Bangladesh

ডলারের পরে এবার টাকার ঘাটতি, চাহিদামতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না

বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া ২৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পিডিবির পাওনা ২৮ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের কাছে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার চাহিদা জানিয়েছে পিডিবি

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে ২৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি; কিন্তু তা দিয়ে ১৪ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদাই পূরণ করা যাচ্ছে না। মূলত টাকার অভাবে পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদামতো বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়ে আছে, ফলে প্রয়োজনীয় জ্বালানি কেনা যাচ্ছে না। এর মধ্যেও চলছে অব্যবস্থাপনা-অপচয়। এসব কারণে ঢাকার বাইরে একটি বড় অংশে নিয়মিত চলছে লোডশেডিং।

চুক্তি অনুসারে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা তা পাইকারি দামে বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। গত এক বছরে দুই দফায় পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

এরপরও বিদ্যুৎ খাতের ঘাটতি পূরণে সরকার ভর্তুকি দেয়। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, গত এপ্রিল পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পাওনা ২৮ হাজার কোটি টাকা। এ ভর্তুকির টাকা নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। এতে পিডিবির কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের কাছে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার চাহিদা জানিয়েছে পিডিবি।

বর্তমান সক্ষমতায় চাইলে ১৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু নানা কারণে তা করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়াও আছে। তবে ভর্তুকির টাকা বাজেটে বরাদ্দ আছে, এটা ধাপে ধাপে ছাড় করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী

গত মাসে মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। ভর্তুকির পাওনা আদায়ে গতকাল মঙ্গলবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবি। চলতি মাসে আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মাসের প্রথম সপ্তাহেই এটি করা হতে পারে। যদিও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমাতে নিয়মিত তাগাদা দিচ্ছে অর্থ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা ডলার সাশ্রয়ে লম্বা সময় ধরে আমদানি কমানো হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। তাই চাইলেও এখন চাহিদামতো টাকা দিতে পারবে না অর্থ বিভাগ। আবার নির্বাচন সামনে রেখে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরও সুযোগ নেই। তাই শিগগিরই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া শোধ করতে পারবে না পিডিবি।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সক্ষমতায় চাইলে ১৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু নানা কারণে তা করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়াও আছে। তবে ভর্তুকির টাকা বাজেটে বরাদ্দ আছে, এটা ধাপে ধাপে ছাড় করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া এর মধ্যে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো একের পর এক উৎপাদনে আসছে। এতে উৎপাদন খরচও কমে আসবে।

গ্রামেই বেশি লোডশেডিং

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) জানাচ্ছে, গত সোমবারও ঘণ্টায় সর্বোচ্চ দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে। এরপর রাতে বৃষ্টি নামার পর চাহিদা কমায় লোডশেডিং কমেছে। গতকাল দিনের বেলায়ও ঘণ্টায় এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং ছিল। তবে ঢাকা শহরে কোনো লোডশেডিং করা হচ্ছে না।

অবশ্য ঢাকার বাইরে অনেক জেলায় কয়েক ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে বলে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। শহর এলাকার চেয়ে গ্রামে এটা বেশি। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ বলছে, সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত গড়ে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি ছিল। এক বছরের বেশি সময় ধরেই এখানে লোডশেডিং চলছে। আর গাজীপুরে লোডশেডিং করা হয় ২৪ দশমিক ১৩ ভাগ।

বগুড়ার শহর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী নর্দান ইলকট্রিসিটি কোম্পানির (নেসকো) পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হাসিবুর রহমান বলেন, গড়ে প্রতিদিন ঘাটতি ৭০ মেগাওয়াট। আর বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন জানান, দিনে রাতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। কিন্তু গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকছে নিয়মিত। গ্যাসভিত্তিক ১১ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে গড়ে উৎপাদন করা হচ্ছে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াটের মতো।

বসে থাকলেও দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ২৭টি থেকে বেড়ে গত দেড় দশকে বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে ১৫৩টি। বিচ্ছিন্ন চর, দুর্গম পাহাড়েও বিদ্যুৎ–সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্‌যাপন করা হয়েছে। কিন্তু সক্ষমতা থাকলেও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কারিগরি নানা কারণে একটি বড় অংশের বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে আছে। আর মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিন ভাগের এক ভাগ ভুগছে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের অভাবে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি পুরোপুরি বন্ধ, আবার কিছু কেন্দ্র থেকে সক্ষমতার আংশিক উৎপাদন হচ্ছে।

মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। কিন্তু গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকছে নিয়মিত। গ্যাসভিত্তিক ১১ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে গড়ে উৎপাদন করা হচ্ছে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াটের মতো। ফার্নেস তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে ৬৫টি। মোট উৎপাদন ক্ষমতা ছয় হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এর মধ্যে ২৫ থেকে ২৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে নিয়মিত উৎপাদন করতে পারছে না। এতে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সব মিলে গড়ে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক, চুক্তি অনুসারে প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ভাড়া দিতে হয় পিডিবির। এটি কেন্দ্র ভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্র ভাড়া ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিবি কেন্দ্র ভাড়া পরিশোধ করেছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্র ভাড়া ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিবি কেন্দ্র ভাড়া পরিশোধ করেছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া বিলের চাপ

দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি এখন বেসরকারি খাতের হাতে। প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় পিডিবির। গত এপ্রিল পর্যন্ত বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল জমেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

এরপর আরও তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এতে বকেয়া বিলের চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। টাকার অভাবে জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছে না বলে তারা কেন্দ্র বসিয়ে রাখছে। পিডিবির অনুরোধেও উৎপাদন করতে রাজি হচ্ছে না কেউ কেউ।

গত মার্চে ঝাড়খন্ডে নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে সরবরাহ শুরু হয়েছে। এরপর গত মাসের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইউনিটও বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমোদন নিয়েছে। যদিও এখন শুধু প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে তারা। সম্প্রতি তাদের প্রথম মাসের (মার্চ) বিদ্যুৎ বিল হিসেবে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর আরও তিন মাস হয়ে গেছে, এতে তাদের পাওনা হবে প্রায় ৩০ কোটি ডলার।

কোনো ব্যাকরণ মেনে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন হয়নি। ব্যক্তি খাতকে বেশি বেশি মুনাফা দিয়ে চুক্তি করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর তা চাপানো হয়েছে।

দাম বাড়িয়েও সুফল নেই

এখন পর্যন্ত গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। পাইকারি পর্যায়ে পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করছে ৬ টাকা ৭০ পয়সায়। তবে তাদের উৎপাদন খরচ প্রায় ১০ টাকা। মাঝখানে তা ১১ টাকা হয়। তবে বিশ্ববাজারে কয়লার দাম কমায় এটি কমেছে।

কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে খরচ আরও কমানোর সুযোগ ছিল। বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রায়ই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আদানির কেন্দ্র থেকে সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ আনা যাচ্ছে না। আবার গত জানুয়ারিতে গ্যাসের দাম ১৮১ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। বিল বকেয়ায় ফার্নেস তেলচালিত কেন্দ্র বন্ধ থাকায় চালাতে হচ্ছে ডিজেলচালিত কেন্দ্র।

অব্যবস্থাপনা ও প্রয়োজনের চেয়ে বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতা গড়ার পরিকল্পনাকে সংকটের জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ সবচেয়ে ব্যয়বহুল। গত জুনের মধ্যে সব ডিজেল কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ–ঘাটতি পূরণে এখনো চলছে এসব কেন্দ্র। পিডিবি সূত্র বলছে, বেসরকারি দুটি কেন্দ্র মিলে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন খরচ হচ্ছে প্রতি ইউনিট ২৭ টাকা। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় কোম্পানির দুটি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গড় উৎপাদন খরচ ২১ টাকা। বাধ্য হয়ে এসব কেন্দ্র চালাতে হচ্ছে পিডিবির। এতে লোকসানের বোঝা আরও বাড়ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গত এক বছর ধরেই বড় চ্যালেঞ্জ জ্বালানির সরবরাহ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রতি মাসে ১২৫ কোটি ডলার প্রয়োজন। ডলার–সংকটে কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাহত হচ্ছিল। বিদেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিলও দেওয়া যাচ্ছিল না।

তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় এ খাতের জন্য সম্প্রতি ডলার ছাড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বিদ্যুৎ খাতে ডলারের চাহিদার যে ঘাটতি ছিল, তা কিছুটা দূর হয়েছে। তবে তারল্যসংকট কাটছে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বিদ্যুৎ খাতবিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ব্যাকরণ মেনে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন হয়নি। ব্যক্তি খাতকে বেশি বেশি মুনাফা দিয়ে চুক্তি করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর তা চাপানো হয়েছে। তবুও ঘাটতি মেটাতে পারছে না পিডিবি। এখন নিয়মিত লোডশেডিং করছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি সরব ঘাতক।

Show More

8 Comments

  1. Having read this I believed it was very enlightening.
    I appreciate you finding the time and effort to
    put this informative article together. I once again find
    myself spending a significant amount of time both reading and leaving comments.
    But so what, it was still worth it!

    Also visit my page: vpn special coupon code

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d