ডব্লিউটিটিসির পূর্বাভাস: ২০৩৩ সালে পর্যটন খাতের আকার হবে ১৫.৫০ লাখ কোটি ডলার
বিশ্বের পর্যটন খাত বড় হচ্ছে।
মহামারির পর মানুষ আবার ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছেন। বলা যায়, আগের চেয়ে এ প্রবণতা বাড়ছে। ফলে পর্যটন খাতের আকার বাড়ছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটন খাত যেভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তাতে ২০৩৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পর্যটন খাতের আকার দাঁড়াবে ১৫ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ১৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ খাতের হিস্যাও স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। তখন এ খাতের হিস্যা দাঁড়াবে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ।
পর্যটন খাতের পরিসর বৃদ্ধি পেলেও তা এখনো মহামারির আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালের পর্যায়ে ফিরতে পারেনি। তবে এখন যে হারে বাড়ছে, তাতে ২০৩৩ সালে পর্যটন খাতের আকার ২০১৯ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ বাড়বে। বলা হচ্ছে, পর্যটন খাতের বিকাশে যথাযথ প্রণোদনা এবং চীনা নাগরিকদের পর্যটন প্রবণতা এ খাতের সম্প্রসারণে ভূমিকা পালন করবে। সম্প্রতি এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি)। খবর মানি কন্ট্রোল ডট কমের
দেশের শ্রমবাজারে পর্যটন খাতের অবদান নিয়েও আলোচনা হয়েছে প্রতিবেদনে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পর্যটন খাতে ২০৩৩ সালে ৪৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ২০১৯ সালে যেখানে ৩৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। অর্থাৎ বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের প্রতি নয়জনের একজন জড়িত থাকবেন পর্যটনের সঙ্গে। বৈশ্বিক পর্যটনের আকার কেবল বিস্তৃত হচ্ছে না, দ্রুতগতিতে সম্প্রসারণ করছে অর্থনীতি। বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন সংস্থার প্রেসিডেন্ট জুলিয়া সিম্পসন দাবি করেছেন, বৈশ্বিক জিডিপি বার্ষিক ২ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু পর্যটন খাতের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
মহামারির পর মানুষের অগ্রাধিকারে পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে ধনী মানুষেরা এখন বিলাসী পণ্য না কিনে বিলাসবহুল সেবার দিকে ঝুঁকছেন। ভ্রমণ বেড়েছে মানুষের। ফলে গত বছর বিলাসবহুল হোটেল-রিসোর্টে থাকা বাবদ বিশ্বের মানুষের ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে, যা পরিমাণে ২১১ বিলিয়ন বা ২১ হাজার ১০০ কোটি ডলার।
বিলাসবহুল অবকাশ যাপনের প্রবণতা বাড়ছে। ট্যুর অপারেটর ব্রিজেট ল্যাকির উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক স্কট ডান সিএনবিসিকে বলেন, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিলাসবহুল অবকাশ যাপনের জন্য আগাম কক্ষ ভাড়ার পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেড়েছে।
অবকাশ যাপনে আগাম কক্ষ সংরক্ষণের গড় ব্যয় ৩৫ হাজার ডলার। ধনীরা কী করছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ধনীরা উত্তর মেরুতে যাচ্ছেন বা ভ্যাটিকান সিটিতে—একদম ব্যক্তিগতভাবে সময় যাপনে আগ্রহ বাড়ছে তাঁদের। এমনকি নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা থেকে যাচ্ছেন। অথবা এমন জায়গায় যাচ্ছেন, যেখানে কেবল হেলিকপ্টার নিয়ে যাওয়া যায়। এ ছাড়া অতিধনীরা এখন মহাসাগরের তলদেশ ও মহাকাশ ভ্রমণেও যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে সেই প্রবণতা আরও বাড়বে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ব্রিজেট ল্যাকি আরও বলেন, ‘মহামারির কারণে আমাদের অতিথিদের ভ্রমণবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। অধিকাংশ অতিথি মনে করছেন, মাঝে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে, এখন তা পুষিয়ে নিতে হবে।’
বর্তমান পৃথিবীতে পর্যটন অর্থনীতির শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। পর্যটন খাতের আকার পরিমাপে সাধারণত দুটি বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়। সেটা হলো, কোনো দেশের নাগরিকেরা অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করার সময় কী পরিমাণ খরচ করছেন এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকেরা সে দেশে এসে কী পরিমাণ খরচ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ বার্ষিক দুই ট্রিলিয়ন বা দুই লাখ কোটি ডলার।
কিন্তু ডব্লিউটিটিসির হিসাবে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে সেই জায়গা হারাবে। ২০৩৩ সালে চীনের পর্যটন খাতের আকার দাঁড়াবে চার লাখ কোটি ডলার; চীনের অর্থনীতিতে যার হিস্যা হবে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটনশিল্পের আকার দাঁড়াবে তিন লাখ কোটি ডলার; অর্থনীতিতে যার হিস্যা দাঁড়াবে ১০ দশমিক ১ শতাংশ।
ডব্লিউটিটিসির হিসাবে, চলতি বছরের শেষ দিকে বৈশ্বিক পর্যটন খাত মহামারির আগের পর্যায়ে ফিরে যাবে। এরপর কেবল তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পালা, যার পালে হাওয়া দেবে মানুষের বদলে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গি। বিষয়টি সেই হিন্দি সিনেমার মতো— জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা—জীবন দ্বিতীয়বার পাওয়া যাবে না; তাই উপভোগ করে যাও। সেই উপভোগের নতুন ক্ষেত্র হচ্ছে বিলাসবহুল অবকাশ যাপন। ফলে পর্যটন খাতের বিকাশ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।