Science & Tech

ডাইনোসরের গায়ে পালক, বরফে বাস—বিজ্ঞান বদলে দিল পুরনো ধারণা

২৫ বছর আগে বিবিসির ‘ওয়াকিং উইথ ডাইনোসরস’ নামে তথ্যচিত্রটি যখন প্রথম প্রচার হয়, তখন বিশ্ববাসীর ডাইনোসর বিষয়ে ধারণা ছিল তুলনামূলক সীমিত। এরপর কেটে গেছে অনেক সময়। এই সময়ে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে গেছে ডাইনোসর নিয়ে অনেক পুরনো বিশ্বাস। আধুনিক প্রযুক্তি আর নতুন আবিষ্কারের আলোকে এখন উঠে এসেছে একদম ভিন্ন এক চিত্র।

 ডাইনোসরের পালক: উড়ার নয়, উষ্ণতার জন্য 
১৯৯০-এর দশকে কিছু পালকযুক্ত ডাইনোসরের জীবাশ্ম মিললেও সেগুলো ছিল অপর্যাপ্ত ও খারাপ অবস্থায় সংরক্ষিত। ফলে গুরুত্ব তেমন বোঝা যায়নি। এখন বিজ্ঞানীরা শতাধিক পালকধারী ডাইনোসরের প্রমাণ পেয়েছেন। ধারণা করা হয়, এই পালকগুলো শুরুতে ডিম উষ্ণ রাখতে কাজে লাগত, পরে প্রদর্শন ও উড়ার জন্য ব্যবহার হত।

বিশেষজ্ঞ ড. জন নাটস বলেন, চীনের লিয়াওনিং প্রদেশে পাওয়া পালকযুক্ত থেরোপড ডাইনোসরের আবিষ্কার নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিশ্চিত করেছে—পাখি আসলে ডাইনোসরেরই বিবর্তিত রূপ।

 বরফে ডাইনোসর: উত্তরে বাস, গ্রীষ্মে নয় 
ডাইনোসরের জীবনযাপন এতদিন পর্যন্ত কল্পনা করা হতো জঙ্গলে, আগ্নেয়গিরির পাশে। কিন্তু উত্তর আলাস্কায় শিশু ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়ার পর ধারণা বদলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রাণীরা বরফাচ্ছন্ন অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বাস করত, শুধু গ্রীষ্মকালের অতিথি ছিল না। বছরে প্রায় চার মাস অন্ধকার ও হিমশীতল পরিবেশেও তারা টিকে থাকতে পারত।

 অদ্ভুত সব নতুন প্রজাতি: হাঁসের মতো মাথা, বাইনোকুলারের মতো চোখ 
গত ২৫ বছরে ডাইনোসরের অজস্র নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অদ্ভুত প্রজাতি ডেইনোকাইরাস। বিশাল দুটি হাত দেখে ১৯৬০ সালে একে চিহ্নিত করা হয়, তবে পুরো রূপ সামনে আসে ২০১৪ সালে। প্রফেসর পল ব্যারেট বলেন, এটা দেখতে যেন হাঁস ও রেডিয়েটরের মিশেল। বিশাল পিঠের পাল, পাশমোড়া নখ—যেন কোনও কমিটি মিলে গড়েছে এই প্রাণীকে।আরও আছে পাখি আর উড়ন্ত কাঠবিড়ালির সংমিশ্রণ Yi qi এবং প্রায় ৭০ টন ওজনের বৃহৎ প্রজাতি প্যাটাগোটাইটান ও ড্রেডনটাস।

 ডাইনোসর কি সাঁতার জানত? 
ডাইনোসরদের সব সময় স্থলজ প্রাণী ভাবা হতো। কিন্তু স্পাইনোসরাস নামের এক প্রজাতির ফসিল গবেষণা জানায়, তারা সম্ভবত পানিতেও শিকার করত। এ নিয়ে এখন প্যালিওন্টোলজি জগতে প্রবল বিতর্ক চলছে। কেউ বলছেন তারা পানিতে মাছ ধরত বক পাখির মতো, কেউ বলছেন তারা তীব্র গতিতে পানিতে শিকার করত।

এই ডাইনোসরের শরীরে রয়েছে কুমিরের মতো দাঁত, লম্বা লেজ এবং ভারী হাড়—যা পানির নিচে ডুবে থাকার জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে কম্পিউটার সিমুলেশন বলছে, তারা ডুবে গেলে পাশ ফিরে যেত—যা কার্যকর শিকারিকে অক্ষম করে তুলবে।

ডিমের খোলস আর ডাইনোসরের মাতৃত্ব 
সম্প্রতি এমন কিছু ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, যেগুলোর খোলস ছিল নরম—অনেকটা টিকটিকি বা কুমিরের ডিমের মতো। ডিমের ভেতর ভ্রূণের দাঁত বিশ্লেষণে জানা গেছে, তাদের গর্ভকাল ছিল ছয় মাস পর্যন্ত। এখন প্রশ্ন উঠেছে—তারা কি এই পুরো সময় বাসা পাহারা দিত, না কি ডিম পুঁতে রেখে পরে ফিরে আসত?

 গার্ডিয়ান বলছে, ‘ওয়াকিং উইথ ডাইনোসরস’ ২৫ বছর আগে যেভাবে কল্পনার দরজা খুলে দিয়েছিল, এবার সেই তথ্যচিত্র নতুনভাবে ফিরে এসেছে। তবে এবার তা আরও বেশি বৈজ্ঞানিক, আরও বিস্ময়কর। পালক, বরফ, পানিতে শিকার আর অদ্ভুত অঙ্গগঠনের ডাইনোসর—সব মিলিয়ে আজকের ডাইনোসরের গল্প একেবারেই নতুন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d