Uncategorized

ডেঙ্গু ছড়িয়েছে দেশের ৬০ জেলায়

এক দিনে সর্বোচ্চ ৬ জনের মৃত্যু, আরও ৮৩৬ জন হাসপাতালে ভর্তি। এখনো ডেঙ্গুমুক্ত রয়েছে গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে শয্যা খালি নেই। নিরুপায় হয়ে মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

প্রতিরোধে কার্যকর গুরুত্ব না দেওয়ায় দেশের ৬০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবার জটিল হচ্ছে। মানুষ একই সঙ্গে ডেঙ্গুর একাধিক ধরনেও আক্রান্ত হচ্ছেন। আর কীটতত্ত্ববিদেরা বলছেন, পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতি হওয়ায় এবার ডেঙ্গুতে বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর গত দুই দশকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বছরের জুলাই মাসের শেষে বা আগস্টের শুরু থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর জুলাই মাসের শুরু থেকেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই বছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৩৮। আর গতকাল রোববার (৯ জুলাই) এক দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৩৬ জন। এই সংখ্যা এক দিনে হাসপাতালে ভর্তির দিক থেকে (চলতি বছরে) সর্বোচ্চ।

প্রায় ৩০০ রোগীর নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫১ দশমিক ৫ শতাংশের সংক্রমণ ডেন-২–এ এবং ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশের সংক্রমণ ডেন-৩–এ। বাকি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ রোগী একই সঙ্গে ডেন-২ ও ডেন-৩–এ আক্রান্ত।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছরে এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকেও সর্বোচ্চ। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হলো ৭৩। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ বছর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৫৪।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে ৬০ জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত যে চারটি জেলা ডেঙ্গুমুক্ত তা হচ্ছে গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার একাধিক জরিপে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকা শহরের ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা বেশি। এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, মশা জরিপে তাঁরা প্রায় সারা দেশেই এডিস মশার অস্তিত্ব পেয়েছেন। ডেঙ্গু শুধু ঢাকা মহানগরের সমস্যা নয়, এটি এখন সারা দেশের সমস্যা। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বছরের প্রথম ছয় মাসে এবার আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। যেহেতু প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তাই আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সংক্রমণ বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি মশকনিধনে সিটি করপোরেশনের সক্রিয়তা আরও বাড়ানো। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা দরকার, যাতে মানুষ সচেতন হয়।

জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজীর আহমেদ

স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয় না

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলেন, ডেঙ্গু নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব। একটি অঞ্চলে বা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলে তা আর যায় না। তবে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখার বৈশ্বিক নজির আছে।

দেশে প্রথম ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছরই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবছর ডেঙ্গু নিয়ে কথাবার্তা ও আলাপ-আলোচনা শুরু হয় বর্ষা মৌসুমে আক্রান্তের বা মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর। সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যার আপাত সমাধানে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কাজ করা হয় অনেকটা অস্থায়ী ভিত্তিতে। ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ হলে এডিস মশার বিষয়গুলো সরকারি কর্মকর্তাদের আর মনে থাকে না।

মশার উপস্থিতি জানার জন্য সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা প্রতিবছর তিনটি জরিপ করে। বর্ষা মৌসুমের আগে, বর্ষা মৌসুমের সময় এবং বর্ষার শেষে। এই জরিপ হয় মূলত ঢাকা শহরে। এই তিনটি জরিপ থেকে ঢাকার মশা পরিস্থিতির কিছুটা পূর্বাভাস পাওয়া যায়। মশা মারার দায়িত্ব মূলত সিটি করপোরেশনের। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার মশা জরিপের ফলাফল স্থানীয় সরকার বা সিটি করপোরেশন কোনো কাজে লাগায় না বা কাজে লাগানোর সামর্থ্য তাদের নেই বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ একটি বিশেষায়িত কাজ। এ কাজ কীটতত্ত্ববিদের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কোনো কীটতত্ত্ববিদ নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রেষণে একজন দায়িত্ব পালন করছেন। সারা দেশেই এই জনবলের সংকট আছে।

অন্যদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) কীটতত্ত্ববিদের পদ আছে চারটি, এর দুটি পদ শূন্য।

একাধিক ধরন সক্রিয়

ডেঙ্গুর ধরন চারটি: ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। বর্তমানে ডেঙ্গুর দুটি ধরনে দেশের মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আইইডিসিআর সূত্রে এটি জানা গেছে।

গতকাল নিজ কার্যালয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ৩০০ রোগীর নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫১ দশমিক ৫ শতাংশের সংক্রমণ ডেন-২–এ এবং ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশের সংক্রমণ ডেন-৩–এ। বাকি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ রোগী একই সঙ্গে ডেন-২ ও ডেন-৩–এ আক্রান্ত।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলেন, একটি ধরন সক্রিয় থাকলে তুলনামূলক ঝুঁকি কম। কোনো ব্যক্তি প্রথমে একটি ধরন এবং পরে অন্য একটি ধরনে আক্রান্ত হলে রোগের জটিলতা দেখা যায়।

জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে ডেঙ্গুর একাধিক ধরন ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও প্রস্তুতি দরকার। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি মশকনিধনে সিটি করপোরেশনের সক্রিয়তা আরও বাড়ানো। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা দরকার, যাতে মানুষ সচেতন হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d