Hot

ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ১৫ সদস্যের একটি দল গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় বঙ্গভবনে যায়। এর দেড় ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন তিন বাহিনীর প্রধানগণ। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দীর্ঘ বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে রাত সোয়া ১২টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষে সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন। রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের বাকি সদস্য কারা হবেন, সে বিষয়ে ১৫ জনের নামের একটি তালিকা তাঁরা দিয়েছেন। যেখানে নাগরিক সমাজসহ ছাত্র প্রতিনিধত্ব রয়েছে। খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই তালিকা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত হবে। তাঁরা আশা করছেন, ২৪ ঘণ্টা বা দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চূড়ান্ত হবে।

সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই সরকার গঠন করতে যাচ্ছি। এই সময়ে এটাকে বিভিন্নভাবে সাংবিধানিক বৈধতা দেওয়ার সুযোগ আছে। নিয়ম আছে সেটা অনুসরণ করা হবে। সরকারের মেয়াদ এখনো ঠিক করা হয়নি।’ বঙ্গভবনে বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকালই ভোরে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছিলেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

আজ বুধবার কিংবা কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস দায়িত্ব নিতে পারেন বলে সরকারি সূত্রগুলো বলছে। তবে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দুই দিন ধরে দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই। ফলে ঢাকাসহ সারা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে।

পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এবং বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন।

বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন দল ও জোট যারা গত সোমবার রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছে, তাদের ড. ইউনূসের ব্যাপারে সম্মতি আছে বলে দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্ররা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করায় বিষয়টা আলোচনায় আসে।

দায়িত্ব নেবেন ড. ইউনূস

ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে গতকাল গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেবেন। ড. ইউনূস বিবিসিকে বলেছেন, ‘যে শিক্ষার্থীরা এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁরা যখন এই কঠিন সময়ে আমাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন, তাহলে আমি কীভাবে তা প্রত্যাখ্যান করি?’

ড. ইউনূস বর্তমানে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আছেন। আজ কিংবা আগামীকাল তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। এরপর তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিতে পারেন। তবে সরকারের অন্য উপদেষ্টারাও একই সঙ্গে দায়িত্ব নেবেন, নাকি পরে দায়িত্ব নেবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যসংখ্যা কত হবে, কারা এতে জায়গা পাবেন—এ নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও দেশের মানুষের মধ্যে নানা জল্পনাকল্পনা আছে। বিভিন্ন তালিকাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন দলের নেতারা বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেহেতু সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন, ফলে সরকারে আর কারা থাকবেন, সে ব্যাপারে তাঁর মতামতও প্রয়োজন হবে।

এ ক্ষেত্রে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিশেষ ভূমিকা থাকবে বলেও আলোচনা আছে। গুরুত্ব পেতে পারে সেনাবাহিনীর মতামতও।

কারা আসতে পারেন সরকারে

বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে সোমবার দুই দফা বৈঠক করেন। দলগুলোর সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সামরিক-বেসামরিক সাবেক আমলা ও ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ থাকতে পারে।

এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেননি রাষ্ট্রপতি কিংবা সেনাবাহিনীর প্রধান।

২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়। এর আগে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যরা উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিতেন। এবারও সেই কাঠামো অনুসরণ করা হতে পারে। রাষ্ট্রপতি গতকাল সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। এখন দেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। ফলে নতুন যে সরকার গঠিত হবে, এর প্রধানসহ অন্যরা অনির্বাচিতই হবেন।

সোমবার দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এর মধ্য দিয়ে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। তিনি এখন ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d