ডালের সংকট নেই, তবু বাড়ছে দাম
পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রায় সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। দেশে ডালের চাহিদা পূরণে বড় অংশই আমদানি করা হয়। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তিন বছরের ব্যবধানে ডালের দাম ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় দেশি মসুর ডাল ও মোটা মসুর ডাল।
ডাল দুটি এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যান্য ডালের দামও কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। চাল, তেল ও মাছ-মাংসের উচ্চমূল্যের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় ডালের বাড়তি দামে তারা সংসার চালাতে গিয়ে আরো চাপের মধ্যে পড়ছে।
আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলমান ডলার সংকটের কারণে আমদানি বিল পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে ডালের দামে। তবে বাজারে ডালের সরবরাহের কোনো সংকট নেই বলেও তাঁরা জানান।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে মসুর ডাল, মুগ ডাল, অ্যাংকর ডাল, বুটের ডাল, মাষকলাই ডাল ও খেসারি ডালসহ ৮ থেকে ১০ ধরনের ডাল বিক্রি হয়। দেশে বর্তমানে ডালের বার্ষিক চাহিদা ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন।
সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১০ লাখ টন। অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে প্রতিবছর আমদানি করা হচ্ছে বিভিন্ন পদের প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ টন ডাল। এতে ব্যয় হয় প্রায় ছয়-সাত হাজার কোটি টাকা।
২০২১ সালের নভেম্বর এবং গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিন বছরে দেশি মসুর ডাল কেজিতে ৩২ থেকে ৩৬ শতাংশ দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মোটা মসুর ডাল কেজিতে ৫০ থেকে ৮৩ শতাংশ দাম বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তিন বছরের ব্যবধানে মুগ ডালের দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৭৫ শতাংশ বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩৬ থেকে ১০০ শতাংশ দাম বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। ছোলা বুটের ডাল কেজিতে ৩১ থেকে ৪৩ শতাংশ দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর কাঁচাবাজার, রামপুরা, বাড্ডা বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মসুর ডাল আমদানি হয়েছে ৯২ হাজার টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি ছিল এক লাখ ৬৪ হাজার টন। এই সময়ের মধ্যে মসুর ডাল আমদানি কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ।
মটর ডাল ও ছোলার সরবরাহ কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মটর ডাল আমদানি হয়েছে ৫০ হাজার টন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার টন। একই অবস্থা ছোলার ক্ষেত্রেও। এসব পণ্যের আমদানি কমার পরও বাজারে সরবরাহ সংকট তীব্র হয়নি। কারণ বাজারে ডালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে।
ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাধারণত যখন বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তখন চাহিদাও অনেকটাই কমে যায়। যার কারণে আমদানি কমলেও বাজারে পণ্যের সংকট নেই। বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই পণ্য আমদানি করে থাকেন বলেও ব্যবসায়ীরা জানান।
বাংলাদেশ পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ বলেন, ‘ডলারের সংকটের কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না। এতে আমদানি কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে দামে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে, যার প্রভাবে ডালের দাম বেড়েছে।’
রাজধানীর পাইকারি কারওয়ান বাজারের শাহ মিরান জেনারেল স্টোরের ডাল ব্যবসায়ী মো. মাসুম বলেন, ‘বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মসুর ডাল। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে ডালের দাম বেড়েছে। দাম বেড়ে পাইকারিতে এখন মোটা মসুর ডাল কেজি ১১০ টাকায় এবং চিকন মসুর ডাল বা দেশি মসুর ডাল কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’
রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে ৮ থেকে ১০ ধরনের ডাল বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ডালের দামই এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরায় চিকন বা দেশি মসুর ডাল কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল কেজি ১১০ টাকা, মুগ ডাল কেজি ১৫০ টাকা, বুটের ডাল কেজি ১০০ টাকা, মাষকলাইয়ের ডাল কেজি ১৯০ টাকা, অ্যাংকর ডাল কেজি ৯০ টাকা এবং মটর ডাল কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
রাজধানীর মহাখালীর কাঁচাবাজারের মুদি দোকানের ব্যবসায়ী নির্মল ঘোষ বলেন, ‘বর্তমানে পাইকারিতে ডালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খুচরাও কিছুটা দাম বেড়েছে। তবে পাইকারিতে যে হারে বেড়েছে আমরা সেইভাবে বাড়াইনি। কিছু কিছু ডাল আগের দামেই আপাতত বিক্রি করছি।’