেছে, যাঁরা রাস্তায় থাকেন, তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে এ প্রস্তাব তাঁরা প্রত্যাখ্যান করলে জরিমানা বা কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
বিল থিওডি বলেন, ‘মানুষকে হঠাৎ ধরে নিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া বা জোর করে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো যায় না। আমি আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাই না—ওগুলো খারাপ জায়গা।’
গৃহহীনদের সহায়তাকারী সংস্থাগুলো বলছে, ওই ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। কারণ, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা প্রায়ই সীমিত।
শিবির থেকে উচ্ছেদের পর থিওডি তিন রাত কাটিয়েছেন ভার্জিনিয়ার একটি মোটেলে। একজন দাতা তাঁকে খরচ জোগাড় করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘মানুষটা সাহায্য না করলে কী করতাম, জানি না। হয়তো সারা দিন ফুটপাতে বসে থাকতাম। ঘরটা আমার জিনিসে ঠাসা, তাঁবু আর সব মালপত্রে। কিন্তু একটা বিছানায় ঘুমানো, গোসল করা, ব্যক্তিগত বাথরুম ব্যবহার করা—অসাধারণ লাগছে।’
মোটেল ছাড়ার পর থিওডি নতুন জায়গা খোঁজার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমার সেরা বিকল্প হলো, নিরাপদ কোনো জায়গায় তাঁবু খাটানো। কোথায় সেটা হবে, তা জানি না। তবে আমি ডিসিতেই থাকতে চাই।’
গৃহহীনদের শিবিরে বিবিসির কথা হয় ৬৫ বছর বয়সী ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দা জর্জ মর্গানের সঙ্গে। ভাড়া দিতে না পারায় ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে দুই মাস ধরে তিনি ওই শিবিরে ছিলেন। উচ্ছেদের পর তাঁর খোঁজ নিতে ফোন করলে তিনি বলেন, একটি মোটেলের লবিতে তিনি পোষা কুকুরকে নিয়ে আছেন। এক ব্যক্তি ওই মোটেলে থাকার জন্য এক রাতের ভাড়া দিয়েছিলেন।
জর্জ মর্গান বলেন, ‘আমরা এখানে বসে আছি। দেখব, আরেকটা রাত থাকতে পারি কি না। কুকুরের জন্য ১৫ ডলার দিতে হয়েছে—ওটাই ছিল আমার শেষ অর্থ।’