USA

ট্রাম্প কি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরি করতে পারবেন

আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ঝরে পড়ছে। শব্দের চেয়েও দ্রুতগতির ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামোতে আঘাত হানছে। আকাশে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তির হামলায় যদি যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো ও সীমিত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ হয়, তাহলে এমনই ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের দৃশ্য দেখা যেতে পারে।

এমনকি মার্কিন নাগরিকদের মাথার অনেক ওপরে যদি একটি ছোট পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটে, সেটাও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এ ধরনের বিস্ফোরণে তৈরি হবে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমএপি), যার কারণে আকাশে উড়তে থাকা উড়োজাহাজ মাটিতে পড়ে যাবে। মোবাইল, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি এমনকি পানি সরবরাহ ব্যবস্থা—সবই অকেজো হয়ে পড়বে।

নর্থ ক্যারোলাইনার মন্ট্রিট কলেজের লেখক ও অস্ত্র গবেষক উইলিয়াম ফোর্টসচেন বলেন, ‘আমরা ১০০ বছর পেছনে ফিরে যাব না, বরং সবকিছু হারাব। আমরা জানি না, সেখান থেকে কীভাবে আবার শুরু করব। এটা এমন হবে, যেন আমরা এক হাজার বছর পেছনে চলে গেছি এবং নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হবে।’

এই সম্ভাব্য বিপদের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘পরবর্তী প্রজন্মের’ একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরির কথা ভাবছেন, যার নাম দিয়েছেন ‘গোল্ডেন ডোম’।

অনেক বিশেষজ্ঞ একমত, এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা দরকার। তবে এর উচ্চব্যয় ও জটিলতা ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে কঠিন করে তুলতে পারে।

নির্বাহী এক আদেশে বলা হয়েছে, শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘আয়রন ডোম’ নামে যে ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা এখন ‘গোল্ডেন ডোম’-এ রূপ নিচ্ছে। আদেশে বলা হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের অস্ত্রগুলোর হুমকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও তীব্র ও জটিল হয়ে উঠছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর বিপদের কারণ হতে পারে।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিসিয়া বাজিলচিক বিবিসিকে বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) প্রতিহত করার জন্য তৈরি।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশের বড় আকারের আক্রমণ ঠেকাতে এই ব্যবস্থা একেবারেই অপর্যাপ্ত। এসব দেশের কাছে শত শত আইসিবিএম এবং হাজার হাজার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

কিন্তু রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিশালী দেশ এখন আরও উন্নত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে, যেগুলো শুধু প্রতিবেশী দেশ নয় বরং মহাসাগরের ওপারেও আঘাত হানতে সক্ষম।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা যেসব নতুন হুমকির কথা বলছেন, তার মধ্যে রয়েছে—শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির হাইপারসনিক অস্ত্র, ফ্র্যাকশনাল অরবিটাল বোম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম (এফওবিএস)। এই প্রযুক্তি মহাকাশ থেকে নির্দিষ্ট লক্ষে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে।

এই অস্ত্রগুলো সংখ্যায় কম হলেও কিন্তু মারাত্মক।

বাজিলচিক বলেন, ‘গোল্ডেন ডোম আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা নীতিকে রাশিয়া ও চীনের মতো বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের দিকে সরিয়ে নিচ্ছে। কারণ, তারা এখন এমন সব অস্ত্রে বিনিয়োগ করছে, যা আমরা আগে মোকাবিলা করিনি।’

‘গোল্ডেন ডোম’ দেখতে কেমন হবে

এখন পর্যন্ত হোয়াইট হাউস বা প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্পের নির্দিষ্ট কোনো বিবরণ দেননি। কারণ, এটি এখনো পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে।

২০ মে ট্রাম্প ওভাল অফিসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ব্যবস্থাটি ‘ভূমি, সমুদ্র এবং মহাকাশে একাধিক স্তরে কাজ করবে, যার মধ্যে থাকবে মহাকাশভিত্তিক সেন্সর ও প্রতিরোধব্যবস্থা।

ট্রাম্প বলেন, এই ব্যবস্থা এমনকি পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে বা মহাকাশ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে পারবে। এই কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য—যেমন ফ্লোরিডা, ইন্ডিয়ানা ও আলাস্কা থেকে পরিচালিত হবে।

