USA

ডেমোক্র্যাটদের ভরসা উদারপন্থী ভোটাররাও এবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির কাছ থেকে ভোটারদের বড় একটি অংশ ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। অথচ ডেমোক্র্যাটরা একসময় মনে করতেন, এই উদারপন্থী ভোটাররাই এক প্রজন্ম ধরে তাঁদের হোয়াইট হাউসের গদিতে টিকে থাকতে সহায়তা করবে।

২০০৮ সালে নির্বাচনে জিতেছিলেন ডেমোক্রেটিক দলের বারাক ওবামা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন। তাঁর জয়ের পর অনেকেই উল্লাস করে বলেছিলেন, কৃষ্ণাঙ্গ কোনো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে ডেমোক্রেটিক দলের যে উদারপন্থী ভোটব্যাংক রয়েছে, তা আরও শক্তিশালী হয়েছে।

কৃষ্ণাঙ্গ হলেই যে ডেমোক্র্যাট সমর্থক হতে হবে, এমন ধারণাকে ঘৃণা করি

কেনার্ড হোমসের, যুক্তরাষ্ট্রের একজন কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী

সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীলদের সংখ্যা কমছিল। এর বিপরীতে শ্বেতাঙ্গ নন এমন মার্কিনরা ২০৪৪ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবেন বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। সে সময় ওবামাকে ভোট দেওয়া মার্কিনদের মধ্যে ছিলেন—কলেজ পাস পেশাজীবী, তরুণ, শ্রমিক শ্রেণি, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিন জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা।

সংস্কৃতির দিক থেকে এই ভোটাররা বামঘেঁষা। তাঁরা একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থক এবং শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তার পক্ষে। ডেমোক্র্যাটদের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে এগিয়ে থাকতে বা প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক অঙ্গরাজ্যে তখন এই ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল।

ডেমোক্র্যাটদের এই ভোটব্যাংকে ফাটল ধরা শুরু করে ২০১০ ও ২০১৪ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে। তখন কলেজ পাস নন এমন ভোটাররা ডেমোক্রেটিক পার্টির হাত ছেড়ে রিপাবলিকানদের ভোট দিয়েছিলেন। ফাটল আরও বড় হয় ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের মধ্য দিয়ে। এরপর শ্রমিকবান্ধব হিসেবে যে খ্যাতির ঘাড়ে চেপে ২০২০ সালে জো বাইডেন ক্ষমতায় এসেছিলেন, তা–ও বেশি দিন ধরে রাখতে পারেননি তিনি।

এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে শ্রমিক শ্রেণি। ডেমোক্র্যাটদের তরুণ, লাতিন ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটের ভাগ বসিয়েছেন তিনি। বুথফেরত জরিপের তথ্য অনুযায়ী ট্রাম্প এবারের নির্বাচনে—

এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি ও অভিবাসন।

১. ১৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গের ভোট পেয়েছেন। যেখানে ওবামার বিরুদ্ধে রিপাবলিকান দলের জন ম্যককেইন পেয়েছিলেন মাত্র ৪ শতাংশ।
২. ৪৬ শতাংশ লাতিন ভোটার এবার ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। ২০০৮ সালে ম্যাককেইন পেয়েছিলেন ৩১ শতাংশ।
৩. ৩০ বছরের কম বয়সী নাগরিকদের ৪৩ শতাংশ এবার ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, যেখানে ম্যাককেইন পেয়েছিলেন ৩২ শতাংশ।
৪. কলেজ পাস করেননি এমন ৫৬ শতাংশ নাগরিকের ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁদের বেশির ভাগ ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন।

অভিবাসন, অর্থনীতি ও পরিচয়ের রাজনীতি

ডোনাল্ড ট্রাম্প

এবরের নির্বাচনী প্রচারে অভিবাসন নিয়ে বারবার কড়া বার্তা দিয়ে এসেছেন ট্রাম্প। মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তৈরির কাজ শেষ করবেন এবং দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। আগের মেয়াদেও অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের একই মনোভাব ছিল। তবে ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের উল্টো পথে হাঁটা শুরু করেন বাইডেন।

বাইডেন প্রশাসনের অধীন গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড পরিমাণ অবৈধ অভিবাসী সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশ করেছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির উদারপন্থী ভোটারদের মধ্যে যাঁরা অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা অবৈধভাবে এই অভিবাসী প্রবেশের ঘটনায় চটেছেন।

এবার লাতিন ভোটরদের কাছেও বড় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন ট্রাম্প। ১৯৮৮ সালের পর প্রথমবারের মতো ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের লাতিন ভোট অধ্যুষিত এলাকায় জয় পেয়েছেন তিনি। টেক্সাসের স্টার এলাকার ৯৭ শতাংশ বাসিন্দা লাতিন। সেখানেও জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। এবার স্টার এলাকায় ৫৭ শতাংশ ভোট গেছে তাঁর পক্ষে। ২০০৮ সালে সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন জন ম্যাককেইন।

ডেমোক্রেটিক পার্টি নিজেদের ভোটার কেন হারাচ্ছে, সে সম্পর্কে একটি আঁচ পাওয়া যায় কেনার্ড হোমসের বক্তব্য থেকে। এবারের নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের সময় ২০ বছর বয়সী এই কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেছিলেন, তিনি কিছু ক্ষেত্রে রিপাবলিকানদের সমর্থন করেন। আর কৃষ্ণাঙ্গ হলেই যে ডেমোক্র্যাট সমর্থক হতে হবে—এমন ধারণাকে ঘৃণা করেন তিনি। এ ছাড়া ডেমোক্র্যাটরা এটা ধরেই রেখেছেন, সবকিছুর পরও কৃষ্ণাঙ্গরা তাঁদের ভোট দেবেন। এটা ঠিক নয় বলে ধারণা তাঁর।  
জরিপে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি ও অভিবাসন। এই দুই ক্ষেত্রেই ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। অর্থনীতি নিয়ে নির্বাচনের আগে তিনি যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো ভোটদানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জাতিগত বিভক্তি কাটিয়ে তুলেছে।

কমলা হ্যারিস

এ নিয়ে কথা বলছিলেন নিকোর উইলিয়ামস নামের একজন শ্বেতাঙ্গ বার–কর্মী। তাঁর স্বামী একজন কৃষ্ণাঙ্গ। তাঁরা নেভাদার লাস ভেগাসের বাসিন্দা। এই অঙ্গরাজ্যে এবার ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন ট্রাম্প। নিকোল উইলিয়ামস বলেন, ‘আমাদের পরিচয় নিয়ে রাজনীতির কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমরা শুধুই আমেরিকান। আমেরিকার জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো, সেটিই শুধু চাই আমরা।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports