ডলার সংকটে বিল পরিশোধ ব্যাহত
থমকে গেছে বেবিচকের ছয় মেগা প্রকল্প
যথাসময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় * বৈদেশিক মুদ্রা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি * কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি প্রয়োজন
ডলার সংকটে বিপাকে পড়েছে চার বিমানবন্দরের ছয় মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ। সময়মতো বিল পরিশোধ করতে না পারায় প্রকল্পগুলোর কাজের গতি পুরোপুরি থমকে গেছে। এ অবস্থায় প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ হওয়ার বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ৬টি প্রকল্পের ১টির কাজ চলতি বছর এবং বাকি ৫টি কাজ আগামী অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এসব প্রকল্পের কাজের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদান করতে হয়।
গত বছর থেকে এসব বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। অনাপত্তিপত্র না থাকায় ব্যাংকগুলোও সময়মতো অর্থছাড় করছে না। বিষয়টি সুরাহার জন্য মন্ত্রণালয়ের দারস্থ হয়েছে সংস্থাটি।
গত সপ্তাহে চলতি অর্থবছর ও আগামী অর্থবছরে এসব প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রায় চাহিদা তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাপী ডলার সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আশা করছি সংকট সুরাহা হবে। তবে প্রকল্পগুলোর কাজ যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৯.৯৭% আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৮.১৫%। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা কিন্তু ’২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিল বকেয়া রয়েছে ১১,৬৫,৮৫৫ মার্কিন ডলার। কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পটি কাজের অগ্রগতি ৭৯.৬২%, আর আর্থিক অগ্রগতি ৬৩.৬৮%। প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৫,২০,১২,৩৭০ মার্কিন ডলার। ২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ১,৯৯,০৪,৬৬৪ মার্কিন ডলার। হশাআবিতে রাডারসহ সিএনএস প্রকল্প কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬২%, আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৫%। প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ১,৭০,০০,০০০ ইউরো। ২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৯৩,১৮,০০০ ইউরো। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরামর্শক সেবা (ডিজাইন ফেইজ) প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২০%, আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৫%। প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৬৮০০০০ মার্কিন ডলার। ’২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৩৬৯৪১২৫ মার্কিন ডলার। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প কাজের অগ্রগতি ৮৫%, আর আর্থিক অগ্রগতি ৬০%। প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৭৫৫০০০০ মার্কিন ডলার। ’২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৩৬৯৪১২৫ মার্কিন ডলার। ওসমানী আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়) পরামর্শক সেবা (ডিজাইন ফেইজ) শীর্ষক প্রকল্প কাজের অগ্রগতি বিমানবন্দর ২৫%, আর আর্থিক অগ্রগতি ১০%। প্রকল্পটি ’২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৪৮৩৫০০ মার্কিন ডলার। ’২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৮৫৫০০ মার্কিন ডলার।
চলমান ৬টি প্রকল্পে ’২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ৬১৮৯১৭২৫ মার্কিন ডলার এবং ১৭০০০০০০ ইউরো। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা হবে ২৪৮৩৪২৮৯ মার্কিন ডলার এবং ৯৩১৮০০০ ইউরো।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বেবিচকের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আওতায় চলমান প্রকল্পসমূহ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে নিয়োজিত ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিপত্রের শর্ত মোতাবেক বৈদেশিক মুদ্রায় বিল পরিশোধ আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, অনুমোদিত ডিপিপিতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় নির্বাহের বিষয়ে যথাযথ সংস্থান রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে, বর্ণিত প্রকল্পসমূহ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদার বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বৈদেশিক মুদ্রায় বিল পরিশোধের অনাপত্তি গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যয় সীমিতকরণের বিষয়ে অধিকতর সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ প্রদান করা হয়। বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় সীমিতকরণের জন্য প্রকল্পসমূহের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন সম্ভবপর হয়নি।
বিষয়টি অতীব জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে চলমান অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ঠিকাদারের বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিলের বৈদেশিক মুদ্রার অংশ পরিশোধের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনাপত্তি গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।