Bangladesh

ড. ইউনূসের পক্ষে ন্যায়বিচার চেয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে লর্ড আদিবাওয়ালির পত্র

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁর প্রতি ন্যায়বিচারে ভূমিকা রাখতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে চিঠি দিয়েছেন বৃটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ- লর্ড সভার সদস্য এবং সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইউকে’র চেয় লর্ড ভিক্টর আদিবাওয়ালি সিবিই।

বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি তার চিঠিতে দেশটির প্রতিমন্ত্রী স্টুয়ার্ট এন্ড্রুর নামও সংযুক্ত করা হয়েছে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়-লন্ডনের ১০ ডাওনিং স্ট্রিট’র ঠিকানায় পাঠানো চিঠির শুরুতে ঋষি সুনাককে ‘ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার’ সম্বোধন করে লর্ড ভিক্টর আদিবাওয়ালি লেখেন, সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইউকে’র চেয়ার হিসেবে, আমি ইউকেতে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজগুলোর পক্ষে লিখছি। কমনওয়েলথ এর নাগরিক হিসেবে, আমি নোবেলজয়ী এবং বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে লিখছি।

বাংলাদেশের গ্রামীণ দরিদ্রদের (যাদের বেশিরভাগই নারী) জন্য ১৯৭৬ সালে প্রফেসর ইউনূস জামানতমুক্ত ঋণ ব্যবস্থার পথপ্রদর্শন করেন উল্লেখ করে চিঠিতে লেখা হয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণের নতুন মডেল তৈরির জন্য (যা বিশ্বজুড়ে গৃহিত) ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। নোবেল পুরষ্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়ার মেডেল অফ ফ্রিডম এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পুরষ্কার পাওয়া মাত্র কয়েকজন ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন। কিভাবে এন্টারপ্রাইজ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে পারে, কিভাবে ব্যবসা ভালোর জন্য কাজ করতে পারে এবং কিভাবে অর্থ সমাজকে সেবা দিতে পারে তা দেখিয়ে ইউনূসের কাজ লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। পরবর্তীকালে তিনি দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই, চাকরির সুযোগ তৈরি, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি সরবরাহ, কৃষি, শিক্ষা, জ্বালানি সহ নানাবিধ অগ্রগতির ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। সামাজিক ব্যবসার নতুন এই মডেলের মুনাফা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং এই গ্রহ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার জনক এবং সত্যিকারের ‹গ্লোবাল হিরো› আখ্যা দিয়ে লেখা হয়, এদেশের (বৃটেনের) সঙ্গেও প্রফেসর ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইউকে-এর সাথে কাজ করেছেন, আমাদের নেতৃত্বে সাথে প্ল্যাটফর্ম শেয়ার করেছেন, গ্লাসগোতে ইউনূস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন, আমাদের নিজেদের সামাজিক উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করেছেন ( যেমন: পূর্ব লন্ডনে ফেয়ার ফাইন্যান্স) এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেকার বন্ধনকে শক্তিশালী করেছেন। ইউনূসের নেতৃত্বে উৎসাহিত হয়ে যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ সামাজিক উদ্যোগে- প্রায়ইড একসঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছে, যার ফলে বিশ্বজুড়ে উভয় দেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

এরপরও এ বছরের আগস্টে, ১০০ জনেরও বেশি নোবেলজয়ী (বারাক ওবামা, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন রয়েছেন) সহ ১৮৮ জন বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ইউনূসকে ‘নিরবিচ্ছিন্ন বিচারিক হয়রানি’ এবং তার ওপর নিপীড়নের অবসান ঘটানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এক জরুরি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

চিঠিতে শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করতে বলা হয়েছে।
ওদিকে, বোংলাদেশে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস সহ মানবাধিকারকর্মী ও অন্যান্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ক্রমাগত ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন’ জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার। জাতিসংঘ বলেছে, তারা ‘উদ্বিগ্ন যে তার বিরুদ্ধে মানহানিকর প্রচারণা অনেক সময়ই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আসছে। এতে তার আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ক্ষুন্ন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন এবং ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরীক্ষা করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের বাংলাদেশে স্বাগত জানাবেন। আমি বিশ্বাস করি, এই ক্ষেত্রেই আপনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন- নিরপেক্ষ স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সমর্থন করার জন্য এবং পরিস্থিতির ন্যায্য সমাধান নিশ্চিত করার জন্য সমন্বয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষ জ্ঞান প্রদানের প্রস্তাব দিয়ে। ন্যায়বিচারকে সাহায্য করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে আমরা আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button