Trending

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধে চীনই কি শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে?

ট্রাম্প দেশীয় উৎপাদন পুনরুজ্জীবিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান আরো বাড়াতে প্রয়োজনীয় শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে ট্রাম্প তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন কি-না তা নিয়ে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই সন্দেহ প্রকাশ করছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর পারস্পরিক শুল্ক স্থগিত করলেও তিনি চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেন। চীন থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্যের ওপর বাণিজ্য শুল্ক ১৪৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে বেইজিং।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই চীনকে বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শোষণ করার অভিযোগ করে আসছেন। তিনি দেশীয় উৎপাদন পুনরুজ্জীবিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান আরো বাড়াতে প্রয়োজনীয় শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে ট্রাম্প তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন কি-না তা নিয়ে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই সন্দেহ প্রকাশ করছেন।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্য খেলায় লিপ্ত। বিশ্ব অপেক্ষা করছে কোন দেশ আগে নতি স্বীকার করবে। ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিন আগামী ৩০ এপ্রিল পূর্ণ হবে। ট্রাম্পের ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনে চীনের সাথে তার শুল্ক যুদ্ধের অবস্থান বিশ্লেষণ করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

দুই দেশের আলোচনার অগ্রগতি কেমন?

ট্রাম্প সম্প্রতি চীনের সাথে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, অদূর ভবিষ্যতে চীনের ওপর তার শুল্ক ’যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পাবে’।

ট্রাম্প ২৩ এপ্রিল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চীনের সাথে একটি ন্যায্য চুক্তি করতে যাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, তার প্রশাসন চীনা পক্ষের সাথে ‘সক্রিয়ভাবে’ আলোচনা করছে।

তবে ২৪ এপ্রিল চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, দুই দেশের মধ্যে কোনো ধরনের আলোচনা হচ্ছে না।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হে ইয়াদং বলেন, ‘চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে যেকোনো দাবি ভিত্তিহীন।’

যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কোনো অর্থনৈতিক আঘাতকে বেইজিং এড়িয়ে চলবে না। তবে আলোচনার জন্য পথ খোলা রয়েছে।

শুল্ক যুদ্ধ কি মার্কিন রফতানিতে প্রভাব ফেলেছে?

তিন সপ্তাহেরও কম সময় আগে ট্রাম্প চীনের ওপর তার ব্যাপক শুল্ক আরোপ শুরু করেন। মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এর প্রভাব এ বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত তেমন একটা অনুভূত হবে না। তবুও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি বিপদমুক্ত নয়।

মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য থেকে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চীন শুল্ক ঘোষণার পর রিপোর্টিংয়ের প্রথম পূর্ণ সপ্তাহে ১১ থেকে ১৭ এপ্রিলের মধ্যে সয়াবিনের রফতানি নাটকীয়ভাবে কমেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কৃষিপণ্য রফতানি।

সুইজারল্যান্ডের নিউচাটেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক পিয়েরগিউসেপ্পে ফরচুনাতোর মতে, ‘চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্ক মার্কিন কৃষকদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। কেউ কেউ ব্যবসা বন্ধও করে দিতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, চীনের সংস্পর্শে আসা সব ধরনের খাত চাপের মুখে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে চীনে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের তেল, গ্যাস এবং কয়লা রফতানি করেছিল। এই বাজার হারানো মার্কিন জ্বালানি সংস্থাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পণ্য পরিবহন কমে গেছে। শিপিং ডেটা প্রদানকারী লিনারলিটিকার মতে, এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য পরিবহন বুকিং ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ কমেছে।

কানাডা ও মেক্সিকোর পর যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার থেকে শিপিং খাতে তীব্র হ্রাস এখনো অনুভূত হয়নি। তবে মে মাসে হাজার হাজার কোম্পানিকে তাদের পুনঃমজুদ করতে হবে।

ব্লুমবার্গ নিউজের মতে, ওয়ালমার্ট ও টার্গেট গত সপ্তাহে এক বৈঠকে ট্রাম্পকে জানিয়েছিল, আগামী মাস থেকে ক্রেতারা দোকানে কেবল খালি তাক আর পণ্যের দাম বৃদ্ধি দেখতে পাবেন। প্রতিষ্ঠান দু’টি আরো সতর্ক করে দিয়েছে, সরবরাহে বিপর্যয় বড়দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ২২ এপ্রিল শুল্কের কারণে ২০২৫ সালে মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির পূর্বাভাস তিন শতাংশে উন্নীত করেছে, যা জানুয়ারির তুলনায় এক শতাংশ বেশি। সংস্থাটি তার মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়েছে এবং এ বছর যুক্তরাষ্ট্র মন্দার দিকে ঝুঁকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

চীনের অর্থনীতি কিভাবে প্রভাবিত হবে?

