ট্রাম্প কি সব প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন!
২০শে জানুয়ারি শপথ নেয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের। তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানা অঙ্ক। নানা হিসাব নিকাশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, বিশ্ব অর্থনীতিতে কি প্রভাব পড়বে তার প্রেসিডেন্সির সময়ে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে খুব বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি আছে তার। তার এজেন্ডার মধ্যে আছে বিপর্যয়কর মুদ্রাস্ফীতি সংকটের ইতি টানা। শুল্ক বাড়ানো। ট্যাক্সে বড় কর্তন। বিভিন্ন রকম রেজ্যুলুশন। সরকারের আকার। ট্রাম্প মনে করেন এসব ইস্যু একসঙ্গে মিলে তার দেশের অর্থনীতিকে সবল করে তুলবে। মার্কিনিদের মধ্যে স্বপ্ন পুনরুজ্জীবিত হবে। এ মাসের শুরুর দিকে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক পোডিয়ামে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- ‘ব্যবসার একটি মহান ও সুন্দর স্বর্ণালী যুগ শুরু করতে যাচ্ছি আমরা’। কিন্তু তাকে সতর্ক করা হচ্ছে যে, তিনি যেসব নীতির কথা বলেছেন, তার অনেকটাই অর্থনীতিকে সহায়তা করার চেয়ে ক্ষতি করতে পারে বেশি। ট্রাম্প তার পরিকল্পনাগুলোকে সামনে ঠেলে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, তাকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে কাজ করতে হবে। এর ফলে তার দেয়া সব প্রতিশ্রুতি পূরণ কঠিন হয়ে পড়বে।
ক্যাটো ইনস্টিটিউটের বাজেট ও এনটাইটেলমেন্ট বিষয়ক পরিচালক রোমিনা বোচ্চিয়া বলেন, এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করার কোনো সুস্পষ্ট পথ নেই। কারণ, এর একটির সঙ্গে অন্যটি সাংঘর্ষিক। ট্রাম্প বার বার তার প্রতিশ্রুতিতে বলেছেন- জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে। কিন্তু বিবিসির খবরে বলা হচ্ছে, এটা একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিশ্রুতি। কারণ, কোনো কিছুর দাম বেড়ে গেলে তা কমার ঘটনা বিরল। মুদ্রাস্ফীতি সাধারণত পণ্যের দামের মাত্রা বোঝায় না। কি হারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তা বোঝায়। এরই মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি অনেকটা সহনীয় অবস্থায় এসেছে। তবে মুদ্রাস্ফীতি একেবারে কমিয়ে আনা খুব কঠিন বিষয়। ট্রাম্প জ্বালানি খরচ কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তেল ও গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনিতেই সেখানে এরই মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ উত্তোলন হয়। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি এবং জ্বালানি মূল্যকে প্রভাবিত করে যেসব শক্তি বা বিষয় তা প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, ট্যাক্স কর্তন, শুল্ক ও অভিবাসী প্রত্যাবর্তনের মতো ট্রাম্পের অনেক ধারণা সমস্যাকে আরও খারাপ করবে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া সব রকম পণ্যের ওপর শতকরা কমপক্ষে ১০ ভাগ ট্যাক্স আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে এই শুল্ক বেড়ে শতকরা কমপক্ষে ৬০ ভাগ হতে পারে। এরপরই তিনি কানাডা, মেক্সিকো এবং ডেনমার্কের মতো বিশেষ কিছু মিত্র দেশের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্পের কিছু উপদেষ্টা মনে করছেন শুল্ক আরোপের বিষয়টি দেশগুলোকে অন্য ইস্যুতে সংলাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হবে। এর মধ্যে আছে সীমান্ত নিরাপত্তা। কিন্তু এরই মধ্যে জল্পনা ছড়িয়েছে যে, ট্রাম্প যদি এত আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেন তাহলে চলমান অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পণ্যমূল্য আরও বেড়ে যেতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পকেট থেকে অর্থ বেরিয়ে যাবে। বিদেশিদেরকে শাস্তি দিতে গিয়ে তিনি নিজের দেশের কোম্পানিগুলোকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন। ওদিকে রিপাবলিকান দলের যাবজ্জীবন সদস্য বেন মাউরার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কলকারখানায় উৎপাদন পুনরুজ্জীবিত করতে বিস্তৃত লক্ষ্য নেয়া উচিত ট্রাম্পের।