USA

ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন পেলেন কমলা হ্যারিস

আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হতে প্রয়োজনীয় ভোট পেয়ে গেছেন কমলা হ্যারিস। শুক্রবার দলটির ‘ন্যাশনাল কমিটি চেয়ার’ জেইম হ্যারিসন ভার্চুয়ালি এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার থেকে ই- মেইলে ভোট গ্রহণ শুরু করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। ডেলিগেটরা তাদের পছন্দের কথা জানাতে পারবেন সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। অবশ্য ভোটগ্রহণ শুরুর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে কমলা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে গেছেন। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আরও একটি ধাপ পার করলেন এই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
কমলার নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত হচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারের শীর্ষ ব্যবস্থাপকরা। এই প্রচার শিবিরে ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছেন ডেভিড প্লাফ নামের একজন ব্যবস্থাপক। তিনি ২০০৮ সালে বারাক ওবামার নির্বাচনের প্রচার শিবিরের ব্যবস্থাপক ছিলেন।
২০১২ সালে ওবামার দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সিনিয়র সহযোগী হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন প্লাফ। তিনি এবার কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারশিবিরের সিনিয়র পরামর্শক হিসেবে কাজ করবেন। আরও যুক্ত হয়েছেন স্টিফেনি কার্টার। ওবামার আমলে হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক পদে ছিলেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে কমলা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলে তিনি আরেকটি ইতিহাস গড়বেন। কারণ, এ অবস্থানে তিনি হবেন প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ান-আমেরিকান নারী। বর্তমানে তিনি দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে কমলা হ্যারিসও যোগ দেন। তিনি জানান, তাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিনিধিরা পছন্দ করার জন্য তিনি সম্মানিত বোধ করছেন। সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে কমলা হ্যারিস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন গ্রহণ করবেন।
এদিকে অবশেষে কমলা হ্যারিসের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কে রাজি হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স নিউজ আয়োজিত এ বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হবে ৪ সেপ্টেম্বর। শুক্রবার এ ঘোষণা দেন ট্রাম্প। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও এএফপির।
নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া একটি পোস্টে বলেন, আমি কমলার সঙ্গে ডিবেটে অংশ নিতে আগ্রহী। তিনি বলেন, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর, বুধবার কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ফক্স নিউজের আয়োজিত প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে অংশ নেব।
বিতর্কটি পেনসিলভানিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে। মডারেটর হিসেবে থাকবেন ব্রেট বায়ের এবং মার্থা ম্যাককালাম। পোস্টে ট্রাম্প আরও বলেন, বিতর্কটি হলভর্তি দর্শকের সামনে হওয়া উচিত। এর আগের বিতর্কে কোনো দর্শক ছিল না বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। এর আগে কমলার জাতিগত উত্তরাধিকার নিয়ে বর্ণবৈষম্যমূলক প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, কমলা হ্যারিস এতদিন পর্যন্ত কেবল তার এশিয়ান-আমেরিকান পরিচয়ের ওপরই জোর দিয়েছেন কিন্তু কিছুদিন হলো ‘তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন’।
শিকাগোতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্ল্যাক জার্নালিস্টস সম্মেলনে ট্রাম বলেন, ‘তিনি যে কৃষ্ণাঙ্গ তা জানতাম না আমি, কয়েক বছর আগে তিনি যখন তিনি কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে গেলেন তখন জানতে পারি, আর এখন তিনি কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচিত হতে চান। তাই আমি জানি না- তিনি কি ভারতীয়? নাকি তিনি কৃষ্ণাঙ্গ?’ প্রশ্ন করেন ট্রাম্প।
ভারতীয় ও জ্যামাইক্যান বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় মার্কিন ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাম্পের এইসব মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর হ্যারিস টেক্সাসের হিউস্টনে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ঐতিহাসিক ক্লাব সিগমা গামা রোর এক বৈঠকে ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এটি সেই বিভেদ ও অসম্মানের একই পুরনো প্রদর্শনী।’
