International

ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ চান: যে চার ধারায় এই গাথা চলতে থাকতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আবারও গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের অনেকাংশে স্বায়ত্তশাসিত একটি অঞ্চল। একই সঙ্গে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালে প্রথমবার গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এবার তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে। দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রয়োজনে অর্থনৈতিক বা সামরিক বলপ্রয়োগের কথাও উড়িয়ে দেননি তিনি।

ডেনমার্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়, এর আঞ্চলিক অখণ্ডতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।

এই ঘটনা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে নিজের অবস্থানটি গুছিয়ে নেওয়া।

সহযোগী অধ্যাপক মার্ক জ্যাকবসেন, দ্য রয়্যাল ড্যানিশ ডিফেন্স কলেজ।

এখন প্রশ্ন উঠছে, ৮০ শতাংশ বরফ আর নিচে খনিজ সম্পদের সুপ্ত মজুত থাকা—এমন এক বিশাল একটি ভূখণ্ড নিয়ে দুই ন্যাটো মিত্রের মতবিরোধের প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে থামে? পাশাপাশি ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রিনল্যান্ডের ৫৬ হাজার মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এই পরিস্থিতির চূড়ান্ত ফলাফলের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে?
সামনে গ্রিনল্যান্ডের জন্য সম্ভাব্য যে চারটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।

ট্রাম্প আগ্রহ হারাবেন, কিছুই হবে না

কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প নিছক ফাঁকা হুংকার ছেড়েছেন। এটা তিনি করেছেন ডেনমার্ককে দিয়ে গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য। অঞ্চলটিতে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চায় রাশিয়া ও চীন। সেই হুমকির মুখেই ট্রাম্পের এই তৎপরতা।

সুমেরু অঞ্চলের নিরাপত্তায় গত মাসে ১৫০ কোটি ডলারের নতুন একটি সামরিক তহবিল বরাদ্দ করেছে ডেনমার্ক। ট্রাম্পের মন্তব্যের আগেই এই তহবিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর ঘোষণাটি আসে ট্রাম্পের মন্তব্যের পর। এ ঘটনাকে ‘ভাগ্যের পরিহাস’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ড্যানিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

পলিটিকেন পত্রিকার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক এলিসাবেথ ভেইন বলেন, ‘ট্রাম্পের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, ডেনমার্ককে আর্কটিকে তার বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করতে হবে, নয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে তা করতে দিতে হবে।’

কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প নিছক ফাঁকা হুংকার ছেড়েছেন। এটা তিনি করেছেন ডেনমার্ককে দিয়ে গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ চান

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ চানফাইল

দ্য রয়্যাল ড্যানিশ ডিফেন্স কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক জ্যাকবসেন মনে করেন, এই ঘটনা ট্রাম্পের ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে নিজের অবস্থানটি গুছিয়ে নেওয়া’। অপর দিকে স্বাধীনতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে আন্তর্জাতিক কর্তৃত্ব বাড়াতে এই উপলক্ষ ব্যবহার করছে গ্রিনল্যান্ড।

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের আগ্রহ হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন অধ্যাপক জ্যাকবসেন। তিনি বলেন, তারপরও বিষয়টিকে জোরালো আলোর নিচে নিয়ে এলেন ট্রাম্প।

অনেক বছর ধরেই গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এখন এই বিতর্ক বিপরীত দিকেও মোড় নিতে পারে।
এলিসাবেথ ভেইন বলেন, ‘আমি কয়েক দিন ধরে লক্ষ করছি গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বেশ রয়েসয়ে কথা বলছেন। যেমন হ্যাঁ, আমরা স্বাধীনতা চাই, তবে সেটা দীর্ঘ মেয়াদে।’

সুমেরু অঞ্চলের নিরাপত্তায় গত মাসে ১৫০ কোটি ডলারের নতুন একটি সামরিক তহবিল বরাদ্দ করেছে ডেনমার্ক।

স্বাধীনতার পক্ষে ভোট, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

গ্রিনল্যান্ডের সবাই এ বিষয়ে একমত যে শেষ পর্যন্ত তারা স্বাধীনতা অর্জন করবে। তারা বিশ্বাস করে গ্রিনল্যান্ড যদি স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়, তাহলে ডেনমার্ক তা মেনে নেবে ও স্বীকৃতি দেবে।

তবে স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো খাতে ডেনমার্ক থেকে এখন তারা যে ভর্তুকি পায়, তেমনটা পাওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়া গ্রিনল্যান্ডের মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেবে না বলেই মনে হচ্ছে।

ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক উলরিক গাদ বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এখন একরোখা অবস্থান নিলেও অর্থনীতি ও সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার আস্থাযোগ্য বয়ান তাকে দিতে হবে।’
আরেকটি সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ হলো একটি স্বাধীন জোট। বর্তমানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া ও পালাউয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এমন জোট রয়েছে।

