Bangladesh

ডলার বাজার আরও অস্থির

কোনো কিছুতেই বাগে আসছে না ডলার বাজার। একদিকে দর বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। ডলার সংকটের কারণে নতুন এলসি খোলা কমিয়েছে বেশির ভাগ ব্যাংক।

অনেক ব্যাংক এখন আগের দেনা শোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১২২ থেকে ১২৪ টাকা দরে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করছে ১২৫ টাকা পর্যন্ত। খোলাবাজারে এক দিনে ৫ টাকা পর্যন্ত দর বেড়ে গতকাল নগদ ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৭ টাকায়।

এ পরিস্থিতিতে গতকাল বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনকারী প্রায় ২০ ব্যাংকের এমডি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সেখানে এবিবি ও বাফেদা নির্ধারিত দর মেনে ডলার বেচাকেনার জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমদানিতে কোনো ব্যাংক যেন ১১১ টাকার বেশি না দেয়, সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে ডলার সংকট চলছে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন কারণে অস্থিরতা বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ অর্থ পাচার। এদিকে প্রতিনিয়ত দর বৃদ্ধির কারণে বাড়তি মুনাফার আশায় প্রবাসী ও ব্যবসায়ী অনেকে এখন ডলার ধরে রাখছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে পরামর্শ নিচ্ছে। এসব বৈঠকে ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে অর্থ পাচার ও হুন্ডি প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের পরামর্শ এসেছে। এ ছাড়া বেনামি ও ভুয়া ঋণ ঠেকানো, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, তদারকি জোরদার ও ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, নির্বাচনের পর আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার আনা হবে। ডলার সরবরাহ বাড়লে ধীরে ধীরে দর বাজারভিত্তিক করা হবে। এ কারণে অনেকেই মনে করতে পারেন, আগামীতে ডলারের দর অনেক বাড়বে। যে কারণে ডলার ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ছে।

কয়েকজন ব্যাংকার জানান, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নতুন এলসি খোলা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে এখন উদ্বৃত্ত হয়েছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ কমার কারণে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ঋণ অনেক কমেছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক বিদেশি ব্যাংকের কাছে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। যে কারণে দর যাই হোক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার কিনছে। চলমান ব্যবসা ধরে রাখতেও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) নির্ধারিত দরের চেয়ে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দিচ্ছে।

জানা গেছে, বেশির ভাগ ব্যাংক যে দরে ডলার কিনছে বিক্রি করছে তার চেয়ে ১ থেকে ২ টাকা বেশিতে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিপোর্ট করছে বাফেদার নির্ধারিত দরেই। তবে তারা কৌশল অবলম্বন করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে যেন ধরা না পড়ে, সে জন্য আলাদা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আমদানিকারকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিচ্ছে। আবার বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস ও রপ্তানিকারক দিচ্ছে আলাদা হিসাবের মাধ্যমে। কোনো কোনো ব্যাংক আমদানিকারকের কাছ থেকে কোনো টাকা না নিয়ে বাজারের তুলনায় অর্ধেক সুদে আমানত নিয়ে পুষিয়ে নিচ্ছে। অবশ্য এর মধ্যেও কিছু ব্যাংক নির্ধারিত দরের বাইরে যাচ্ছে না। 

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান সমকালকে বলেন, ব্যাংক কোনোভাবেই লোকসান করবে না– এটাই বাস্তবতা। কেউ যদি বলে ১২৪ টাকায় ডলার কিনে ১১১ টাকা বিক্রি করতে হবে, তা কখনোই বাস্তবসম্মত নয়। ধরা যাক, এবিবি-বাফেদার বক্তব্য শুনে কোনো ব্যাংক প্রতি ডলারে ১৩ টাকা লোকসান করল। ওই ব্যাংক যদি বছরে ৫০ কোটি ডলারের এলসি খোলে, তাকে লোকসান দিতে হবে ৬৫০ কোটি টাকা। প্রতি ডলারে সাড়ে ৬ টাকা লোকসান করলেও গুনতে হবে ৩২৫ কোটি টাকা। এত টাকা মুনাফা করে এমন ব্যাংক খুব কমই আছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামানোর কথা জানিয়েছে। তবে গত অক্টোবর মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে। এ সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এক যুগেরও বেশি সময়ের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ডলারের দর এভাবে বাড়তে থাকলে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ কাজে আসবে না । 

আইএমএফের শর্তের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ডলারের দর ঠিক করে না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার মাধ্যমে একটি দর ঘোষণা করা হয়। এবিবি ও বাফেদার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলার কেনার দর ঠিক করা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। রেমিট্যান্সে সরকারি ও ব্যাংকের নিজস্ব প্রণোদনাসহ সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে অনেক ব্যাংক এখন ১২২ থেকে ১২৪ টাকায় ডলার কিনছে। আমদানিকারকদের কাছে ১২৫ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার বিক্রি করছে। 

জরুরি বৈঠকে যা হলো

গতকালের জরুরি বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, এবিবি-বাফেদা নির্ধারিত দর মেনে চলতে হবে। কোনো অবস্থাতেই আমদানিকারকদের কাছ থেকে ডলারের দর ১১১ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। কোনো ব্যাংক বাড়তি নিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কোনো কোনো ব্যাংকের এমডি বলেন, বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় প্রণোদনাসহ রেমিট্যান্সে ১১৬ টাকা দর যথেষ্ট। তবে সবাইকে এ দর মেনে চলতে হবে। সবাই একই দরে কিনলে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো আর বাড়তি দর চাইবে না। অসম প্রতিযোগিতা চলতে থাকলে দর বাড়তেই থাকবে।

বৈঠক শেষে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আরএফ হোসেন সমকালকে বলেন, ডলার বাজারের চলমান অস্থিরতা কমাতে আলোচনা হয়েছে। কোনো ব্যাংক নির্ধারিত দরের বাইরে গেলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা দেখবে। কোনো ব্যাংক দর না মানলে বাফেদার কিছু করার সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে সবাই মিলে স্থিতিশীল বাজার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো ব্যাংক যদি ১২৫ টাকা দর নেয়, সে ক্ষেত্রে আমদানিকারকের উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসে অভিযোগ করা। বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হচ্ছে।

বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, একেক ব্যাংক একেক রকম দর দেওয়ার পর বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো বলেছে, সবাই মিলে রেমিট্যান্সে ১১৬ টাকার বেশি যাবে না। তিনি বলেন, এবিবি বা বাফেদা শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে ঘোষিত দর মেনে চলছে কিনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা দেখবে।

খোলাবাজারে ডলার দরে রেকর্ড

গতকাল খোলাবাজারে রেকর্ড ১২৭ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। দিনের শুরুতেও যেখানে ১২৪ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে ছিল। বুধবারও প্রতি ডলার ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় বিক্রি হয়। আর চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রতি ডলারের দর ছিল ১২১ টাকা। গত সপ্তাহের শুরুতে যা ১১৯ টাকা ছিল। এর আগে গত বছরের আগস্টে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় উঠেছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে মানিচেঞ্জারে অভিযান পরিচালনা করে। মাঝে ৬টি মানিচেঞ্জার বন্ধসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়। তবে কোনো কিছুতেই বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না।

রিজার্ভ আরও কমে ২০ বিলিয়নের নিচে

গতকাল এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার দায় সমন্বয়ের পর রিজার্ভ নামে ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারে। বুধবার দিন শেষে যেখানে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Show More

8 Comments

  1. Whats up very nice blog!! Guy .. Beautiful .. Superb ..
    I will bookmark your blog and take the feeds additionally?
    I am glad to search out a lot of helpful information right here within the submit, we want work out more techniques in this regard, thank you for sharing.
    . . . . .

    Here is my web site … what does vpn do

  2. Can I simply just say what a comfort to uncover a person that truly understands what
    they are discussing on the web. You certainly understand how to bring a problem to
    light and make it important. More and more people should read
    this and understand this side of the story. I was surprised you’re not more
    popular because you surely have the gift.

    Also visit my web page; vpn special coupon code

  3. Hello I am so grateful I found your web site, I really found you
    by error, while I was researching on Yahoo for something else, Anyhow
    I am here now and would just like to say many thanks for a incredible post and a all round exciting blog (I also love the theme/design), I don’t have time to browse it all at
    the moment but I have bookmarked it and also included your RSS feeds, so
    when I have time I will be back to read a great deal more,
    Please do keep up the superb b.

    Also visit my website – vpn ucecf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button