Bangladesh

ডলার সংকট, খেলাপি ঋণ, আর ব্যাংক তছরুপের বছর

বছরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের চাপে ছিল দেশের অর্থনীতি। এর মধ্যে ব্যাংক খাত অন্যতম। বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অস্থিরতায় পার করেছে দেশের ব্যাংকিং খাত। রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল নিম্নমুখী। ডলার সংকটে ক্রাইসিসে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। হিসাবের গণনায় ছিল সমালোচনা। পরে আইএমএফ’র শর্তে বেরিয়ে আসে রিজার্ভ গণনায় হিসাবের গড়মিল। এর মধ্যেই খোলাবাজারে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে ডলারের দর উঠে ১২৯ টাকায়। খেলাপি ঋণের ভারে বিশৃঙ্খল ছিল আর্থিক খাত। খেলাপি ঋণেও রেকর্ড তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপন চরম তারল্য সংকটে দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে বেশিরভাগই ধারদেনা করে দৈনন্দিন খরচ মেটায়, যা নজিরবিহীন। এর মধ্যে ১৪ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতিতে রেকর্ড সৃষ্টি করে। আবার ৫ ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রমও হয়েছে। এ ছাড়া আমদানিও ছিল নিয়ন্ত্রিত। 

এমন কঠিন সময় দেশের অর্থনীতি আগে কখনো দেখেনি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের ঝুঁকি, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, ও তারল্য সংকটে চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের ব্যাংকিং খাত। তাই দেশের অর্থনীতির ধারা বজায় রাখতে বিভিন্ন খাতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা উঠে আসছে। সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে, যার কারণে তারল্য সংকট তীব্র হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা ছাড়া দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় এক প্রকার হিমশিম খাচ্ছে বলে জানান তারা। বছর শেষে সবার একটাই প্রত্যাশা, ভীতি, রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব এবং ডলার সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক লেনদেন ফিরে আসুক ব্যাংক খাতে।
ব্যাংকাররা জানান, বছরজুড়েই ছিল অর্থ সংকট। কমতে থাকে রিজার্ভ, উদ্বেগ তৈরি করে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এতকিছুর মধ্যেও কিছুটা আশা জাগায় শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া। সারা বছরই আলোচনায় ছিল আইএমএফ’র ঋণ। নানান নাটকীয়তার পরে এরই মধ্যে ঋণের দুই কিস্তি দিয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি এডিবি’র ঋণে কিছুটা বেড়েছে রিজার্ভ। শেষ আলোচনায় আসে টাকার সংকটে পাঁচ শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকের লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হওয়ার বিষয়।

ডলার কারসাজি: ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট দীর্ঘদিনের। ডলার বাজারে কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ে দেশি-বিদেশি ও রাষ্ট্রায়াত্ত ১০ ব্যাংক। এ ছাড়া নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ডলার বিক্রি করায় সতি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত ও ১০টিকে শোকজ করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় একাধিক প্রতিষ্ঠানকে। চালানো হয় গোয়েন্দা নজরদারি। ডলার সংকটের সমাধানে নেয়া হয় নানান পদক্ষেপ, তবে কোনো পদক্ষেপই কাজে আসেনি। 

সর্বোচ্চ দরে ডলার বিক্রির রেকর্ড: ডলারের দর নিয়ে অস্থিরতায় খোলাবাজারে ডলারের দাম ওঠে ১২৭ টাকায়, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দর। ডলারের দাম তিন দফায় কমানো হয়েছে। ফলে এখন ডলার বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা দামে। মাঝে অস্থিরতায় খোলাবাজারে ডলারের দাম ওঠে ১২৭ টাকায়, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দর। তবে এখনো মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডলার সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা করে বিক্রি করার কথা থাকলেও ১২২ টাকার নিচে তাদের কাছে ডলার মিলছে না।

রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে: চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৪.৩৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ২.০৩ শতাংশ। রেমিট্যান্সের প্রবাহ আগামীতে কমে যেতে পারে। এদিকে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি বছর শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার হতে পারে।

তারল্য সংকট: দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণও বাড়ছে। সংকটে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক রেকর্ড ২৪ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়েছে। এর আগে গত ২৫শে অক্টোবর সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা ধার নেয়ার রেকর্ড ছিল। সবশেষ ধারের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণে রেকর্ড: রাজনৈতিক চাপে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণে হয় নতুন রেকর্ড। জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০.১১ শতাংশ। এ সময় পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।

সুদ হার: বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক কলমানিতে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। কলমানির সুদের হার ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। সম্প্রতি কলমানিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যার গড় সুদহার ছিল ৯.১৪ শতাংশ। এ আগে ধারের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, যার গড় সুদহার ৯.১৩ শতাংশ।

