ট্রাম্পের শাসনামলে মার্কিন গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় উদ্বেগজনক অবনতি

আরএসএফ গত ২৩ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় উদ্বেগজনক অবনতি ঘটেছে বলে শুক্রবার সতর্ক করেছে গণমাধ্যম অধিকার সংগঠন রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। একইসাথে বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সাংবাদিকদের জন্য পরিস্থিতিকে অভূতপূর্বরকম কঠিন বলে আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির সূত্রে বাসস জানিয়েছে, প্যারিসভিত্তিক সংগঠনটি গত ২৩ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে আসছে। তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সূচকটি এখন ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে।
বছরব্যাপী বৈশ্বিক গণমাধ্যম পরিস্থিতির এ পর্যালোচনায় বলা হয়, ‘সূচকের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্বের অর্ধেক দেশে সাংবাদিকতা চর্চার পরিস্থিতি খারাপ এবং প্রতি চারটির মধ্যে মাত্র একটিতে তা সন্তোষজনক।’
আরএসএফের সম্পাদকীয় পরিচালক অ্যান বোকান্দে বলেন, সাংবাদিকতা-নির্ভর সত্যভিত্তিক প্রতিবেদন আজ অর্থনৈতিক চাপে দুর্বল হয়ে পড়েছে। অর্থাভাবে অনেক স্বাধীন সংবাদমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
২০২৪ সালে অনলাইন বিজ্ঞাপনে ব্যয় বেড়ে ২৪৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছালেও এর বড় অংশই চলে যাচ্ছে ফেসবুক, গুগল ও অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের পকেটে, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কাছে নয়।
‘সরাসরি কর্তৃত্ববাদী ধাঁচে’
আরএসএফের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিল থেকে ভয়েস অফ আমেরিকা ও রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির (আরএফই/আরএল) মতো রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমগুলোর সহায়তা বন্ধ করে দিয়ে। তাছাড়া, বিদেশী উন্নয়ন সহায়তার অংশ হিসেবে বিদেশের গণমাধ্যমগুলোকে দেয়া সহযোগিতাও হ্রাস পেয়েছে।
২০২৪ সালে ১১ ধাপ নিচে নামার পর যুক্তরাষ্ট্র এ বছর আরো দুই ধাপ পিছিয়ে ৫৭তম অবস্থানে নেমে এসেছে। আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিয়েরা লিওনও ট্রাম্পের দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
এ সূচক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সংখ্যা এবং বিশেষজ্ঞদের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। নরওয়ে টানা নবমবারের মতো শীর্ষস্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে এস্তোনিয়া ও নেদারল্যান্ডস।
আরএসএফ বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় যে অবনতি ঘটেছে, তা কর্তৃত্ববাদী ধাঁচের শাসনের ইঙ্গিত দেয়।’
’তার প্রশাসন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমে সহযোগিতা কমিয়েছে এবং সাংবাদিকদের প্রান্তিক করে রেখেছে।’
ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা দেন, তিনি নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছেন। এটি তার সর্বশেষ গণমাধ্যমবিরোধী উদ্যোগ।
তিনি একইসাথে মিডিয়া প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্টের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন। মামলাটি গত বছরের নির্বাচনের আগে সিবিএস চ্যানেলে তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে।
ট্রাম্প দাবি করেন, সেখানে তার বিব্রতকর একটি উত্তর ইচ্ছাকৃতভাবে কেটে ফেলা হয়েছিল। তবে বহু আইনি বিশ্লেষক মনে করেন, মামলাটি সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষার কারণে বাতিল হয়ে যেতে পারে কিংবা টিকবে না।
আরএসএফ আবারো গাজায় ইসরাইলি হামলার সময় ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের দুর্দশার বিষয়টি তুলে ধরে বলে, ‘গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী সাংবাদিকদের নিউজরুম ধ্বংস করেছে, প্রায় ২০০ সাংবাদিককে হত্যা করেছে এবং গত ১৮ মাস ধরে অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ রেখেছে।’
ইসরাইল এবার ১১ ধাপ নেমে ১১২তম অবস্থানে পৌঁছেছে এবং নিজ দেশের সংবাদমাধ্যমকে দমন অব্যাহত রেখেছে বলেও মন্তব্য করে আরএসএফ।