ডাকসুর ২৮ পদে কার সঙ্গে কার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো, জয়ের ব্যবধান কত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে মোট ২৮টি পদের ২৩টিতেই জিতেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল।
ডাকসুর শীর্ষ তিন পদে শিবিরের প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের। তবে ডাকসুর অন্য পদগুলোয় ছাত্রদলের প্রার্থীরা উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেননি।
ডাকসু নির্বাচনের প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে এমন চিত্র দেখা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। ভোট গ্রহণের পর গতকাল গভীর রাতে ঘোষণা করা হয় ফলাফল। আর আজ বুধবার সকালে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

সহসভাপতি (ভিপি)
ফলাফলে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস)—শীর্ষ এই তিন পদেই জিতেছে শিবিরের প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট।
ভিপি পদে ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে জিতেছেন শিবিরের প্রার্থী মো. আবু সাদিক কায়েম। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন ৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা হয়েছেন চতুর্থ। আর বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী আবদুল কাদের পঞ্চম হয়েছেন ১ হাজার ১০৩ ভোট পেয়ে।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস)

জিএস পদে শিবিরের প্রার্থী এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে জিতেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামিম। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট।
৪ হাজার ৯৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন বামপন্থী সাতটি ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী মেঘমল্লার বসু। স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরী ৪ হাজার ৪৪ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার ২ হাজার ১৩১ ভোট পেয়ে হয়েছেন পঞ্চম।
সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস)

