ড্যাপে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি

সংবাদ সম্মেলনে শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখে রড-সিমেন্ট, ক্যাবলসহ ২০০ লিংকেজ কোম্পানি
নতুন ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান বা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা তৈরি করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। যা ‘ড্যাপ’ নামে পরিচিত। ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে এই পরিকল্পনা হাতে নিলেও বাস্তবে ভিন্ন। ড্যাপে শহরের বাসযোগ্যতা, ধারণক্ষমতা, নাগরিক সুবিধাদি, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব না পেয়ে বরং, নির্দিষ্ট কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতেই রাজউক থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দীর্ঘদিন থেকে জানিয়ে আসছে সংশ্লিষ্টরা। আর তাই ড্যাপকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে দেশের আবাসন খাত। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম এই খাতে এখন চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। নতুন করে কোন বিনিয়োগ হচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় বিক্রি শূন্য। নানামুখী প্রতিবন্ধকতা আবাসন শিল্পকে গতিহীন করে দিয়েছে। বৈষম্যযুক্ত ড্যাপ সংশোধন হবে এমন আশায় ছিলেন জমির মালিক, আবাসন ব্যবসায়ী এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা। কিন্তু একটি বিশেষ গোষ্ঠির ইন্ধেনে পরিকল্পনাবিদদের বাঁধা/আপত্তিতে তা আটকে গেছে। যা নিয়ে পরবর্তীতে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতানৈক্যে দেখা দেয়। আর তাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ড্যাপ সংশোধন বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। যদিও গত ১৯ মার্চ ড্যাপের সংশোধনী চূড়ান্ত করতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে এ সংশোধনের বিষয়ে একমত হতে পারেননি সবাই। ফলে ৭ সদস্যের কমিটি ওইদিনের বৈঠকে ড্যাপ পুনরায় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশ্য ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় ভবনের উচ্চতা দুই থেকে চার তলা পর্যন্ত বাড়ানোর অনুমতি দিয়ে এদিন পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রাজউক বলছে, ২০২২ এর গেজেটেড ড্যাপে উল্লেখিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর বা ফার) এর মান নিয়ে বিভিন্ন মহলের আপত্তি থাকায় সে বিষয়ে সংশোধনসহ বেশকিছু বিষয়ে সংশোধনের জন্য যে প্রস্তাবনা তোলা হয়েছিলো সেগুলোর পর্যালোচনা করতে আরও কিছু সময় নিবে উপদেষ্টারা। স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে পলায়নের পর নানামুখী ষড়যন্ত্রে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। রফতানি ও রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি বর্তমান সরকারের জন্য কিছুটা আশার আলো। রেমিট্যান্সে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বস্তি দিলেও মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, বাজেট বাস্তবায়ন, রাজস্ব আদায়, বেসরকারি বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার ও বিদেশি বিনিয়োগের অবনতি হয়েছে। থমকে আছে বিভিন্ন খাতের ব্যবসা। এই হাওয়া লেগেছে অবকাঠামো তথা নির্মাণ খাতের রড-সিমেন্ট শিল্পেও। বিগত সরকারের সময়ে নেয়া একাধিক মেগা প্রকল্পকে কেন্দ্র করে রমরমা ব্যবসা করতেন রড-সিমেন্ট শিল্পের ব্যবসায়ীরা। পট পরিবর্তনের পর বন্ধ হয়ে গেছে বিগত সরকারের নেয়া অনেক প্রকল্প। এছাড়া গত প্রায় ১৬ বছরের একচেটিয়া শাসনব্যবস্থার ফলে দেশের মধ্যে সরকার সমর্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাদের বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করতেন। বর্তমানে সে সবের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন আবাসন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন কিন্তু উৎপাদন অনেকটা বন্ধের পথে হওয়ায় খেলাপি হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকে প্লট-ফ্ল্যাট দেখিয়ে ঋণ নিয়েছেন কিন্তু নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় তারাও বিপাকে আছেন। যার প্রভাব পড়ছে ব্যাংকখাতে। ব্যাংকগুলো ঋণের টাকা ফেরত পাবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছে। মোটকথা আবাসন খাতের স্থবিরতায় থমকে আছে দেশের অর্থনীতির গতি। বাংলাদেশের বেসরকারি খাত নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনেও আবাসনখাতসহ চারটি খাতে সংস্কার নিলে ৩৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের আবাসন খাতে ডিজিটাল ম্যাপিং, জমি নিবন্ধন ও জমির অতিরিক্ত দাম নিয়ে জটিলতা রয়েছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে।
এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবেও আবাসন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির স্থবিরতা উত্তরণের লক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনেও দেশের অর্থনীতির বর্তমান স্থবিরতার পেছনে ড্যাপকে দায়ী করেছেন খাত সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, বৈষম্যমূলক ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ফার সংক্রান্ত সমস্যায় কমেছে সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামোগত প্রকল্পের গতি। এতে আবাসন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিতে মারাত্মক স্থবিরতা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০০ লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিতে উৎপাদন কমেছে। কোনো কোনো শিল্পে বিক্রি কমে নেমে এসেছে অর্ধেকে। লোকসান কমাতে শিল্প মালিকেরা কর্মী ছাঁটাইয়ে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাড়বে বেকারত্বের হার (কর্মী ছাঁটাই), ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।
সূত্র মতে, গত বছরের আগস্ট থেকে ‘ড্যাপ’ কার্যকর করা হয়। ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে এই মহাপরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু শুরু থেকে ড্যাপ (২০২২-৩৫) নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা চলছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) নেতারা বলেছেন, নতুন ড্যাপ বৈষম্যমূলক এবং অস্পষ্ট। বর্তমানে আবাসনশিল্পে যে সংকট চলছে তাতে প্রধান সমস্যা এই ড্যাপ। এটি আবাসন খাতের জন্য মরণফাঁদ। ‘ড্যাপ’ এর কারণে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট লিংকেজ শিল্পগুলোকে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। গত আড়াই বছর ধরে নকশা অনুমোদন কমে গেছে এবং আবাসন খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফলে খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে বেকার হয়েছে লক্ষাধিক চাকরিজীবী। ভবনের কম আয়তন এবং উচ্চতা কম হওয়ার গত ৮ মাস ধরে আবাসন ব্যবসায়ী ও জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা ইমারত নির্মাণ বন্ধ রেখেছে। অর্থনীতিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখা এই খাতে রড-সিমেন্টের চাহিদা কমায় উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশংকা করছেন অনেকে। যদি ড্যাপ সংশোধন করে বাস্তবায়ন না করা হয় তবে অর্থনীতি আরো ঝুঁকির মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, নির্মাণ উপকরণের সবচেয়ে বড় উপাদান রড। সেই রডের চাহিদা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। গেল বছরের শেষের দিকে রড শিল্পের কয়েকটা সংগঠন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল তাদের চাহিদা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এরপর গেলো ৪-৫ মাসে রডের চাহিদা আরও কমেছে। শেখ মাসাদুল আলম বলেন, ড্যাপের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সংস্কার না হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। একটি কারখানা বন্ধের পর চালু হতে পাঁচ বছর সময় লেগে যায়, এতে বেকারত্ব বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। দেশের ভালোর জন্য হলেও সংকট দূর করা আবশ্যক।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক ক্যাবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আখতার হোসেন ঢালি বলেন, আমাদের তারের চাহিদার ৯৮ ভাগ সরবরাহ করে থাকেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। আমাদের ব্যবসা আবাসন খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবাসন সেক্টরের মন্দার কারণে আমাদের উৎপাদন কমেছে। আমার নিজের কারখানার ২৫ ভাগ শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আরও ছাঁটাই করতে হবে। কারণ আমাদের বিক্রি কমেছে বা বিক্রি নেই। সেখানে উৎপাদন করে কী করব আমরা?
সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক শংকর রায় বলেন, আবাসনের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি শিল্পের মতো সিমেন্টের চাহিদা কমেছে। আমাদের প্রতিটি কাঁচামাল আমদানি নির্ভর, এর ওপরে বিক্রি খরা। আমরা এ সংকটের সমাধান চাই। ব্যবসা বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হবে।
ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আবাসনের লিংকেজ ব্যবসায় জড়িত আমি। আমার ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ, প্রতিষ্ঠানের কর্মী ৩৫০ জন থেকে এখন ৭৫-এ নামাতে বাধ্য হয়েছি। আমার মতো অন্যদের অবস্থাও একই রকমের। আমরা সমাধানের পথ চাই, ড্যাপের সংশোধন চাই।
বাংলাদেশ এলিভেটর এসকেলেটরস অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি এমদাদ উর রহমান বলেন, আমাদের লিফটের ব্যবসা অর্ধেকে নেমেছে। অনেক ব্যবসায়ী লোকসান এড়াতে ব্যবসা ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ আবার কর্মী ছাঁটাই করছেন। লিংকেজ ব্যবসা অনেক বড়। প্রায় ৫০ লাখ নাগরিকের কর্মসংস্থান এবং দুই কোটি লোকের খাদ্যের সংস্থান হয়েছে এই গৃহায়ন শিল্পকে ঘিরে। আমরা ছাঁটাইয়ে বিশ্বাসী না, আমরা চাই আবাসনের সমস্যা দ্রুত সময়ে সমাধান করা হোক। আমরা ব্যবসা করতে চাই।
টিম্বার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ তানভির হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে আবাসন খাতে মন্থর অবস্থার কারণে আমাদের কাঠের ব্যবসায় ধস নেমেছে। সারা দেশে এই খাতের ১০ লাখ ব্যবসায়ী আছেন যাদের দেড় লাখের মতো থাকেন ঢাকা শহরে। যাদের প্রায় ৩০ হাজার ব্যবসায়ী এখন পথে বসেছেন।
রিহ্যাব সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মৌলিক চাহিদার অন্যতম গৃহায়ন সমস্যা সমাধানে সরকারের সঙ্গে বড় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে আবাসন শিল্পের সদস্যদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান রিহ্যাব। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করাই রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য। রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে সুন্দর সুন্দর নান্দনিক ভবন তৈরি হচ্ছে। আবাসন শিল্পের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে রড, সিমেন্ট, ইট, টাইলস, কেবল, রং, লিফট, থাই, স্যানিটারিসহ দুই শতাধিকের বেশি লিংকেজ শিল্প অর্থনীতির চাকা গতিশীল রেখেছে। প্রায় দুই কোটি লোকের খাদ্যের সংস্থান হয়েছে এই গৃহায়ন শিল্পকে ঘিরে। জিডিপিতে প্রায় ১৫ শতাংশ অবদান রয়েছে এই খাতের। এ খাতের সমাধান না করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি, বাড়বে বেকারত্ব।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, বৈষম্যমূলক ও ত্রুটিপূর্ণ ড্যাপ নিয়ে ভূমি মালিক, আবাসন ব্যবসায়ী এবং এই সংক্রান্ত লিংকেজ শিল্পগুলোর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ রয়েছে। জমির মালিকের পাশাপাশি ফ্ল্যাটক্রেতা সবার মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে অবশ্যই আবাসন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির স্থবিরতা থেকে অতিদ্রুত উত্তরণ ঘটাতে হবে। সরকারের এ ব্যাপারে একটা ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবেন।
লিংকেজ শিল্প উদ্যোক্তারা বলেন, আবাসন খাত ভালো থাকলে আমাদের সংশ্লিষ্ট লিংকেজ শিল্পগুলো স্বাভাবিকভাবেই ভালো থাকার কথা। কিন্তু তারাও ভালো নেই। কারণ লিংকেজ শিল্পগুলোর সবশেষ প্রোডাক্টের বেশিরভাগ ক্রেতাই ডেভেলপাররা। বৈষম্যমূলক ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে আবাসন শিল্প মারাত্মক সমস্যায় রয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে লিংকেজ শিল্পগুলোর ওপর। ড্যাপে ফার সমস্যাকে কেন্দ্র করে আমাদের ভবনের উচ্চতা এবং আয়তন একেবারে কমে গেছে। ফলে ২০২২ সালে ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর জমির মালিকরা ডেভেলপ করার জন্য আমাদের কোনো ভূমি দিচ্ছেন না। যার কারণে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো নতুন কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এতে লিংকেজ শিল্পগুলোর পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। তাদের মতে, সিমেন্ট, রড, ইটসহ অন্যান্য উপকরণের চাহিদা কমেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় কিছু কিছু পণ্যের দাম কমিয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে অনেকগুলো লিংকেজ শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তিন শিফটের উৎপাদন দুই শিফটে নামিয়ে দিয়েছে। আবার কেউ সেটা এক শিফটে নামিয়ে এনেছে। উৎপাদন কমানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই কর্মসংস্থান এখানে সংকুচিত হয়েছে। অনেক লোকবল ছাঁটাই হয়েছে এবং অনেকে সেই পথে হাঁটছেন। এক কথায় বলতে গেলে বৈষম্যমূলক ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ফার সংক্রান্ত সমস্যা এবং সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামোগত প্রকল্পের গতি কমে যাওয়াতে আবাসন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিতে মারাত্মক স্থবিরতা বিরাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পিভিসি পাইপ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্টেইনলেস স্টিল পাইপ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল ক্যাবলস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পাথর ব্যবসায়ী সমিতি, বাংলাদেশ মোজাইক মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এয়ারকন্ডিশনিং ইকুইপমেন্ট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অ্যালুমিনিয়াম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রেডিমিক্স কংক্রিট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ টিম্বার ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এলিভেটর এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ অটো ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।