এর আগে গ্রিনল্যান্ড ও ফারো দ্বীপপুঞ্জের জন্য এ ধরনের জোটের বিরোধিতা করতে দেখা গেছে ডেনমার্ককে। তবে উলরিক গাদের মতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মিতে ফ্রেডেরিকসেন এর কট্টর বিরোধী নন।

যদি তারা (যুক্তরাষ্ট্র) গ্রিনল্যান্ড আক্রমণ করে, তাহলে তা হবে ন্যাটোর ওপর আগ্রাসনের শামিল। সুতরাং সেখানেই এটা থামাতে হবে।

এলিসাবেথ ভেইন, পলিটিকেন পত্রিকার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক।

গ্রিনল্যান্ডের হিমশৈলের কাছে মাছ ধরার নৌকা

গ্রিনল্যান্ডের হিমশৈলের কাছে মাছ ধরার নৌকা

উলরিক গাদ আরও বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ড্যানিশদের বোঝাপড়া ২০ বছর আগের তুলনায় অনেক ভালো।’

গ্রিনল্যান্ড যদি ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে তারা রেহাই পাবে না। আমেরিকানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে কখনো একেবারে চলে যায়নি। এটিকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে তারা।

১৯৫১ সালে হওয়া একটি চুক্তিতে দ্বীপটির ওপর ডেনমার্কের মৌলিক সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্র যা চায়, তাই দেওয়া হয়েছে।
উলরিক গাদ বলছেন, দ্বীপটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেমন হবে, এ নিয়ে বিগত দুটি সরকারের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এসেছেন গ্রিনল্যান্ডের কর্মকর্তারা।

ট্রাম্প অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে পারেন

এমন গুঞ্জন রয়েছে যে অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্পের বকাবাজিই ডেনমার্কের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। যুক্তরাষ্ট্র যদি দেশটির অথবা ইইউর পণ্যের ওপর ব্যাপকভাবে শুল্ক বাড়ায়, তাহলে গ্রিনল্যান্ড নিয়ে কিছু ছাড় দিতে বাধ্য হবে ডেনমার্ক।

অধ্যাপক জ্যাকবসেন বলেছেন, ডেনমার্ক সরকার এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন ট্রাম্প। এটা হলে ইউরোপের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ডেনমার্ক ও ইউরোপের কিছু কোম্পানি এখন যুক্তরাষ্ট্রেই কারখানা স্থাপনের চিন্তা করছে।

এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ডেনমার্কের ওষুধশিল্পে, যা দেশটির অন্যতম প্রধান শিল্প খাত। ডেনমার্ক থেকে ইনসুলিন ও শ্রবণযন্ত্র ছাড়াও ড্যানিশ কোম্পানি নভো নরডিস্কের তৈরি ডায়াবেটিসের ওষুধ ওজেম্পিক আমাদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ইনসুলিনের যে চাহিদা, তার বড় অংশই যায় ডেনমার্ক থেকে।

অনেক বছর ধরেই গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এখন এই বিতর্ক বিপরীত দিকেও মোড় নিতে পারে।

গ্রিনল্যান্ড আক্রমণ করতে পারেন ট্রাম্প

গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারেন, এমন ঝুঁকি খুবই কম। তবে গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক পদক্ষেপের বিষয়টিও ট্রাম্প উড়িয়ে দেননি।

ইতিমধ্যে গ্রিনল্যান্ডে নিজেদের ঘাঁটি ও প্রচুর সৈন্য থাকায় দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হবে না।

গ্রিনল্যান্ডের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কার্যত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক জ্যাকবসেন বলেন, ট্রাম্প ঠিকঠাক না জেনেই এসব মন্তব্য করেছেন এবং বিষয়টি তিনি ভালোভাবে বুঝতেও পারেননি।

সে কথা যাক, গ্রিনল্যান্ডে ওয়াশিংটন যদি সামরিক শক্তির ব্যবহার করে, তাহলে এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে উঠবে।

ভেইন বলেন, ‘যদি তারা গ্রিনল্যান্ড আক্রমণ করে, তাহলে তা হবে ন্যাটোর ওপর আগ্রাসনের শামিল। সুতরাং সেখানেই এটা থামাতে হবে। তখন জোটের অনুচ্ছেদ ৫ (ন্যাটো জোটভুক্ত কোনো দেশে হামলা হলে অন্য দেশ তা প্রতিহত করবে) সক্রিয় করতে হবে। আর যদি ন্যাটোর সদস্য কোনো দেশ জোটভুক্ত অন্য কোনো দেশে আক্রমণ করে, তাহলে তো আর ন্যাটোই থাকবে না।’

গাদ বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যেভাবে তাইওয়ান নিয়ে কথা বলেন এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন যেমন ইউক্রেন নিয়ে কথা বলেন, একই সুরে গ্রিনল্যান্ড নিয়ে কথা বলছেন ট্রাম্প।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor