Bangladesh

ডোপ টেস্ট কিটে ‘মাফিয়াগিরি’

ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্টের কিট কেনাকাটায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের (এনআইএলএমআরসি) বিরুদ্ধে ‘মাফিয়াগিরির’ অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহেদ আলী জিন্নাহ দুই ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে তিন বছরে প্রায় ২৭ কোটি টাকার ৬ লাখ কিট কেনেন। বাজারে যে কিট ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যায়, চক্রটি তা তিন গুণ দরে দরপত্রের চেয়ে ১৩ গুণ দরে কিনেছে। এর মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়নে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে সরকার। পরীক্ষাটি রাজধানীর ছয়টি সরকারি এবং জেলা সদর হাসপাতালে করার সুযোগ ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট হয়েছে এনআইএলএমআরসিতে। তাদের বছরে দুই লাখ ডোপ টেস্ট কিট দরকার। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ তিন বছরে একাধিকবার দরপত্রে উল্লেখ করা তথ্যের চেয়ে ১০ থেকে ১৩ গুণ কিট কিনেছে এনআইএলএমআরসি। এ জন্য আলাদা দরপত্র আহ্বান না করে অন্যটির প্যাকেজ হিসেবে বেশি দামে কিনেছে। সেখানে পছন্দের দরদাতাকে কাজ দিতে বিশেষ শর্ত যুক্ত করা হয়। ফলে অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগই পায়নি।

সমকালের হাতে আসা দরপত্রের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবরে ওষুধ ও রাসায়নিক কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে এনআইএলএমআরসি। এতে কেনার কথা ছিল ১০ হাজার ডোপ টেস্ট কিট। কাজটি বায়োটেক সার্ভিসেস পেলেও কিট সরবরাহ করে এক্সিবায় হেলথ কেয়ার। দরপত্রে ১০ হাজার উল্লেখ থাকলেও কেনা হয় ১ লাখ ৩০ হাজার কিট। আগেও দু’বার অনিময় করে কাজ পায় বায়োটেক সার্ভিসেস। অভিযোগ রয়েছে, বায়োটেককে কাজ দিতে ‘বিশেষ শর্ত’ যুক্ত করা হয়। আর পরিচালকের ইশারায় কিট সরবরাহ করে এক্সিবায় হেলথ কেয়ার। এক্সিবায়ের কর্ণধার মাসুদ রানা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটাতেন। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর রাতারাতি ভোল পাল্টে মাসুদ রানা বিএনপি বনে গেছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনআইএলএমআরসি ল্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, ডোপ টেস্টের কিট চীন থেকে আমদানি করা হয়। দেশীয় বাজারেও রয়েছে। বাজার মূল্য ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। তবে এক্সিবিও হেলথ কেয়ার একই কিট দিয়েছে ৪৫০ টাকা দরে। অভিযোগ রয়েছে, আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের কাজ দিয়েছেন পরিচালক। বাজার ঘুরেও বেশি দামে কিট কেনার প্রমাণ মিলেছে।

জানতে চাইলে বায়োটেক সার্ভিসেসের মালিক রমজান আলী সমকালকে বলেন, ‘এনআইএলএমআরসির সাবেক পরিচালক ডা. শাহেদ আলী জিন্নাহর নির্দেশে দরপত্রের মধ্যমে ডোপ টেস্ট কিট কেনা হয়। কাজ  আমি পেলেও তিনবারই কিট সরবরাহ করেছে এক্সিবিও হেলথ কেয়ার। অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানার থাকলে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

পরে যোগাযোগ করা হলে এক্সিবায় হেলথ কেয়ারের মালিক মাসুদ রানা বলেন, ‘দরপত্রের মাধ্যমে কিট সরবরাহ করেছি। বেশি দামে কেনা হলে সে সময় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করত। তারা তো করেনি। এখন অনিয়মের অভিযোগ আসা উদ্দেশ্যমূলক।’

অভিযোগের বিষয়ে এনআইএলএমআরসির তৎকালীন পরিচালক ডা. জিন্নাহ সমকালকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন আগের শর্তেই কিট কেনা হচ্ছে। নতুন করে বাজারদর যাচাই করা হয়নি।’ দরপত্রের চেয়ে ১৩ গুণ দরে কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণার তুলনায় প্রতিদিন কয়েক গুণ মানুষ পরীক্ষার জন্য এসেছে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি কিনতে হয়েছে।’ পরপর তিন বছর একইভাবে কেনা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি ডা. জিন্নাহ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর জানান, তারাও ডোপ টেস্ট কিট কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button