ট্রাম্পের শুল্কনীতি অস্থায়ীভাবে বহাল রাখার আদেশ ফেডারেল আদালতের

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত ট্রাম্পের ঘোষিত আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (২৯ মে) তার বিতর্কিত শুল্কনীতির পক্ষে সাময়িক জয় পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত আগের এক রায় স্থগিত করে ট্রাম্পের ঘোষিত আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এতে ট্রাম্প প্রশাসন আপিলের সুযোগ পেয়েছে।
এর আগে, বুধবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক আদালত (কোর্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) রায় দিয়েছিল, ট্রাম্প ক্ষমতার অপব্যবহার করে শুল্ক আরোপ করেছেন। আদালতটি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যেসব শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন তার বেশিভাগই বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল।
শুল্ক আদায়ে আপোসের নীতির মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্য কাঠামো নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। তবে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর একের পর এক শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, বুধবারের আদালতের রায়ে হোয়াইট হাউসকে ১০ দিনের মধ্যে বিতর্কিত শুল্ক বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার আপিল আদালত সেই রায়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টে জারি করে শুল্কগুলো সাময়িকভাবে বহাল রাখে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট শুল্ক স্থগিতের রায়কে ‘বেপরোয়া বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার’ বলে অভিহিত করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টকে অবশ্যই এ চ্যালেঞ্জের অবসান ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুল্ক আরোপের আরো অনেক আইনগত পথ ব্যবহার করতে পারেন।’
‘আইনি ধাক্কা মাত্র’
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হাসেট বলেন, কিছু ‘আইনি ধাক্কা’ হলেও তা বাণিজ্য আলোচনায় প্রভাব ফেলবে না। তিনি জানান, তিনটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো জানান, আদালতের রায়ের পরও বেশ কয়েকটি দেশ ‘সৎভাবে আলোচনার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ও মাদক পাচারকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ বলে উল্লেখ করে একাধিক দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের রায়ে এসব সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক এবং কিছু দেশের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেন। এগুলোর বেশিভাগই বুধবারের রায়ে বাতিল হয়, তবে আমদানি করা গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকে।
প্রথমে অতিরিক্ত ১৪৫ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়ার পরে কিছুটা ছাড় পাওয়া দেশ চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অভ্যন্তরীণ অংশীদারদের যৌক্তিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে একতরফা শুল্ক পুরোপুরি বাতিল করে।’
বৃহস্পতিবার এশিয়ার বাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী ছিল, তবে ইউরোপীয় বাজারে সামান্য পতন দেখা গেছে।
‘অসাধারণ হুমকি’ নাকি ক্ষমতার অপব্যবহার?
বিচারকদের মতে, ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনোমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট (আইইইপিএ) আইনে প্রেসিডেন্টকে যদি ‘প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর সীমাহীন শুল্ক’ আরোপের ক্ষমতা দেয়া হয়, তবে তা অসাংবিধানিক।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোমিকস জানিয়েছে, এ মামলা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারে। তবে এটি শুল্কযুদ্ধের সমাপ্তি নির্দেশ করে না।