ড. ইউনূসের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দুদক!
যে কোনো দিন চার্জশিট মোটেও বিচলিত নন তিনি -ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন
অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় নোবেল বিজয়ী অর্থর্নীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে আদালতের কাছ থেকে প্রয়োজনে অনুমোদন নেবে সংস্থাটি। তবে মামলার তদন্ত পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার পথও খোলা রয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষেত্রে কোনটা করা হবে-এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে কমিশন। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের দায়িত্বশীল ২ জন কর্মকর্তা জানান, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচার মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে দ্রুতই প্রতিবেদন দাখিল করতে চাইছে দুদকের তদন্ত টিম। এই লক্ষ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া গুছিয়ে আনা হয়েছে। তদন্তের শেষ পর্যায়ে গত ৫ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। অন্যদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আগেই। এখন চলছে প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজ। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে যেকোনো দাখিল হতে পারে চার্জশিট।
এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা ভাবছে কমিশন। তিনি যে কোনো সময় দেশত্যাগ করতে পারেন-এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট আদালতে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের অনুমোদন চাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন কমিশনের কেউ কেউ। তবে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার আইনি বিধানের কথাও বলছেন তারা। যদিও এর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব জানিয়েছিলেন, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রতীয়মান হয় যে, আসামিরা মামলার তদন্তকে বিঘিœত কিংবা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন কিংবা দেশ ত্যাগ করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তিনি কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে আসামিকে গ্রেফতার এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন। তবে এ বিষয়ে দুদকের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দেশত্যাগে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মোটেও বিচলিত নন ড. মুহাম্মদ ইউনূসু। এ বিষয়ে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন গতকাল শনিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, দুদক করলে অনেক কিছুই করতে পারে। তাতে ড. ইউনূস মোটেও বিচলিত নন। কারণ তিনিতো দেশের বাইরেই ছিলেন। দুদকের নোটিশ পেয়ে প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করে দেশে এসেছেন। সারাবছরই তার বিভিন্ন দেশে আমন্ত্রণ থাকে। দুদকের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি যদি এসব দাওয়াতে যোগদান করতে না পারেন তাহলে কার ক্ষতি? আন্তর্জাতিক মহলের কাছে কি বার্তা যাবে? যা হওয়ার হবে। তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় সব মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকম থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থার উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং-এর অভিযোগ এনে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।
এজাহারে দ-বিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) (৩) ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে।
এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভিন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান।
দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। পরিচালক মোহাম্মদ বেনীর আমদের নেতৃত্বে একটি টিম মামলাটি তদন্ত করছে।