Trending

ট্রাম্প ট্যাক্সের বোঝা গার্মেন্টে

♦ ২ থেকে ৫ শতাংশ হারে শুল্ক চাপিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতারা ♦ এক প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার শুল্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত বাড়তি শুল্কের বোঝা পড়তে শুরু করেছে দেশের পোশাকশিল্পে। এরই মধ্যে ক্রেতারা তাদের অর্ডারের বিপরীতে ২ থেকে ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্কের দায় চাপিয়ে দিয়েছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের পরিমাণ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের পোশাকশিল্পের ক্রয়াদেশ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাসের জন্য ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করলেও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ বহাল রাখে দেশটি। এখন সেই ১০ শতাংশ শুল্কের ভাগ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের পোশাকশিল্পের ওপর।

নিট তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যদিও মার্কিন বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে; তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক পরিশোধের দায় ক্রেতারা এরই মধ্যে চাপিয়ে দিচ্ছেন আমাদের ওপর। প্রচলিত শুল্কের অতিরিক্ত যে ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রয়েছে, সেখান থেকে কোনো কারখানাকে ৫, কাউকে ৩, কাউকে বা ২ শতাংশ হারে শুল্ক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ ক্রয়াদেশ ধরে রাখতে গার্মেন্ট কারখানাগুলোও চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক পরিশোধে বাধ্য হচ্ছে বলে জানান তিনি। বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট আরও জানান, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার কারণে চট্টগ্রামের একটি তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানকে একাই ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয়েছে, দেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৯ কোটি টাকা।

মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রে ২২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। এপ্রিলের রপ্তানির তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। শুল্কারোপের পর দেশটির বাজারে রপ্তানির পরিমাণ কত হয় তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে গার্মেন্ট মালিকদের। অতিরিক্ত শুল্ক অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জানান, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, শ্রমিক আন্দোলনসহ নানান ইস্যুতে এমনিতেই চাপে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। পশ্চিমা দেশগুলোর মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণেও ক্রয়াদেশ কমে গেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অতিরিক্ত শুল্কের চাপ পোশাক কারখানাগুলোর উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ড্রাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলমান থাকলেও তিন মাসের স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পর নতুন ট্যারিফ কত হবে তা কারও জানা নেই। ট্রাম্পের ট্যারিফ কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা পর্যায়ে তৈরি পোশাক বিক্রি ৩২ শতাংশ কমে যাবে বলে দেশটির একটি জরিপে বলা হয়েছে। কারণ শুল্কের কারণে পণ্যের খুচরা মূল্য বেড়ে গেলে ভোক্তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দেবেন। আর খুচরা বিক্রি কমে গেলে পশ্চিমা ক্রেতারাও তাদের অর্ডার কাটছাঁট করবেন। ফলে এটি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto