Bangladesh

ডিজিটাল চাঁদাবাজদের টার্গেট পুলিশ, শিক্ষক ও চিকিৎসক

সারা দেশে বেপরোয়া অনলাইন প্রতারকচক্র। সম্প্রতি তারা পুলিশের পরিচয় দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে নানাভাবে ডিজিটাল চাঁদাবাজি করছে। চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ তাদের টার্গেটে পড়ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই ধরনের দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদর দপ্তর এসপিদের বিশেষভাবে সতর্ক করেছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে সামাজিক অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এ ধরনের প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটা আরো বাড়বে।

পুলিশের সাইবার টিমের সদস্যরা বলছেন, ডিজিটাল প্রতারকচক্রের সদস্যরা নানা উপায়ে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওটিপি সংগ্রহ করেও প্রতারণা করছে।

এরপর সেই ওটিপি কাজে লাগিয়ে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থ ও তথ্য চুরি করে তারা। প্রথমে পরিচিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহারে ফোনকল করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বোকা বানায় তারা। ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জন করতে এসব ফোনকলে সাধারণত বিশেষ অফারসহ নানা ধরনের প্রলোভন দেয়। এরপর ফোনকলটিতে গুরুত্বপূর্ণ বা পরিচিত কোনো ব্যক্তিকে যুক্ত করার জন্য কল মার্জ করতে বলা হয়।

কল মার্জ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ওটিপি নম্বর শোনা যায়। প্রতারকরা ফোনকলে যুক্ত থাকায় ওটিপি নম্বরটি তারাও শুনতে পায়। ফলে ওটিপি নম্বরটি কাজে লাগিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাশাপাশি অর্থ ও তথ্য চুরি করে প্রতারকচক্র।

চক্রের ফাঁদে যাঁরা পড়েছেন

চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পড়া এক চিকিৎসক গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, “অতি সম্প্রতি তাদের একজন আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে প্রথমে কল করে। সে কথা বলার সময় মোবাইলের স্ক্রিনে পুলিশের মনোগ্রাম আসে। বলা হয়, ‘আপনি পুলিশের সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। নাম কাটতে হলে টাকা দিতে হবে।’ এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এটা একটা প্রতারকচক্রের ফাঁদ।” চক্রের ফাঁদে পড়ে অর্থ খোয়ানো এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, প্রতারকচক্র তাঁকেও ফাঁদে ফেলে কিছু অর্থ হাতিয়ে নেয়।

চক্রের সদস্যরা অতি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে টাকা দাবি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপাচার্যের মোবাইল নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে বিভিন্ন নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়ে টাকা চাওয়া হয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দাপ্তরিক নম্বর। জানা গেছে, ওই মোবাইল ফোন নম্বর থেকে যেসব মোবাইল ফোন নম্বরে চ্যাট করা হয়, সেসব নম্বর গত শনিবার দুপুরে হ্যাকার ১৫ হাজার টাকার বিকাশ করার জন্য খুদে বার্তা পাঠায়। এই নম্বর থেকে হঠাৎ এমন বার্তা পেয়ে অনেকে খোঁজ নিতে শুরু করেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি হ্যাকিংয়ের শিকার।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উপচার্য স্যারের দাপ্তরিক ফোন নম্বর হ্যাক করে অনেকের কাছ থেকে টাকা চেয়ে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ডিবিতে অভিযোগ দিয়ে নম্বরটি বন্ধ রাখা হয়েছে।’

চক্রের ফাঁদে পুলিশও

খোদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এমন ডিজিটাল চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন। গতকাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চক্রের সদস্যরা আমার কাছেও শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার ছবি ও নাম ব্যবহার করে টাকা দাবি করে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের প্রতারকচক্র পুলিশকেও টার্গেট করছে। তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে টাকা দাবি করছে। এ ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর হ্যাকড হচ্ছে বেশি।’

৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে প্রতারণা

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর জানতে চাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি ব্যাংকের কার্ডের পিন নম্বর শেয়ার না করার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ৯৯৯ নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুল্যান্স সেবা দেয়। এই নম্বর থেকে কোনো ব্যক্তির মোবাইল অ্যাকাউন্টের পিন বা ব্যাংকের ডেবিড বা ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর জানতে চাওয়ার তেমন কোনো সুযোগ নেই।

যা বলছে পুলিশের সাইবার টিম

অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্র বলছে, তদন্তে জানা গেছে, চক্রের সদস্যরা ‘ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপস’ নামে ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ পেতে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিদেশ থেকে বাংলাদেশিদের দিয়ে টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। চক্রের সদস্যরা মূলত এসব অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়ে কিছু ইনভেস্ট করতে প্রলোভন দেয়। এরপর কিছুদিন লভ্যাংশ জমা হতে থাকে। গ্রাহক তখন তার পছন্দমতো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা তুলতে থাকে। এরপর বেশি লাভের আশায় বেশি ইনভেস্ট করতে শুরু করে। আর এই সুযোগ নেয় প্রতারকচক্র।

ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম টিম (উত্তর) বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার হাসান মোহাম্মদ নাসের রিকাবদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিদিনই প্রতারণার শিকার মানুষের অভিযোগ পাচ্ছি।’ এ বিষয়ে ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, এসব প্রতারকচক্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছে ডিএমপি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল‍্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন অনলাইন কিংবা ডিজিটাল মাধ্যমেও প্রতারণা হচ্ছে। নম্বর হ্যাক করে অর্থ আদায় করার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিষ্ঠিত গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শিকার হচ্ছেন বেশি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor