ট্রাম্প-পুতিনের সংলাপকে আশাব্যঞ্জক মনে করছে রাশিয়া

ক্রেমলিন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আলোচনাকে তারা ‘প্রতিশ্রুতিশীল’ মনে করছে। একই সঙ্গে, দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়া কখনোই ছাড়বে না বলেও জোরালো অবস্থান জানিয়েছে ক্রেমলিন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এ মাসের শুরুর দিকে পুতিনকে ফোন করে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন, যা পশ্চিমা নীতির বিপরীতে অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দেয়। রাশিয়া এটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকে তিন বছরের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়েছে এই ফোনালাপ।
এরপর সৌদি আরবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, তবে এই আলোচনায় ইউক্রেন বা ইউরোপকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এটি দুই ব্যতিক্রমী নেতার সংলাপ, যা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের রাজনৈতিক ইচ্ছার বাস্তবায়নে যেন কোনো বাধা না আসে, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ইউক্রেন ও ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আলোচনা রাশিয়া ও ইউক্রেনকে কোনো সমঝোতার দিকে নিয়ে যেতে পারবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।
দখলকৃত ভূখণ্ড ছাড়বে না রাশিয়া
দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধ বন্ধের নামে রাশিয়া কোনোভাবেই দখল করা ভূখণ্ড ফেরত দেবে না। তিনি বলেন, ইউক্রেনের যে অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে, সেগুলো নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতার সুযোগ নেই। এগুলো কখনোই বিক্রি করা হবে না—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকায় নিজেদের পক্ষে গণভোট আয়োজন করেছিল, যাকে ইউক্রেন, পশ্চিমা বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ‘প্রহসনমূলক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
‘ঈশ্বরের ইচ্ছায়’ রাশিয়া রক্ষা করছেন পুতিন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার সৈন্যদের উদ্দেশে বলেছেন, ঈশ্বর এবং ভাগ্যের ইচ্ছাতেই আমাদের ওপর রাশিয়াকে রক্ষার দায়িত্ব এসেছে। এটি কঠিন হলেও গৌরবময় এক দায়িত্ব। রবিবার রাশিয়ায় ‘ডিফেন্ডার অব দ্য ফাদারল্যান্ড ডে’ উদযাপন করা হয়, যা রুশ সেনাদের সম্মানে পালিত হয়। এই দিনের আগের রাতে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে ২৬৭টি আক্রমণ ড্রোন ছোড়ে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিয়েভের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, এর মধ্যে ১৩৮টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে, ১১৯টি ড্রোন মাঝপথে নিখোঁজ হয়েছে, আর বাকি ১০টির ভাগ্য সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।
জেলেনস্কির প্রতি ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান
এদিকে, মস্কো-প্রীতির মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন যে, ইউক্রেনই যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং জেলেনস্কি নিজ দেশে জনপ্রিয় নন।
জবাবে, জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইউক্রেনে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত শান্তি অর্জন করতে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইউরোপ, আমেরিকা এবং শান্তিপ্রিয় প্রতিটি দেশের সমন্বিত শক্তি প্রয়োজন।
ক্রেমলিন অবশ্য ট্রাম্প ও জেলেনস্কির এই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে বেশ সন্তুষ্ট বলে মনে হয়েছে। পেসকভ বলেন, জেলেনস্কি বারবার মার্কিন নেতাদের বিরুদ্ধে অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করছেন। কোনো রাষ্ট্রপ্রধান এটি মেনে নেবে না, তাই ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক।
মার্কিন সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত ফ্রান্স-ব্রিটেন
ট্রাম্পের এই নীতিগত পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা বিশ্ব এখন নতুন করে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তারা ইউক্রেনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য আলোচনা করবেন।