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সত্ত্বেও উভয় দেশই প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ৪৩৮.৯ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্য আমদানি করেছে। এটি চীনের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের প্রায় তিন শতাংশ। চীন এখনো রফতানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

এ মাসে তাদের ক্লায়েন্টদের সাথে শেয়ার করা একটি প্রতিবেদনে আর্থিক পরিষেবা সংস্থা গোল্ডম্যান শ্যাক্স বলেছে, তারা আশঙ্কা করছে, ট্রাম্পের শুল্ক চীনের মোট জিডিপি ২.৪ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেবে।

তবে চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, দেশটি মার্কিন কৃষি ও জ্বালানি আমদানি ছাড়াই চলতে পারবে। তারা এ বছরের জন্য পাঁচ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দেন।

ফরচুনাতো আল জাজিরাকে বলেন, ‘চীনের অন্যতম বৃহৎ রফতানি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে শুল্ক ধীরগতির করে দেবে। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাণিজ্য যুদ্ধের সময় বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও অন্য দেশ থেকে আমদানি শুরু করেছে।’

তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আমদানির ৬০ শতাংশ পর্যন্ত চীনের ওপর নির্ভরশীল। আমদানি করা খনিজ পদার্থ ক্লিন অ্যানার্জি থেকে শুরু করে সামরিক প্রযুক্তি পর্যন্ত সবকিছুতেই ব্যবহৃত হয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র আরো ঝুঁকিতে রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্র কি তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান হারাতে পারে?

ট্রাম্প মার্কিন মিত্রদের বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছার কথা খুব একটা গোপন রাখেননি। প্রশাসন জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, গ্রেট ব্রিটেন ও জাপানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার লক্ষ্য তাদের রয়েছে।

সাধারণভাবে বলতে গেলে প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, ওয়াশিংটন ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে চীনের সাথে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক শিথিল করতে বাণিজ্য অংশীদারদের অনুরোধ করছে।

তা সত্ত্বেও মার্কিন মিত্ররা চীনের সাথে যেকোনো অর্থনৈতিক সংঘর্ষের বিরোধী বলে মনে হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।

আবার অনেক দেশই বেইজিংয়ের সাথে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক ত্যাগ করার মতো অবস্থানে নেই। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চীনের সাথে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। চীনা পণ্য, অর্থাৎ ভোগ্যপণ্য ও শিল্পখাতের উপকরণ, উভয়েরই প্রবেশ বন্ধ করে দিলে এর ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়া অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেবে।

ফরচুনাতো বলেন, ’চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশগুলো কেন তাদের নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করতে চাইবে তা বোঝা কঠিন। এ বিষয়ে আমি মনে করি ট্রাম্প অদূরদর্শী এবং চীনের সাথে শুল্ক কমানোর বিষয়ে তাকেই প্রথম অগ্রসর হতে হবে।’

ট্রাম্প কি রিপাবলিকান ভোটারদের আস্থা হারাচ্ছেন?

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে চিন্তার তেমন প্রয়োজন নেই। কিন্তু ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির তা রয়েছে। তাই ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধে বেইজিংয়ের রাজনৈতিক দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছে। সহজ কথায়, চীনের হাতে এখনো সময় রয়েছে।

ট্রাম্পের দলের জন্য তার সামরিক শক্তির প্রদর্শন বা হুমকি ইতোমধ্যেই রাজনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল বলে মনে হচ্ছে। ইকোনমিস্ট-ইউগভের একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, মার্কিনীরা জানিয়েছে, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো তাদের ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যদি এ ভাবেই আগাতে থাকেন, তাহলে সম্ভবত তার অনুমোদনের হার আরো কমে যেতে পারে। ফলে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে এবং সম্ভবত সিনেটেও রিপাবলিকান পার্টিকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

ফরচুনাতো বলেন, ‘এ কারণেই চীন বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করতে আলোচনার জন্য তাড়াহুড়ো করছে না। খুব সম্ভবত এটি ট্রাম্পের ওপরই নির্ভর করবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d