রিজার্ভের গণনা নিয়ে লুকোচুরি: আইএমএফ’র গণনা পদ্ধতিতে দেশের প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ১৩শে জুলাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হিসাবে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের তারতম্য ছিল। ১৩ই জুলাই আইএমএফ’র গণনা পদ্ধতিতে দেশের রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৩.৫৭ বিলিয়ন ডলার। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ওইদিন রিজার্ভ ছিল ২৯.৯৭ বিলিয়ন ডলার।

ঋণ নিয়ে আইএমএফ’র শর্ত: বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিতে নানান শর্ত বেঁধে দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। শর্ত পূরণের আলোকেই ২রা ফেব্রুয়ারি আসে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এরপর দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পেতে আরও শর্ত জুড়ে দেয় সংস্থাটি। একের পর এক পরিদর্শন, পরামর্শ টিম পাঠানো হয়। ঋণ না পাওয়ার উপক্রমও তৈরি হয়। তবে রিজার্ভ ও রাজস্ব খাতের শর্ত ছাড়া বাকি সব শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ। এরপর নানান নাটকীয়তা শেষে চলতি ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার আসে দেশে।

রিজার্ভ সংকট: আইএমএফ’র ঋণ বাবদ ৬৯ কোটি ডলারসহ ৩টি সংস্থার ১৩১ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় সামান্য বেড়েছে দেশের রিজার্ভ। তবে জানুয়ারিতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দেনা শোধ করলে রিজার্ভ আবার কবে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫.৮২ বিলিয়ন ডলারে। তবে খরচ করার মতো রিজার্ভ (বিপিএম৬) আছে ২০.৪১ বিলিয়ন ডলার।

আর্থিক হিসাবে ঘাটতির রেকর্ড: চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ সূচকে ১২৭ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে আর্থিক হিসাবের সূচকে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ডলারের বড় উদ্বৃত্ত ছিল।

৫ ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন বন্ধের উপক্রম: শরীয়াহভিত্তিক পরিচালিত ৫ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হয়। ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক। বারবার অবহিত করার পরও ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের জন্য ২০ কর্মদিবসের সময় বেঁধে দেয়। 

সরকার দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। বলেন, ব্যাংকিং, দুর্নীতি, অপচয়, প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয়, এই বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে যায়া হয়েছে।

‘স্মার্ট পদ্ধতিতে’ নির্ধারণ হবে সুদহার: আইএমএফ’র শর্ত ও ব্যাংকের তারল্য সংকট কাটাতে ৯ শতাংশ সুদহার তুলে ঋণের সুদহারে ‘স্মার্ট পদ্ধতি’ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। নতুন এ পদ্ধতি কার্যকর হয় চলতি বছরের জুলাই থেকে। ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ তুলে দিয়ে ট্রেজারি বিল, বন্ডের ৬ মাসের গড় সুদহার (ওয়েটেড) বিবেচনা করে প্রতি মাসে একটি রেফারেন্স রেট নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংক।

১৪ ব্যাংক রেকর্ড মূলধন ঘাটতি: চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪টি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকসহ ১৪টি ব্যাংক রেকর্ড মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এই ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ছিল ৩৭ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতির ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ ঘটনা। এর আগে ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতির ঘটনা ঘটেছিল। 

পুরো ঋণ পরিশোধ শ্রীলঙ্কার: দুই বছর আগে মুদ্রা বিনিময় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে নেয়া ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলার ঋণের পুরোটাই পরিশোধ করেছে শ্রীলঙ্কা। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কাকে ৩ কিস্তিতে এই ঋণ দেয় বাংলাদেশ। কোনো দেশকে দেয়া বাংলাদেশের প্রথম ঋণ এটি। 

সিআইবি’র নিয়ন্ত্রণ ছাড়লো কেন্দ্রীয় ব্যাংক: ব্যাংক খাতের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিভাগ ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি। এটি এত গুরুত্বপূর্ণ যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দিষ্ট কর্মকর্তারা ছাড়া আর কেউ এ বিভাগের কোনো বিষয় পর্যবেক্ষণ বা তথ্য পেতেন না। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান শাখা এতদিন এ বিষয়ে তথ্য নিতে পারতো। এখন থেকে ব্যাংকগুলোর শাখা অফিসও সিআইবি তথ্য পরিদর্শন ও পরিবর্তন করতে পারবে। 

একই পরিবার থেকে ব্যাংকের পরিচালক তিনজনে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর সংশোধনী অনুযায়ী একটি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে একই পরিবারের সর্বোচ্চ ৪ জন সদস্য থাকতে পারতেন। ২০১৮ সালে করা এই আইনে পরিবর্তন আনা হয় চলতি বছরের ২১শে জুন। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া নতুন আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকে এক পরিবারের ৩ জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতি এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্টের চাপ আছে, রিজার্ভের চাপ আছে। আবার মূল্যস্ফীতির চাপও আছে। ফলে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি একটা অস্থির অবস্থা পার করছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি অনেক কমে গেছে। এসব ইস্যু একসঙ্গে হওয়াতে অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়েছে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d