Hot

ডেঙ্গুর উল্লম্ফন শিশুদের কান্না

৯ মাসের শিশু ফারহান আহম্মেদ। বৃহস্পতিবার থেকে তার শরীরে জ্বর। পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শিশুটির বাসা গাজীপুরে। বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। শিশুটির দাদী হাসিনা আক্তার মানবজমিনকে বলেন, আমরা ভেবেছি
এভাবে তো প্রায়ই স্বাভাবিক জ্বর হয়। পরে ফার্মেসি থেকে নাপা এনে খাওয়াতে থাকি। সেদিনই স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। বাসায় নিয়ে আসার পরে জ্বর আরও বাড়তে থাকে। পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শনিবার আবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তারা শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা বলেন। শনিবার রাতেই আমরা ঢাকায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন মোটামুটি ভালো আছে কিন্তু কিছু খেতে চাচ্ছে না। ওর শরীরে লাল র‌্যাস দেখা দিয়েছিল। আমাদের দিকে ডেঙ্গুর তেমন কোনো প্রাদুর্ভাব দেখা যায় না। কীভাবে কি হলো বুঝতে পারছি না। মঙ্গলবার থেকে ওর মায়ের জ্বর হয়। ওর মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগেনি; স্বাভাবিক আছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৩৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। গত আড়াই মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪০৭ জন। এরমধ্যে ২ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এসব রোগীর বয়স ৬ মাস থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। তবে ৫ থেকে ৮ বছরের শিশুরা বেশি এসেছে। বেশির ভাগ রোগী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার।

গতকাল সরজমিন দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে অনেকেই ছুটে এসেছেন হাসপাতালটিতে। বর্তমানে ডেঙ্গু সেলে সবগুলো বেডেই রোগী ভর্তি। শিশুরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কাতরাচ্ছে হাসপাতালের বেডে। আবার কারও কারও সময় কাটছে মোবাইল ও খেলনা নিয়ে। ওয়ার্ড-১ ডেঙ্গু সেলের ১৭ নম্বর বেডে ১০ বছরের শিশু রুহুল আমিন খান তাসফি ভর্তি রয়েছে। তার মা ইরফানা হক বলেন, আগারগাঁওয়ের ষাট ফিটে আমাদের বাসা। ১৪ই অক্টোবর থেকে ছেলের জ্বর শুরু হয়। প্রথম তিনদিন জ্বর, বমি ও পেটে ব্যথা ছিল। পঞ্চম দিন থেকে বমির সঙ্গে পেটেও সমস্যা দেখা যায়। হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিয়ে আসি। এখন মোটামুটি ভালো আছে। আমাদের পরিবারে এই একজনের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে; তবে বাসার আশপাশে অনেকের হয়েছে। তিনি বলেন, আমি কক্সবাজারে একটি চাকরি করি। এখন এই সময়টা আমার জন্য খুবই কষ্টকর। আমি একা মানুষ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। ছেলেটি স্কুলে যেতে পারছে না সামনে পরীক্ষা। সে মিরপুরে মণিপুরী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন একটি বেডে ৭০০ টাকা করে গুনতে হচ্ছে। মেডিসিন, ফলমূলের দাম তো নাগালের বাইরে। সন্তানকে সুস্থ করে তুলতে হলে এগুলো খাওয়াতে হবে; তবে দামের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শহরের সব জায়গায় রাস্তাঘাটের অবস্থা তো খুবই খারাপ- খানাখন্দে পানি জমে থাকে। দেশে চিকিৎসাসেবাটা আরও উন্নত হওয়া প্রয়োজন।

২৪ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছে ৬ বছরের শিশু মানহা সিদ্দিকী। হাতিরঝিলে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। শিশুটির মা কোহিনূর আক্তার বলেন, আমাদের পরিবারে চারজনের ডেঙ্গু হয়েছে। প্রথমে ওর দাদা-দাদীর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এর এক সপ্তাহ পড়ে আমার তিন বছরের ছেলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তার একসপ্তাহ পরে মেয়ের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। মেয়ের রাতে হঠাৎ জ্বর আসে। সকালের দিকে জ্বর আরও বেড়ে যায়। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ঠাণ্ডা জ্বর এসেছে। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই; সেখানে পরীক্ষা শেষে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর রোববার শিশু হাসপাতালে এসে ভর্তি করি। এখন মোটামুটি ভালো আছে। মুখে খুব একটা রুচি নেই- খেতে চায় কম। কয়েকদিন ধরে মানসিকভাবে একটু ভেঙে পড়েছি। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এর আগে ছেলেকে নিয়ে আট দিন হাসপাতালে ছিলাম। আমাদের বাসার পেছনের দিকে খোলা জায়গা আছে সেখানে ময়লা-আবর্জনা থাকে। আবার একটি নির্মাণাধীন ভবনও রয়েছে; সেখান থেকে হয়তো ডেঙ্গু মশার সৃষ্টি হতে পারে।

নার্সারির শিক্ষার্থী সিনহা। বর্তমানে শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ১৮ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। সিনহার খালা শ্রাবণী বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলতেছিল হাত-পায় ব্যথা করছে। ওর আবার হার্টের সমস্যা আছে। ১৭ই অক্টোবর ইকো করার কথা ছিল। শনিবার পরীক্ষা করিয়ে ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। এই হাসপাতালে শনিবার ভর্তি করি। ওর মায়েরও ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে, সে বাসায় আছে। ওদের বাসায় তিনজনের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে।
শিশু আব্দুল্লাহ’র মা কুলসুম বেগম বলেন, ৮ই অক্টোবর আব্দুল্লাহ’র জ্বর আসে। পরে তেজগাঁও এলাকার একজন চিকিৎসককে দেখানো হয়। তিনি এন্টিবায়োটিক দেন- সেটি খাওয়ানোর পরে শরীরে লাল র‌্যাশ দেখা দেয়। পরে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে দিলে নেগেটিভ আসে। এরপর ওই চিকিৎসকের কাছে আবার গেলে এন্টিবায়োটিক দেন। সেটি খাওয়ানোর পর জ্বর আরও বেড়ে যায় এবং শরীরের র‌্যাশগুলো ফুলে যায়। এটি দেখে শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে পরীক্ষা করিয়ে ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। প্রথমে জ্বরের সঙ্গে ঠাণ্ডা, কাশি ও বমি ছিল। ঠোঁট-চোখ সব লাল হয়েছিল। আজ ১২ দিন ধরে এই হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, আগে সন্তানকে সুস্থ করে তুলতে হবে। এই পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা ভালো না। এর আগে অসুস্থতার জন্য বড় ছেলেকে নিয়ে এক সপ্তাহের মতো হাসপাতালে থাকতে হয়েছে।

শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়া শুরু হয়েছে আমাদের হাসপাতালে। বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪০৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৯ জন এবং এই মুহূর্তে ভর্তি রয়েছে ৩৪ জন। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৩৪টি বেড রয়েছে। গত আড়াই মাসে মারা গেছে ২ জন। গত বছরে হাসপাতালটিতে ৬০ শয্যার ওয়ার্ড ছিল সেটি এখন ৩৪টি শয্যা রয়েছে। যদি আরও রোগী বাড়তে থাকে তাহলে আমরা ৬০ শয্যা করে ফেলবো। গত বছরে এই সময়টিতে প্রায় তিনগুণ রোগী ছিল। ডেঙ্গু রোগী বাড়লে আমাদেরও প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের অবস্থা বুঝে অবশ্যই হাসপাতালে আসতে হবে। বাসাবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d