হ্যারিস আরও বলেন, ‘আমেরিকার জনগণ আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমাদের এমন একজন নেতা প্রাপ্য যিনি বোঝেন আমাদের পার্থক্যগুলো আমাদের বিভক্ত করে না- এগুলো আমাদের শক্তির এক অপরিহার্য উৎস। ট্রাম্পের এই বেফাঁস মন্তব্যের পর শিকাগোর সম্মেলনের অন্যতম সঞ্চালক র‌্যাচেল স্কটের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। হ্যারিসের জাতিগত পরিচয় প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যে কোনো একটিকে সম্মান করি। কিন্তু তিনি স্পষ্টতই তা করেন না, তিনি পুরোটা সময় ভারতীয় থাকলেও হুট করে বাঁক বদল করলেন আর তিনি কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হয়ে উঠলেন। এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, ‘কারও পরিচয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অধিকার কারও নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্টের প্রতিপক্ষকে জাতিগত ভিত্তিতে আক্রমণ করার ইতিহাস আছে। তিনি দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে বলেছিলেন, ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেননি। জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং তার এক সময়ের রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালিকে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে আক্রমণ করে করে বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না কারণ জন্মের সময় তার বাবা-মা মার্কিন নাগরিক ছিলেন না। হ্যারিস সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হওয়ার পর থেকে ট্রাম্পের একের পর এক আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছেন এবং হচ্ছেন।
ট্রাম্প আলোচনার সময় হ্যারিসের আইন পেশা নিয়েও কটাক্ষ করেন। তার এই মন্তব্যের পরই অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন হইহল্লা শুরু করে। ট্রাম্প বলেন, আমি শুধু ঘটনাগুলো তুলে ধরছি। সে তার বার পরীক্ষায় পাস করেনি এবং সে ভাবেনি যে সে কনো এটি পাস করবে। আমি জানি না পরবর্তীতে কী ঘটেছিল। হয়তো পরে সে পাস করেছিল।
কমলা হ্যারিস ১৯৮৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া হেস্টিংস কলেজ অব ল থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বার পরীক্ষায় তিনি তার প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় পাস করেন। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য বার জানিয়েছে, যারা পরীক্ষায় বসেন, তাদের অর্ধেকেরও কম প্রথম চেষ্টায় পাস করেন। সম্মেলনে সঞ্চালক স্কট এবং সাবেক প্রেসিডেন্টের মধ্যে বিতর্ক নিয়ে ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেন, কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে ট্রাম্পের অতীত সমালোচনা নিয়ে কথোপকথন শুরু হলে ওই সাংবাদিক অত্যন্ত রূঢ় আচরণ করেছেন। তিনি কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের প্রশ্নকে ‘নির্বোধ ও বর্ণবাদী’ বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বলেন, আমি এই দেশের কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে ভালোবাসি, আমি এই দেশের কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক কিছু করেছি।
ট্রাম্পের আপন ভাতিজা ফ্রেড ট্রাম্প তার চাচাকে একজন ‘বদ্ধ উন্মাদ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, আমি তাকে ভোট দিচ্ছি না। কয়েক দশক আগে তাকে বর্ণবাদী কথাবার্তা বলতে শুনেছেন ফ্রেড। এর পরিবর্তে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। ফ্রেড বলেন, ট্রাম্পের চলার পথটা ‘জটিল ও অনেক সময় বেশ নিষ্ঠুর’। ওদিকে কমলা হ্যারিস জনপ্রিয়তায় ফের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টপকে গেছেন। রয়টার্স-ইপসোস পরিচালিত তিন দিনের জনমত জরিপের ফলে এ তথ্য উঠেছে এসেছে। সমীক্ষায় জানা গেছে, এক শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছে কমলা। জো বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার পর ৫ নবেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন-দৌড়ে সামনে চলে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগের কয়েক সপ্তাহে জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন বাইডেন। তবে কমলা এরই মধ্যে ট্রাম্পকে টপকে গেছেন। সর্বশেষ জরিপটি চলে তিন দিন ধরে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button