ট্রাম্পের মিত্র চার্লি কার্ক খুনের ঘটনায় আটক কে এই তরুণ

যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র চার্লি কার্ককে হত্যায় জড়িত সন্দেহে এক তরুণকে আটকের কথা স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার ওরেম শহরের ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় কার্ককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এক সংবাদ সম্মেলনে ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের গভর্নর স্পেনসার কক্স বলেছেন, ২২ বছর বয়সী টাইলার রবিনসনকে তাঁর বাবা ও এক বন্ধুর সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
রবিনসনকে ওয়াশিংটন কাউন্টি থেকে আটক করা হয়। সেখানে তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। এলাকাটি ওরেম শহরের ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং বিখ্যাত জায়ন ন্যাশনাল পার্কের কাছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রবিনসনের মা অ্যাম্বারের পোস্ট করা ছবিগুলোতে তাঁদের একটি ঘনিষ্ঠ পরিবার বলেই মনে হয়েছে। তিন ছেলের মধ্যে রবিনসন ছিলেন সবার বড়। প্রতিবেশীরা মার্কিন গণমাধ্যমকে জানান, পরিবারটি মরমন সম্প্রদায়ের (খ্রিষ্টানদের শাখা সম্প্রদায়)।
ডিক্সি টেকনিক্যাল কলেজ জানিয়েছে, রবিনসন ‘ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্রেনটিসশিপ প্রোগ্রামের’ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আর ইউটাহ স্টেট ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, তিনি ২০২১ সালে সেখানে এক সেমিস্টার পড়েছিলেন।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ইউটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন চার্লি কার্কছবি: রয়টার্স
যেভাবে হত্যা
চার্লি কার্ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রক্ষণশীল যুব আন্দোলনের প্রধান। ২০১২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি এ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। বুধবার দুপুরে গুলি করার সময় তিনি ইউটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ৩১ বছর বয়সী কার্ক হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, তাঁর ঘাড় থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর মৃত্যুর খবর জানান।
কর্তৃপক্ষ জানায়, হত্যাকাণ্ডে রবিনসন একটি শক্তিশালী ‘বোল্ট-অ্যাকশন রাইফেল’ ব্যবহার করেছিলেন এবং লক্ষ্যবস্তু থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে একটি ভবনের ছাদ থেকে গুলি চালিয়েছিলেন। তারা আরও জানায়, হত্যাকারী উপুড় হয়ে শুয়ে গুলি ছুড়েছিলেন। এভাবে গুলি ছুড়লে নির্ভুলভাবে নিশানায় আঘাত হানার সম্ভাবনা আরও বাড়ে।
হত্যার কারণ
ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী কার্ককে হত্যার স্পষ্ট কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পরিবারের বরাত দিয়ে গভর্নর কক্স বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রবিনসনের ‘রাজনৈতিক মনোভাব জোরালো হয়েছে’ এবং ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে কার্কের আসন্ন কর্মসূচি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আলাপ করেছিলেন তিনি। টাইলার রবিনসন স্বতন্ত্র ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করেছিলেন।
চার্লি কার্ক ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’ নামের একটি সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা। এটি যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষণশীল তরুণদের সবচেয়ে বড় সংগঠন। গত নভেম্বরে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে তরুণ ভোটারদের সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটি। তিনি একজন রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্বও ছিলেন। জাতিগত ও লৈঙ্গিক পরিচয় এবং বন্দুকের মালিকানার বিষয়ে চরম রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন কার্ক।
যদিও হামলাকারীর উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়, তবে ঘটনাস্থলে পাওয়া গুলির খোসার ওপরে থাকা লেখাগুলো অনেক বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের গভর্নর কক্স বলেন, একটি কার্তুজে লেখা ছিল, ‘ওই, ফ্যাসিবাদী! ধর!’ আরেকটিতে লেখা ছিল ‘বেল্লা চাও’, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি ইতালীয় ফ্যাসিবাদবিরোধী গানের প্রতি ইঙ্গিত করে।
অন্য কার্তুজগুলোতে এমন কিছু প্রতীক ও শব্দ ছিল, যা অনলাইন গেমিং সংস্কৃতি থেকে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিবিদদের ওপর বারবার গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ট্রাম্পকেও দুইবার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। এ ছাড়া কয়েক দশক ধরে দেশটিতে রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
সাধারণত তরুণ ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পুরুষদের দ্বারা নির্বিচার গুলির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই ঘটে। দেশটিতে শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র খুব সহজেই পাওয়া যায়।