Trending

ডলারের দাম বৃদ্ধিতে ব্যয় বেড়েছে ২৬%

আট দিন আগে সরকারিভাবে মার্কিন ডলারের মূল্য প্রায় সাড়ে ৭ টাকা বাড়ানো হয়। এতেই পাইকারি বাজারে সব ধরনের ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়ছে। ১৩টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এসব পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বাড়তি মূল্যের কারণে ভোগ্য পণ্যের আমদানি আগের তুলনায় কমেছে।

এ ছাড়া আমদানি ও পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডলারের দাম বৃদ্ধির আগে মসলাপণ্য দারুচিনির কেজি ছিল ৩৮০ টাকা। এখন ১০০ টাকা বেড়ে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ২৬.৩১ শতাংশ। এর পর যে পণ্যটি বেড়েছে সেটি হলো পেঁয়াজ। ভারত সরকার পণ্যটি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পরও আমদানিকারকরা উচ্চ শুল্কের কারণে দেশটি থেকে পেঁয়াজ আনছেন না। ফলে দেশে পণ্যটির দাম বাড়ছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলারের বাড়তি মূল্য। এখন পেঁয়াজের দাম ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের (ভারত থেকে আসা) কেজি ছিল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা। এখন ৮০ টাকা। কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা।

কোরবানির ঈদে জিরার চাহিদা থাকে। ওই হিসেবে জিরার দামও বেড়েছে। গত ৮ মে পাইকারিতে জিরার কেজি ছিল ৫৯০ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকায়। কেজিতে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। লবঙ্গের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ শতাংশ। প্রতি কেজি দেড় হাজার টাকার লবঙ্গ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকায়। বেড়েছে ৩০০ টাকা। 

খোলা ময়দার দাম বেড়েছে ১৮.১৮ শতাংশ। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির আগের কেজি ছিল ৫৫ টাকা। এখন ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এদিকে মসলাপণ্য এলাচের দাম কয়েক দফা বাড়ার পর কিছুটা কমেছিল। কিন্তু ডলারের বাড়তি মূল্যের পর আরো ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সপ্তাহ আগে কেজিপ্রতি দাম ছিল সাড়ে তিন হাজার টাকা। এখন তিন হাজার ৯০০ টাকা। বেড়েছে ১১.৪২ শতাংশ। এদিকে আরেক মসলাপণ্য আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। আগে ছিল ১৯০ টাকা, এখন ২১০ টাকা। বৃদ্ধি পেয়েছে ১০.৫২ শতাংশ। রসুনের দামও বেড়েছে ৫.২৬ শতাংশ। আগে ছিল ১৯০ টাকা, এখন প্রতি কেজি ২০০ টাকা।

ডলারের বাড়তি মূল্যের আগে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল লিটার ১৪৫ টাকা। এখন ১৫৫ টাকা। বেড়েছে ৬.৮৯ শতাংশ। আটা ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬.২৫ শতাংশ বেড়েছে দাম। দেশি মসুর ডালের দাম কেজিতে ৭.১৪ শতাংশ বেড়েছে। ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। হলুদের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। আগে প্রতি কেজি ছিল ২৬০ টাকা, এখন ২৭৫ টাকা। ৫.৭৬ শতাংশ বেড়েছে। শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। সপ্তাহ আগে ছিল ৩২০ টাকা, এখন ৩৫০ টাকা। ৯.৩৭ শতাংশ বেড়েছে। 

খাতুনগঞ্জের আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক লাফে ডলারের দাম সরকারিভাবে প্রায় সাড়ে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া এখন সরকারি নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করেও ডলার মিলছে না। ফলে শতভাগ আমদানি করা ভোগ্য পণ্যের বাজারেই ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। আর ডলারের দাম বাড়ার কারণে ভোগ্য পণ্যের আমদানি, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাই ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়ছে।
 
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, দেশে ঋণপত্র খুলতে দিতে হচ্ছে বাড়তি মার্জিন। এর মধ্যে ডলারসংকট আছে। সরকারিভাবে ডলারের দাম বৃদ্ধি করায় ভোগ্য পণ্যের বাজার এখন অস্থির। ফলে সব ধরনের ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির পরিমাণ আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে। সামনের কোরবানিতে আরো বাড়বে।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম জানান, ডলারের দাম বাড়ার আগে যেসব ভোগ্য পণ্যের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল, এখন সেসব পণ্য দেশে আসছে। কিন্তু দাম দিতে হচ্ছে পণ্য দেশে পৌঁছানোর পর। ডলারের বাড়তি মূল্যে পণ্যের দাম পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ জন্য ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button