এজিএস পদে শিবিরের প্রার্থী মুহা. মহিউদ্দীন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর আল হাদি মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট।
স্বতন্ত্র প্রার্থী (গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা) তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর চৌধুরী ৩ হাজার ৮ ভোট পেয়ে আছেন তৃতীয় অবস্থানে। ১ হাজার ৫১১ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন প্রতিরোধ পর্ষদের জাবির আহমেদ জুবেল। আর ১ হাজার ১৩৭ ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন রনি।
অন্যান্য পদ
ডাকসুর ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে জিতেছে শিবিরের প্যানেল। বাকি তিনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সানজিদা আহমেদ তন্বি, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে যুবাইর বিন নেছারী।
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে শিবিরের প্যানেলের প্রার্থী ফাতেমা তাসনিম জুমা ১০ হাজার ৬৩১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আরিফুল ইসলাম পেয়েছেন ২ হাজার ৪৭০ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী নূমান আহমাদ চৌধুরী ১ হাজার ৭৭৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে শিবিরের প্যানেলের ইকবাল হায়দার ৭ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়ে জিতেছেন। ৪ হাজার ২৭৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আহাদ বিন ইসলাম শোয়েব। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের মমিনুল ইসলাম ৩ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৯২০ ভোট পেয়ে শিবিরের প্যানেলের প্রার্থী উম্মে ছালমা জয়ী হয়েছেন। ৪ হাজার ৪৮২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সুর্মী চাকমা। তৃতীয় হয়েছেন ছাত্রদলের প্রার্থী চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা, তাঁর ভোট ২ হাজার ৭০২।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করছে নির্বাচন কমিশন। আজ বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে
আন্তর্জাতিক সম্পাদক: আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে শিবিরের প্যানেলের জসীমউদ্দিন খান ৯ হাজার ৭০৬ ভোট পেয়ে জিতেছেন। ৩ হাজার ৯২২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের মোহাম্মদ সাকিব। আর ৩ হাজার ২৩১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন ছাত্রদলের মেহেদী হাসান।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ৭ হাজার ৭৮২ ভোট পেয়ে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। ২ হাজার ৭৪৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন শিবিরের প্রার্থী নুরুল ইসলাম। ২ হাজার ১৪৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন প্রতিরোধ পর্ষদের ফারিয়া মতিন (ইলা)।
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বি। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১১ হাজার ৭৭৮। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে ছাত্রদলসহ কয়েকটি প্যানেল এই পদে প্রার্থী দেয়নি। তাঁর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে শিবিরের প্রার্থীর। শিবিরের প্রার্থী মো. সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন ৭ হাজার ১৮৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন।
ক্রীড়া সম্পাদক: ক্রীড়া সম্পাদক পদে শিবিরের প্রার্থী আরমান হোসেন ৭ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। ৩ হাজার ৮৩১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী মো. আল-আমিন সরকার। ৩ হাজার ৭৮৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় ছাত্রদলের চিমচিম্যা চাকমা। আর ৩ হাজার ৪৩৮ ভোট নিয়ে চতুর্থ হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জহিন ফেরদৌস জামি।
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক: ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৬১ ভোট পেয়ে জিতেছেন শিবিরের প্রার্থী আসিফ আবদুল্লাহ। ৪ হাজার ৫০৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের রাফিজ খান। আর ৩ হাজার ৩১২ ভোট পেয়ে তৃতীয় ছাত্রদলের মো. সাইফ উল্লাহ।
সমাজসেবা সম্পাদক: সমাজসেবা সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবাইর বিন নেছারী (এবি জুবায়ের) ৭ হাজার ৬০৮ ভোট পেয়ে জিতেছেন। ছাত্রদলের প্রার্থী সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক ৩ হাজার ৯০৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। শিবিরের প্রার্থী শরীফুল ইসলাম ২ হাজার ৫৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয়। আর ২ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের মহির আলম হয়েছেন চতুর্থ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের ভেতরে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাসছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন
সব মত ও আদর্শের সঙ্গে মিলে কাজ করার অঙ্গীকার ডাকসুর নতুন ভিপি সাদিক কায়েমের
ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক: ৯ হাজার ৩৪৪ ভোট পেয়ে ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে জিতেছেন শিবিরের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। ৪ হাজার ১২৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। আর ৩ হাজার ৬১৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় ছাত্রদলের মোহাম্মদ আরকানুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ৭ হাজার ৩৮ ভোট পেয়ে জিতেছেন শিবিরের প্রার্থী এম এম আল মিনহাজ। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন ২ হাজার ৯৬৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। আর বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী সাব্বির আহমেদ ২ হাজার ৯৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক: মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে শিবিরের প্রার্থী মো. জাকারিয়া ১১ হাজার ৭৪৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আনিকা তাহসিনা ৩ হাজার ৪২৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। ৩ হাজার ৩৬৫ ভোট নিয়ে তৃতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের নুসরাত জাহান নিসু।
আরও পড়ুন
এবারের ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশে নতুন একটি মডেল সেট করেছে: প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা
সদস্যপদ
ডাকসুর ১৩টি সদস্যপদের মধ্যে ১১টিতেই জিতেছেন শিবিরের ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। তাঁরা হলেন সাবিকুন নাহার তামান্না (১০ হাজার ৮৪ ভোট), সর্ব মিত্র চাকমা (৮ হাজার ৯৮৮ ভোট), ইমরান হোসাইন (৬ হাজার ২৫৬ ভোট), মোছা. আফসানা আক্তার (৫ হাজার ৭৪৭ ভোট), তাজিনুর রহমান (৫ হাজার ৬৯০ ভোট), রায়হান উদ্দীন (৫ হাজার ৮২ ভোট), মো. মিফতাহুল হোসাইন আল-মারুফ (৫ হাজার ১৫ ভোট), আনাস ইবনে মুনির (৫ হাজার ১৫ ভোট), মো. বেলাল হোসেন অপু (৪ হাজার ৮৬৫ ভোট), মো. রাইসুল ইসলাম (৪ হাজার ৫৩৫ ভোট) ও মো. শাহিনুর রহমান (৪ হাজার ৩৯০ ভোট)।
এ ছাড়া বামপন্থী প্রতিরোধ পর্ষদ থেকে সদস্যপদে ৪ হাজার ৯০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন হেমা চাকমা। ৪ হাজার ২০৯ ভোট পেয়ে সদস্যপদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া।