USA

ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ জোহারান মামদানি

নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে জোহারান মামদানির উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা টানা শুরু হয়ে গেছে। এর কারণ শুধু তাঁদের বিপরীতমুখী আদর্শের জন্য নয়, বরং মামদানি নিজেই তাঁর প্রচারকে ট্রাম্পের ধারার রাজনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

মামদানি ঘোষণা করেছেন, ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন—একজন প্রগতিশীল মুসলিম অভিবাসী, যে সত্যিকারের বিশ্বাস থেকে লড়ে।’ এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, মামদানির প্রার্থিতা ট্রাম্পের রাজনীতির প্রতিক্রিয়াস্বরূপ—যা গত কয়েক বছরে জাতীয় ও নগর রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

এই তুলনাটা কেবল কথার তুলনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মামদানির জনপ্রিয় হয়ে ওঠা তৃণমূল-ভিত্তিক প্রচারাভিযান প্রচলিত ধারাকে ভেঙে দিয়েছে। ট্রাম্পও এভাবে প্রচলিত ধারাকে ভেঙেছিলেন। তবে মামদানির বার্তা ও সমর্থক জোট ট্রাম্পের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে কনিষ্ঠ এবং প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জোহারান মামদানি শুধু তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের জন্যই নয়, বরং তাঁর স্বল্প আর্থিক অবস্থা এবং ব্যতিক্রমধর্মী পারিবারিক পটভূমির কারণেও জাতীয় পর্যায়ে দৃষ্টি কেড়েছেন।

জোহারান মামদানির সম্পদ

ফোর্বস এবং সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৩৩ বছর বয়সী মামদানির মোট সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ২ লাখ থেকে ৩ লাখ ডলারের মধ্যে। তাঁর এ সম্পদ ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অনেক মার্কিন রাজনীতিকের বিপুল সম্পদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

মামদানির প্রধান আয়ের উৎস হলো নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে পাওয়া বাৎসরিক ১ লাখ ৪২ হাজার ডলারের বেতন। এর পাশাপাশি তিনি অতীতে ‘ইয়াং কার্ডামন’ নাম নিয়ে র‌্যাপ সংগীত করতেন, সেখান থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার ২৬৭ ডলারের রয়্যালটি পান। মামদানি উগান্ডার জিনজা শহরে চার একর জমির মালিক, যার মূল্য প্রায় দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলারের মধ্যে। তবে তাঁর উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবসায়িক মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই।

মামদানি জন্মগ্রহণ করেন উগান্ডায়। তাঁর বাবা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানি—হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মা মীরা নায়ার, একজন খ্যাতনামা ভারতীয়-মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা। প্রায় ২৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তিনি ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন এবং রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কুইন্স এলাকা থেকে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন।

নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়ার লক্ষ্যে তাঁর প্রচারাভিযান পরিচালিত হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের অনুদানের ভিত্তিতে। এ পর্যন্ত তিনি ৭০ লাখ ডলারের বেশি সংগ্রহ করেছেন ১৬ হাজারেরও বেশি ব্যক্তিগত দাতার কাছ থেকে, যাঁদের অধিকাংশই দিয়েছেন ছোট অঙ্কের অনুদান—যা কর্মজীবী, অভিবাসী ও প্রগতিশীল জনগণের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা তুলে ধরে।

ট্রাম্পের ব্যক্তিজীবন ও বিপরীত অবস্থানে মামদানির রাজনীতি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের রয়েছে বিপুল ব্যক্তিগত সম্পদ, আবাসন বা রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও বহু দশকের বাণিজ্যিক অভিজ্ঞতা। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে আজীবন নিউইয়র্কের বাসিন্দা ট্রাম্প তাঁর আর্থিক অবস্থান ও তারকাখ্যাতিকে ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক পরিচয় ও নীতিগত অগ্রাধিকারের রূপদান করতে।

যেখানে ট্রাম্পের সম্পদ আনুমানিক কয়েক বিলিয়ন ডলারের, সেখানে মামদানির আর্থিক তথ্য একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে—একজন প্রার্থী যার আর্থিক সক্ষমতা ব্যক্তিগত ব্যবসা বা উত্তরাধিকারসূত্রে অর্জিত নয়, বরং গড়ে উঠেছে জনসেবা ও সম্প্রদায়ের সহায়তার মাধ্যমে।

ট্রাম্প ও জোহরান মামদানির নীতিগত পার্থক্যও ততটাই তীক্ষ্ণ। মামদানি বাড়িভাড়া জমার হার বন্ধ রাখা, বিনা মূল্যে গণপরিবহন, সম্প্রসারিত সামাজিক আবাসন এবং ধনীদের ওপর অধিক কর আরোপ করে জনসেবা উন্নয়নের পক্ষে। এসব নীতিই ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণ শিথিল, পুলিশিং, এবং ধনীদের করছাড়-কেন্দ্রিক নীতির সরাসরি বিপরীতে অবস্থান করে।

মামদানির রাজনীতির কেন্দ্রে রয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ, অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা এবং সংহতির বার্তা; অন্যদিকে ট্রাম্পের ভাষ্য ঘুরে ফিরে এসেছে বহিষ্কার, সীমান্ত নিরাপত্তা ও প্রগতিশীল সংস্কারগুলোর বিপরীতে অবস্থানে।

মধ্যপ্রাচ্যসংক্রান্ত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কড়া সমালোচক হিসেবেও মামদানিকে চেনা যায়—বিশেষত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে। বিপরীতে, ট্রাম্প বরাবরই কট্টরপন্থী ইসরায়েলি নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থানে থেকেছেন।

ট্রাম্প ও মামদানির রাজনৈতিক লড়াই শুধু নীতিমালার প্রশ্নেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রচারের সময় নিউইয়র্কে ট্রাম্পপন্থী কয়েকজন, যার মধ্যে রয়েছেন রিপাবলিকান কাউন্সিলর ভিকি পেলাডিনো, খোলাখুলি মামদানিকে দেশচ্যুতির দাবি করেন—যা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যক্তিগত ও আদর্শগত তীব্রতাকে আরও স্পষ্ট করে। মামদানি জবাব দিয়ে বলেন, ‘মৃত্যু হুমকি। ইসলামভীতির বৈষম্য। এখন বসে থাকা একজন কাউন্সিলর যে আমার দেশচ্যুতি চান। যথেষ্ট হয়েছে। ট্রাম্প এবং তাঁর অনুগতরা এরকমই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। এটা আমাদের শহর ও সংবিধানের মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto