International

ট্রাম্প কি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন

হোয়াইট হাউজ ছাড়ার চার বছর পর আবারো সেই কার্যালয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি। হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের কারণে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বড় পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ বিশ্বে বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ এবং অনিশ্চয়তার ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে আমূল পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি তিনি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন।

নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় ট্রাম্পকে একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে পারেন। তবে সেটা কীভাবে করবেন সেই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য তিনি কিছু বলতে চাননি।

ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়েছিল, তিনি প্রেসিডেন্টের গদিতে থাকলে এত প্রাণ যেতে দিতেন না। অনেক আগেই দুই দেশের সমস্যা মিটিয়ে দিতেন। ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন— উভয়ের সঙ্গেই তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। আর সেই কারণে দুই রাষ্ট্রনেতাকে যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি করাতে বেশি সময় তার লাগবে না।

ট্রাম্প জোর দিয়ে আরও বলেন যে, বাইডেনকে যে ভরসা পুতিন এবং জেলেনস্কি করেন, তার থেকে বেশি তাকে করেন। তবে রাশিয়ার সঙ্গে কখনওই যুদ্ধ করতে যাওয়া উচিত হয়নি জেলেনেস্কির। তার অভিযোগ, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধান না করিয়ে যুদ্ধে উস্কানি দিয়েছেন বাইডেন। ইউক্রেনের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। আর সে কারণেই এত সমস্যা।

ট্রাম্পের কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট যে, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরেই ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য চাপ দিতে পারেন তিনি। একই সঙ্গে জেলেনেস্কিকে ডনবাসসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দিতেও বলা হতে পারে। দুই দেশকেই সীমান্ত এলাকা থেকে সেনা সরানোর কথাও বলা হতে পারে।

পাশাপাশি, বাইডেন জেলেনেস্কিকে যেভাবে অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে মদত জুগিয়েছেন, তা না-ও করতে পারে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সরকার। ফলে ‘নিরুপায়’ হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে রাজি হয়ে যেতে পারেন জেলেনস্কি।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরেই আমেরিকার নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ন্যাটোর বাইরেই থাকবে ইউক্রেন। নিরপেক্ষ থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে জেলেনস্কি সরকারকে। কয়েকটি অঞ্চলও রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হতে পারে তাকে।

এদিকে পুতিন এবং ট্রাম্পের পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সর্বজনবিদিত। গত মাসে মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড এক প্রতিবেদনে দাবি করেছেন, ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস ত্যাগের পর থেকে এ পর্যন্ত গোপনে অন্তত ৭ বার পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রাম্প। সাক্ষাৎকারে তাকে এ বিষয়েও প্রশ্ন করেছিল এনবিসি।

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না, তবে আমি আপনাকে বলব যে যদি আমি (ফোন) করেও থাকি, তা হলে তা নিশ্চিতভাবেই একটি স্মার্ট কাজ। আমি যদি মানুষের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হই, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারি, সেটি অবশ্যই ভালো দিক; এতে খারাপ কিছু নেই, তার (পুতিন) কাছে অন্তত ২ হাজার পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, আমাদের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাও প্রায় তেমনই।’

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন পুতিন। বিপরীতে ট্রাম্পও এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শিগগির পুতিনের সঙ্গে কথা হবে তার। 

ট্রাম্পের জয়ের পর বৃহস্পতিবার প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্যে পুতিন বলেছেন, ‘গত জুলাইয়ে পেনসিলভেনিয়ায় এক নির্বাচনি সমাবেশে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার সময় সত্যিকারের সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি (ট্রাম্প)। আমার মতে, তিনি অত্যন্ত সঠিকভাবে, সাহসীভাবে, একজন সত্যিকারের মানুষের পরিচয় দিয়েছেন।’

তবে মোটা দাগে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প যদি যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেন তবে তা ইউক্রেনের জন্য কোনো সুখকর পরিস্থিতি বয়ে আনবে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প যেহেতু চান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হোক, সে ক্ষেত্রে তিনি ইউক্রেনকে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারেন। এ সম্ভাবনাটাই সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্লেষকদের লেখায় এমন ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে। এভাবে ইউক্রেনকে চাপে ফেলে যুদ্ধের সমাপ্তি টানার হয়তো একটা পরিকল্পনা তার আছে। কিন্তু এ পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত, তা সময়ই বলে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button