Bangladesh

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রস্তুত হচ্ছে দুদকের মামলাও, প্রতিবেদন দাখিল ৩ মার্চ

নোবেল বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘বিচার’ করার লক্ষ্যে প্রস্তুত হচ্ছে আরেক মামলা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়েরকৃত এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে আগামি ৩ মার্চ।

গতকাল বুবধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক আছাদুজ্জামান এ তারিখ পুন:ধার্য করেন। গতকালই প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ছিলো। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সময় প্রার্থনা করে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ তারিখ পুন:ধার্য করেন।
গতমাসের ৩০ মে দুদক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এজাহারে অভিযোগ বলা হয়,ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য আসামীরা পরষ্পর যোগসাজশে গ্রামীণ টেলিকম’র শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ এবং পাচার করেছেন। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো: শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো: ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো: কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো: মাইনুল ইসলাম।

এজাহারে আরো বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সাথে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল। গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও হিসাব খোলা হয় একদিন পূর্বে ৮ মে। সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এ রকম ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়ার ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ২০২২ সালের ১০ মে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

পরবর্তীতে ২২ জুন অনুষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়। অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের অ্যাকাউন্ট থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের পূর্বেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই অসৎ উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো: কামরুজ্জামানের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে মোট ৩ কোটি টাকা, সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি ও সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। অনুরূপ গ্রামীণ টেলিকম’র অ্যাডভোকেট মো: ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি টাকা ও দি সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ৫ কোটি টাকা এবং অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ ও অ্যাডভোকেট মো: ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ৬ কোটি স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্যতা ছিল না।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অসৎ উদ্দেশে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত লঙ্ঘন করে জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। যা দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ প্রেক্ষাপট দেখিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত: গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ঢাকার ৩ নং শ্রম আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং আরো ৩ জনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়। এই রায়কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে দুদক দায়েরকৃত ‘অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার’ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বিচারার্থে প্রস্তুত হচ্ছে।

Show More

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button