স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গেটলাইন কংগ্রেসে জানান, ‘গোল্ডেন ডোম’ পূর্ববর্তী আইসিবিএম প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে। তবে এতে আরও স্তর যোগ হবে, যা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে পারবে। এমনকি শত্রুপক্ষ ওই ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়ার আগেই বা যেকোনো পর্যায়ে সেটি অকার্যকর করে দিতে পারবে।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিসিয়া বাজিলচিক বিবিসিকে বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) প্রতিহত করার জন্য তৈরি।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংস্থা ৪৪টি ভূমিভিত্তিক প্রতিরোধব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে থাকে। সেগুলো আলাস্কা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। এগুলো শুধু সীমিত হামলা প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশের বড় আকারের আক্রমণ ঠেকাতে এই ব্যবস্থা একেবারেই অপর্যাপ্ত। এসব দেশের কাছে শত শত আইসিবিএম এবং হাজার হাজার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ স্টেসি পেটিজন বলেন, বর্তমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেবল উত্তর কোরিয়ার জন্য তৈরি ছিল। এটা রাশিয়ার বিশাল অস্ত্রভান্ডার বা চীনের তুলনামূলক ছোট হলেও অনেক বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে পারবে না।

কংগ্রেসনাল রিসার্চ অফিস (সিবিও) বলেছে, এই ধরনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে মহাকাশে ‘শত শত বা হাজার হাজার’ প্ল্যাটফর্ম বসাতে হবে, যা হবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’: একটি উদাহরণ

ট্রাম্প গত মার্চে কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে প্রথম ‘গোল্ডেন ডোম’–এর ধারণাটি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের এটি আছে, আরও কিছু দেশের আছে, যুক্তরাষ্ট্রেরও অবশ্যই থাকা উচিত।’

ইসরায়েলের আয়রন ডোম মূলত ছোট আকারের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়, যা গাজা বা লেবানন থেকে ছোড়া হয়। ২০১১ সাল থেকে তারা এগুলো ব্যবহার করছে। তবে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে তারা আরও দুটি সিস্টেম ব্যবহার করে: ডেভিড’স স্লিং ও অ্যারো। ইরান বা ইয়েমেনের হুতিদের হামলা প্রতিরোধে এগুলো ব্যবহার করা হয়।

গোল্ডেন ডোম এই সীমা ছাড়িয়ে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাজিলচিক বলেন, এটি করতে হলে অনেক ধরনের প্রযুক্তি একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এবং এমন একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেম দরকার হবে, যেটা এখনো তৈরি হয়নি।

এটা কি সম্ভব

এই ধরনের একটি জটিল ব্যবস্থা তৈরি করা খুবই কঠিন এবং একসঙ্গে ব্যয়বহুলও বটে।

ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, এই প্রকল্প তাঁর মেয়াদের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব। এর জন্য ধাপে ধাপে মোট ১৭ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হবে, যার মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ইতিমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সিবিও বলছে, শুধু মহাকাশভিত্তিক ব্যবস্থার জন্যই ২০ বছরে ৫ হাজার ৪০২ কোটি ডলার খরচ হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, পুরো প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেটের বড় অংশ খেয়ে ফেলবে।

পেটিজন বলেন, এই সময়সীমা বাস্তবসম্মত নয়। এটি খুবই জটিল। প্রতিটি ধাপের আলাদা ঝুঁকি, খরচ ও সময়সীমা আছে। দ্রুত করতে গেলে ব্যয় ও ঝুঁকি আরও বাড়বে।

পেটিজন আরও বলেন, ‘আপনি সম্ভবত এমন কিছু তৈরি করবেন, যা পুরোপুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে না। এই প্রক্রিয়ায় ভুলত্রুটি হবেই এবং শেষ পর্যন্ত যা তৈরি হবে, তা হয়তো বড় ধরনের পরিবর্তন বা সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে।’

‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরির পরিকল্পনা একটি নতুন ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ শুরুর আশঙ্কাও সৃষ্টি করেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষরা এখন এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করা বা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে নিজেদের প্রস্তুতি জোরদার করবে।

এ ছাড়া এই প্রকল্পকে ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই পরিকল্পনা মহাকাশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

যাঁরা সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁরা এসব উদ্বেগে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁদের যুক্তি, সম্ভাব্য শত্রুরা এমনিতেই আক্রমণাত্মক অস্ত্রে অনেক বেশি বিনিয়োগ করছে।

বাজিলচিক বলেন, ‘গোল্ডেন ডোম আমাদের শত্রুদের কৌশলগত হিসাব পাল্টে দেবে। এটি তাদের আক্রমণ চালানোর সাহস কমাবে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।’

নর্থ ক্যারোলাইনার মন্ট্রিট কলেজের লেখক ও অস্ত্র গবেষক উইলিয়াম ফোর্টসচেন বলেন, গোল্ডেন ডোম আংশিকভাবেও তৈরি হলে, তা ভয়ংকর পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

ফোর্টসচেন আরও বলেন, ‘তাহলে আমি অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারব। আমাদের এই ধরনের একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থার খুবই দরকার। গোল্ডেন ডোমই এর সমাধান।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor